শনিবার
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “তিস্তাতো অলরেডি ১০
বছর আগে চুক্তি হয়ে গেছে। বাস্তবায়ন হয় নাই।”
২০১১
সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে দুই
দেশের পানি সম্পদ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানিবন্টন চুক্তির বিষয়ে দুইপক্ষ
একমত হয়েছিল।
মনমোহন
সিংয়ের সফরেই বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়।
নরেন্দ্র
মোদীর বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশার কথা শোনা গেলেও
মমতার মত বদলায়নি।
তবে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখন বলছেন, “তিস্তা চুক্তি ১০ বছর আগে পাতায় পাতায় সই হয়েছে। ডকুমেন্টও
উভয়পক্ষ…
”ভারত
সরকার আমাদের বলেছে, আগে যে চুক্তি হয়েছে সেটা স্ট্যান্ডবাই। তারা এটা গ্রহণ করে এবং
তার থেকে কোনো ব্যত্যয় হয় নাই। কি কারণে যে বাস্তবায়ন হয় নাই, আমরাতো সেটা জানি।”
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ
দশ দিন জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তাতে যোগ দিতে ২৬ মার্চ ঢাকা আসার
কথা রয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।
তার
এই সফরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হতে
পারে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “পানি, বাণিজ্য ও সীমান্ত হত্যা নিয়ে ভারতের সঙ্গে
গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ইতোমধ্যে সচিব পর্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
”প্রধানমন্ত্রী
যখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করবেন, যেগুলো আলোচনা হয়েছে এবং মোটামুটি একটা
ঠিক হয়েছে, ওইগুলো যাতে বলবৎ থাকে, বাস্তবায়নে অসুবিধা না হয়, সেজন্য হয়ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
তুলে ধরতে পারেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অভিযোগ করেন, শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নরেন্দ্র মোদীর সফর নিয়ে তিনি যা
বলেছিলেন, সেটা ‘ঠিকভাবে গণমাধ্যমে আসেনি’।
“এবার
উনার আমন্ত্রণের মূল বিষয় হল বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন এবং আমাদের স্বাধীনতার
সুবর্ণজয়ন্তী। দিস ইজ দ্য থ্রাস্ট অব দি হোল ভিজিট।
মোদীর এবারের সফর শুধুই উদযাপনের: মোমেন
“আমি
এই জিনিসটাই বলেছি। কিন্তু এটার হেডলাইন করেছে মোদীর সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না। আবার
টিভিতে দেখলাম, বাকি অংশ দিয়েছে।“
ভারতসহ
যেসব দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান আসছেন, সব দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক কিংবা চুক্তি
সই এই সময়ে হবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি
বলেন, “অনেকগুলো চুক্তি হবে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হবে, চুক্তি হবে,
সব দেশের সাথে হবে, ভারতের সাথেও হবে। সব দেশের সাথেই মোটামুটি আছে।”
ভাসমান রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ
আন্দামানে
সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে না ফেরানোর বিষয়ে অনড় অবস্থানের কথা শনিবারও তুলে
ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
তিনি
বলেন, “তারা স্বেচ্ছায় এসেছে, স্বেচ্ছায় গেছে। আর তারা আমাদের থেকে ১৭শ কিলোমিটার দূরে।
আমি ওদেরকে সেখান থেকে নিয়ে আসব? কোনোভাবেই না। দুনিয়ার সব রোহিঙ্গাকে এনে আশ্রয় দেওয়ার
ঠিকাদারি আমি পাইনি। কেউ আমাকে এক ঠিকাদারি দেয়নি।“
মোমেন
বলেন, “ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন এসেছেন, উনিও বিষয়টি রেইজ করেছেন। কিন্তু উনি আসার
আগে থেকে আমি বলাবলি করছি যে, এটা আমরা গ্রহণ করার যুক্তিযুক্ত কোনো কারণ নাই।
”কারণ
এগুলো ১৭শ কিলোমিটার দূরে আমাদের থেকে পাওয়া গেছে। এরা যে জাহাজে ছিল তা আমাদের দেশের
না, থাইল্যান্ডের। ভারতের ১৪৭ কিলোমিটারের মধ্যে। “
তিনি
বলেন, “জাতিসংঘের আইন হচ্ছে দুর্যোগ থেকে রক্ষা করা, নিকটবর্তী দেশ সেটা করবে। কিন্তু
এরাতো মিয়ানমারের নাগরিক। তারা মিয়ানমার থেকে ৩২৪ কিলোমিটার দূরে। মিয়ানমারের এক নম্বর
দায়িত্ব, যেহেতু তার নাগরিক।”
আন্তর্জাতিক
সম্প্রদায়ের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তাদের প্রথম দায়দায়িত্ব ছিল মিয়ানমারকে
বলবে, তোমরা নিয়ে যাও তোমাদের লোকগুলোকে। মিয়ানমার যে নিচ্ছে না, তাও না। এর আগে থাইল্যান্ড
থেকে ৩২০ জন নিয়ে গেছে। তার আগেও হাজারখানেক রোহিঙ্গা তারা নিয়েছে সাগর থেকে, যাদেরকে
ঢুকতে দেয় নাই থাইল্যান্ডে।
”আমাদের
কাছে আসার তো কোনো কারণ নাই। এর রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে এসেছে স্বেচ্ছায়, এখান থেকে
গেছে স্বেচ্ছায়, আমরা কিন্তু কাউকে জোর করে পাঠাই নাই। তারা সাগরে গেছে আমরা জানিও
না।”
ওই
রোহিঙ্গাদের কাছে ইউএনএইচসিআরের পরিচয়পত্র পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যেহেতু
ইউএন ইস্যু করেছে আইডি কার্ড, তাদের দায়িত্ব এদের দেখভাল করা। এদেরকে সাগরে যাওয়া থেকে
বন্ধ করা।
”তাদের
উচিত এদের উপর নজর রাখা। কারণ তারা এদেরকে খাবার দেয়, রেশন দেয়, প্রত্যেক সময় তাদের
যোগাযোগ থাকে, এর বাইরে কীভাবে যায়?”