বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালী তখন মুক্তির চেতনায় উজ্জীবিত। নির্বাচনে জয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবির সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিকরাও তখন কণ্ঠ মেলাতে শুরু করেছেন।
প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য খাদ্য বোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচি পাঠানোয় উৎকণ্ঠা ও নিন্দা জানান।
রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায়, ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।
জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন পাকিস্তান সরকারের দেওয়া খেতাব বর্জন করেন। পূর্ব বাংলার চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে অনির্দিষ্টকাল প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তারা আওয়ামী লীগের সাহায্য তহবিলে ১৩ হাজার ২৫০ টাকা অনুদান দেন।
বগুড়া জেলখানা ভেঙে এদিন ২৭ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। কারারক্ষীদের গুলিতে ১ কয়েদি নিহত ও ১৫ জন আহত হন। অব্যাহত আন্দোলনে সরকারি-আধাসরকারি অফিসের কর্মচারীরা কর্মস্থল বর্জন করেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা, সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসগৃহ ও যানবাহনে কালো পতাকা উড়তে থাকে।
দৈনিক পাকিস্তান এদিন এক খবরে জানায়, বাঙালি সিএসপি কর্মকর্তারা চলমান আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করেছেন। আওয়ামী লীগের তহবিলে একদিনের বেতন অনুদান দিয়েছেন তারা।
ময়মনসিংহে এক জনসভায় আবদুল হামিদ খান ভাসানী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “আমি জানি শেখ মুজিবুর রহমান কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন না। আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন।”
এদিন লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে গণঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান বলেন, পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণ সমান অধিকার নিয়ে থাকতে চায়, পশ্চিমাঞ্চলের দাস হিসেবে নয়। পাকিস্তানকে রক্ষা করার একটিমাত্র পথ খোলা। আর তা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর।
তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশমাস’