ক্যাটাগরি

রোজার আগে চড়ছে ভোগ্যপণ্যের বাজার

একের পর এক ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতার মধ্যে রোজাকে কেন্দ্র করে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন ভোক্তারা।

শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর বড়বাগ ও কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেশি মুড়িকাটা ও হালি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়, যেগুলোর দাম দুই সপ্তাহ আগেও ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা ছিল।

একইভাবে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৩০ টাকায়।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এমন দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে তার জন্য ব্যবসায়ীদের লোভ ও সরকারের নজরদারির অভাবকে দায়ী করেন কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে আসা মোহাম্মদ সেলিম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এবার রোজার আগেভাগেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলো রোজার দাম বাড়াতে শুরু করেছে। এখনই সরকার নজর না দিলে রোজায় নতুন নতুন সিন্ডিকেট যুক্ত হতে পারে।”

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হলেও তার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের কথায় সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে কেউ কেউ বলছেন,  মুড়িকাটা দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ প্রায় শেষের পথে থাকায় বাজারে তার প্রভাব পড়েছে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হালি পেঁয়াজগুলো উঠতে শুরু করেছে। রোজা আসতে আসতে দাম আবার কমে যাবে।

এই বাজারে প্রতি কেজি দেশি হালি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকায়, আর ভারতীয় ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকায়। তবে মিরপুর বড়বাগ কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়।

ফার্মের ডিমের দাম হালিতে ১০ টাকা করে কমে ৯০ টাকায় নামলেও গত এক সপ্তাহে বেড়েছে সব ধরনের মুরগির দাম। মিরপুরে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকা হয়েছে। লেয়ার মোরগের দাম উঠেছে ২২০ টাকায়; কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা, পাকিস্তানি বা সোনালী মুরগীর দাম উঠেছে ৩৬০ টাকায় যা সাধারণ ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।

বড়বাগের একজন বিক্রেতা বলেন, মুরগীর সরবরাহ কিছুটা কমে গেছে, পাশাপাশি খামার মালিকরা দামও কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন।

সয়াবিন তেলের কেজি ১৩০ টাকা

গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে সরকার সব স্তরে তেলেও দাম নির্ধারণ করে দিলেও খুচরায় সর্বত্র সেই সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছে না।

পীরেরবাগ, বগবাগ এলাকার মুদি দোকানগুলোতে দেখা যায়, প্রতিকেজি সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে ১৩০ টাকায়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল সর্বোচ্চ ১১৫ টাকায় বিক্রি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

প্রতি লিটার সয়াবিন (খোলা) মিল গেইটে ১০৭ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন মিলগেট মূল্য ১২৩ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২৭ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কারওয়ান বাজারে তেলের পাইকারি দোকানিদের কেউ কেউ মিল গেইটে বাড়তি দাম নেওয়ার অভিযোগ করলেও তা উড়িয়ে দিয়েছেন তেল পরিশোধকরা।

পাইকারি দোকানে প্রতিলিটার ১১০ টাকায় বিক্রি করার কথা থাকলেও গত সপ্তাহে কারওয়ান বাজারে তা বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকায়। তবে এই সপ্তাহে লিটারে দুই টাকা করে কমে ১১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তেলের অন্যতম যোগানদাতা সিটি গ্রুপের মহা ব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর স্বাভাবিক গতিতেই তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। যারা বিভিন্ন অভিযোগ তুলছে তাদেরকে ‘মনিটরিংয়ের’ আওতায় নিয়ে এলেই অনিয়ম ধরা পড়ে যাবে।

আরেক তেল পরিশোধনকারী টিকে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অনেকে তেলের অর্ডার করার পর সময় মতো তা গ্রহণ না করে অপেক্ষায় রাখেন। আবার অনেক সময় একসঙ্গে অনেকেই পুরোনো অর্ডারের তেল চেয়ে বসেন। এসব কারণে কখনও কখনও সরবরাহে কিছুটা বিলম্ব হয়।

আগামী সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে তেলের বাজার মূল্য আবারও পর্যালোচনা করা হবে বলে খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এদিকে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চাল আমদানির চেষ্টা করা হলেও এতে চালের দাম কমানো যায়নি।  খুচরা বাজারে এখনও সরু চাল ৬০ টাকা থেকে ৬৬ টাকা, মাঝারি চাল ৫২ টাকা থেকে ৫৮ টাকায় এবং মোটা চাল ৪৬ টাকা থেকে ৫০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে সরু চালে ৫ শতাংশ, মাঝারি চালে ২ শতাংশ এবং মোটা চালে ৪ শতাংশ হারে দরবৃদ্ধি ঘটেছে।

মিরপুর শাহ আলী মার্কেটের পাইকারি বিক্রেতা মহিউদ্দিন হারুন বলেন, ভারতীয় চাল আসার পরেও দেশে চালের দাম কমেনি।