ক্যাটাগরি

এনএফটি কী? কেন-ই বা এর এতো দাম?

মুদ্রার ডিজিটাল মাধ্যম হিসেবে বিটকয়েন জায়গা করে নিয়েছে এর মধ্যেই। আর এখন এসে সংগ্রহের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যম হিসেবে ধরা হচ্ছে এনএফটি’কে। অনেকেই অবশ্য এখনও সমালোচনার বেলায় কোনো ছাড় দেননি। তাদের মতে, এটি সাময়িক মাত্র, সামনে মুখ থুবড়ে পড়বে।

আসলেও এটি মুখ থুবড়ে পড়বে কি না তা জানতে হলে আগে বুঝতে হবে এনএফটি কী, কীভাবে কাজ করে এটি, চুরি হওয়ার আশঙ্কা কতটুকু, এনএফটি’র মূল্য কত – এমন সব প্রশ্নের উত্তর। চলুন বিবিসি’র প্রতিবেদন থেকে জেনে নেওয়া যাক এ প্রসঙ্গে –

এনএফটি কী?

এনএফটি পূর্ণরূপ ‘নন-ফাঞ্জেবল টোকন’, এর আক্ষরিক বাংলা করলে দাঁড়ায় – ‘যে টোকেনে ছত্রাক পড়বে না’। অর্থনীতির ভাষায় ‘ফাঞ্জেবল অ্যাসেট’ বলতে এমন কিছু ইউনিটকে বুঝায় যা খুব দ্রুত পরিবর্তন করে নেওয়া সম্ভব – যেমন, টাকা বা অর্থ।

উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ধরুন, আপনার হাতে ১০ টাকার একটি নোট রয়েছে। আপনি চাইলেই সেটিকে পাঁচ টাকার দুটি নোটে রূপান্তর করতে পারবেন, এবং এতে করে মূল্যমান কমবে না।

কিন্তু ‘নন-ফাঞ্জেবল’ কোনো কিছুর মাধ্যমে এটি করা অসম্ভব। এর অর্থই হল –  এটি এমন অভিনব সম্পদ যা দ্রুত পরিবর্তন করে নেওয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের সম্পদ হতে পারে অভিনব কোনো বাড়ি বা মোনালিসা চিত্রকর্মটি। আপনি চাইলে অনুকরণ করে একই রকম আরেকটি তৈরি করে নিতে পারেন, বা চাইলে চিত্রকর্মের ছবি তুলে নিতে পারেন। কিন্তু আসলটির মালিক শুধু একজন-ই হতে পারবেন।

এনএফটি হল ডিজিটাল বিশ্বে “এরকম একটিই আছে” ধরনের সম্পদ যা অন্য যে কোনো সম্পদের মতো কেনা যায় বা বিক্রি করা যায়। কিন্তু এর কোনো নিজস্ব বাহ্যিক আকার নেই যেটি ধরা বা ছোঁয়া সম্ভব। এই ডিজিটাল টোকেনকে তুলনা করা যায় অনেকটা ভার্চুয়াল বা বাস্তব বিশ্বের কোনো সম্পদের মালিকানার সনদ হিসেবে।

এনএফটি কীভাবে কাজ করে?

শিল্পকর্মের মতো গতানুগতিক ধারার কাজের মূল্য বেশি, কারণ এরকম একটিই আছে। কিন্তু চাইলেই সেগুলোর ডিজিটাল ফাইল তৈরি করা যায় এবং সেটির যত খুশি তত নকল তৈরি করা যায়।

কিন্তু এনএফটি’র সাহায্যে কোনো শিল্পকর্মকে ‘টোকেনাইজড’ করে মালিকানার ডিজিটাল সনদ তৈরি করা যায় যা কেনা যাবে এবং বিক্রি করা যাবে। অন্যদিকে, ক্রিপ্টো-কারেন্সির সাহায্যে কে কোনটা কিনছে তার একটি রেকর্ড থেকে যাচ্ছে ‘ব্লকচেইন’ নামের শেয়ারড একটি খতিয়ানে।

চাইলেও রেকর্ড পাল্টে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ ‘ব্লকচেইন’ খতিয়ানটি পরিচালিত হয় বিশ্বের হাজারো কম্পিউটারের মাধ্যমে। এ ছাড়াও এনএফটি’তে ‘স্মার্ট কনট্র্যাক্ট’ বলে একটি বিষয় রয়েছে। এতে করে শিল্পকর্মটির শিল্পী ভবিষ্যতেও তার শিল্পকর্মের বিক্রি থেকে লাভবান হতে পারবেন, যতবার টোকেন বিক্রি হবে ততবার মোট বিক্রয় মূল্যের একটি অংশ পাবেন তিনি।

মানুষ কেন ডিজিটাল শিল্পকর্মটি নকল করছেন না?

