তিনি বলেছেন, “সাম্প্রতিক বাংলাদেশ একটি আলোআঁধারি মঞ্চ। আলো আছে, তবে অন্ধকার সেটা ম্লান করছে। শুরুর বাংলাদেশ ছিল আলোর দিশারী।”
মুজিববর্ষ উপলক্ষে ওয়ার্কার্স পার্টির এক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা আলোচনা সভায় বক্তব্যে সংসদে মুজিববর্ষের বিশেষ অধিবেশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ ‘সম্পাদনা’ এবং বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি থেকে ‘সরে আসার’ সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, “সংসদে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র কর্তন করল। এটা বিকৃতি। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে কাটছাঁট করার অধিকার কারও নেই। আমরা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ থেকে সরে আসছি কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে।
“বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কর্তনের দায় কার? আমি সংসদে প্রশ্ন করেছিলাম। স্পিকারকে এর জবাব দিতে হবে। সংসদের কাছে বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা কতটা নেমে গেছে যে তারা জবাব দিল না।”
‘বঙ্গবন্ধু ও চার মূলনীতি’ শিরোনামে ওই আলোচনায় মূল বক্তব্যে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার বলেন, “এখানে যখন চার মূলনীতি নিয়ে আলোচনা চলছে সেখানে আওয়ামী লীগের কেউ নেই। থাকার দরকার ছিল। এটা তাদের সম্পত্তি। তারা ভোগ করছেন। কিন্তু স্মরণ করছেন না। বাণিজ্য করছেন।”
সংসদে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কাটছাঁট নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্পাদনার বা মুছে ফেলার অধিকার কারও নেই। সরকার সেটি করেছে। বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম আছে। এটা নিয়ে তারা কথা বলেন না। এতে তাদের অসুবিধা হয়।
“সংসদে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ক’দিন লাগাতার আলোচনা হল। যদিও তা বায়বীয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের টেপ চালানো হল। সেখানে সমাজতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতা নেই। এক ফজলে হোসেন বাদশা ছাড়া কেউ প্রতিবাদ করেনি। স্পিকার এটির দায় এড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন বেতার থেকে যা পাওয়া গেছে তাই শোনানো হয়েছে।”
“এ ঘটনায় সরকারের যে প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা তা দেখায়নি। সরকারের কাছে বঙ্গবন্ধুর প্রয়োজনীয়তা নেই,” বলেন তিনি।
অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, “বর্তমানে ধর্মনিরপেক্ষতা দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম একসাথে রেখে জগাখিচুড়ি সংবিধান করা হয়েছে। তেলে-জলে মেশানোর ব্যর্থ প্রয়াস। সংবিধানের মূল চারনীতি এখন হারানো দিনের হারানো সুর।”
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশনে ওই আলোচনায় ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেন, “সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম রেখে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। একটা আলো-আঁধারির মধ্যে রয়েছি আমরা। উন্নয়নের পথে আমরা এগিয়েছি, কিন্তু সেই উন্নয়ন সংবিধানের চার মূলনীতির কতটুকু ধারণ করে সেটা বোঝা দরকার।”
“সংসদে প্রচার করা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে প্রচার করা হল। আমরা প্রশ্ন তুলেছিলাম। উত্তর পেলাম না।”