মানুষ নকল করছে। সম্প্রতি ছয় কোটি ৯০ লাখ ডলারে বিক্রি হওয়া ‘বিপল’স আর্ট’ এর নকল তৈরি হয়েছে কোটি কোটি বার, শেয়ারও হয়েছে অসংখ্যবার। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিল্পী নিজেই কপিরাইট স্বত্ত্ব সরিয়ে নিচ্ছেন, যাতে করে নকল তৈরি ও বিক্রির কাজ চালিয়ে যেতে পারেন তারা।

এতে এনএফটি মালিকের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। এনএফটি টোকেনটি নিশ্চয়তা দিচ্ছে ‘আসল’ কাজটির মালিক শুধু তিনিই, অন্য কেউ নন। গোটা বিষয়টিতে অনেকে ‘স্বাক্ষর করা প্রিন্ট’ বিক্রির সঙ্গে তুলনা করছেন।

মানুষ কোটি ডলার খরচ করে টোকেন কিনছেন?

যতোই অবাস্তব এবং পাগলাটে শোনাক না কেন, মানুষ আসলেও এর পেছনে কোটি ডলার খরচ করছেন।

এনএফটির দাম কতো?           

তাত্ত্বিক দিক থেকে হিসেব করলে, যে কেউ নিজ কাজকে এনএফটি হিসেবে বিক্রি করার জন্য ‘টোকেনাইজ’ করতে পারে। সম্প্রতি কয়েক কোটি ডলারে এনএফটি বিক্রি হওয়ার খবরে প্রায় সবারই চোখ কপালে উঠেছে।

ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখে অ্যানিমেটেড জিফ ‘নিয়ান ক্যাট’ বিক্রি হয়েছে পাঁচ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যে। এর বিশেষত্ব হল, ২০১১ সালে এক মিমে ‘উড়ুক্কু পপ-টার্ট বিড়াল’ হিসেবে ওই অ্যানিমেটেড জিফ ব্যবহার হয়েছিল।

এর কয়েক সপ্তাহ পরে সঙ্গীতশিল্পী গ্রাইমস নিজের কিছু ডিজিটাল শিল্প বিক্রি করেন ৬০ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যে।

শুধু যে শিল্পকর্ম-ই বিক্রি হয়েছে, তা নয়। টুইটার সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি টুইটারের প্রথম টুইটটি এনফটি হিসেবে নিলামে তোলেন। নিলামে দর গিয়ে ঠেকেছিল দুই কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঘরে।

ক্রিস্টির এনএফটি বিক্রির ব্যাপারটি নতুন রেকর্ড-ই গড়ে দিয়েছে। তবে, ক্রিপ্টো-কারেন্সির মতো এটির ব্লকচেইন পরিচালনার পরিবেশগত প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।

শুভঙ্করের ফাঁকি নয়তো? 

অনেকেরই মনে সন্দেহ যে গোটা বিষয়টিই আদতে শুভঙ্করের ফাঁকি। এমনকি রেকর্ড গড়া দামে ডিজিটার শিল্পী বিপল’স-এর (আসল নাম মাইক উইঙ্কেলম্যান) শিল্পকর্ম বিক্রি হওয়ার আগের দিনও তিনি বলেছেন, “সত্যি বলতে আমার মনে হয় গোটা বিষয়টিই হয়তো শুভঙ্করের ফাঁকি হবে এবং আমরা এখন ওই শুভঙ্করের ফাঁকিতে রয়েছি।”

অনেকে আবার এ ব্যাপারে আরও এক কাঠি সরেস। এরকমই একজন হলেন ‘অ্যাটাক অফ দ্য ৫০-ফুট ব্লকচেইনের’ গ্রন্থকার ডেবিড জেরার্ড। তিনি এনএফটি’র “অফিশিয়াল সংগ্রহ”কে ট্রেডিং কার্ডের মতো দেখছেন।

জেরার্ড বলেছেন, “অনেক শিল্পীই আছেন যারা এ থেকে প্রচুর অর্থ আয় করবেন.. শুধু আপনি হয়তো করবেন না।” তার মতে, যারা এনএফটি বিক্রি করছে তারা আদতে “ক্রিপ্টো-গ্রিফ্টার”।

ক্রিস্টির সাবেক নিলাম পরিচালক চার্লস অ্যালসপ বলছেন, এনএফটি কেনার ধারণাটি “কোনো অর্থ বহন” করে না।

অ্যালসপ বলছেন, “এমন কিছু কেনার ধারণাটিই খুব অদ্ভুত যা আদতে সেখানে নেই। আমার ধারণা যারা এতে বিনিয়োগ করে তারা কিছুটা বোকা ধরনের, তারা যাতে তাদের অর্থ না হারান, সে কামনা করি।”