শনিবার বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গন, দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়, মধ্যাঞ্চলীয় শহর পিয়ে, মধ্যাঞ্চলের আরেক শহর চাউকে এসব লোক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মান্দালয়ে জান্তাবিরোধী প্রতিবাদকারীদের অবস্থান ধর্মঘটে সরাসরি গুলি করেছে পুলিশ, এতে পাঁচ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গনে পুলিশের গুলিতে আরও দুই জন এবং মধ্যাঞ্চলীয় শহর পিয়েতে আরও একজন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। ইয়াঙ্গনের শুক্রবার দিবগাত রাতে পুলিশের গুলিতে আরও তিন জন নিহত হন।
“নিরস্ত্র লোকজনের সঙ্গে তারা এমন আচরণ করছে যেন তারা যুদ্ধক্ষেত্রে আছে,” বলেন মান্দালয়ের আন্দোলনকারী মায়াত থু। নিহতদের মধ্যে ১৩ বছর বয়সী একজন কিশোরও আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরেক আন্দোলনকারী সি থু তুন জানান, তিনি দুই জনকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যেতে দেখেছেন, তাদের মধ্যে একজন বৌদ্ধভিক্ষু।
“তাদের মধ্যে একজনের জঙ্ঘাস্থিতে গুলি লাগে, অপরজনকে গুলি করে ভয়াবহভাবে হত্যা করা হয়,” বলেন তিনি।
পিয়েতে নিরাপত্তা বাহিনী আহতদের দিকে এগোতে থাকা অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার পর গুলিবিদ্ধ হয়ে সঙ্কটজনক অবস্থায় থাকা এক প্রতিবাদকারীর মৃত্যু হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী একজন আন্দোলনকারী জানিয়েছেন।
মধ্যাঞ্চলীয় মাগউই অঞ্চলের চাউক শহরে পুলিশের ছোড়া গুলি বুকে বিদ্ধ হয়ে একজন ট্রাক চালক নিহত হয়েছেন বলে নিহতের এক পারিবারিক বন্ধু রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
এসব ঘটনার বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও সামরিক জান্তার একজন মুখপাত্র তাদের ফোন কলের কোনো উত্তর দেননি বলে রয়টার্স জানিয়েছে। জান্তা পরিচালিত গণমাধ্যম এমআরটিভির সন্ধ্যাকালীন সংবাদে প্রতিবাদকারীদের ‘অপরাধী’ হিসেবে বর্ণনা করা হয় কিন্তু প্রতিবেদনে তাদের দাবির বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলা হয়নি।
১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে জান্তাবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। আন্দোলন দমন করতে কঠোর অবস্থান নেওয়া পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত ৭০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে দেশটির আইনজীবীদের একটি গোষ্ঠী জানিয়েছে।
মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসের অন্যতম শহীদ ফোন মাওয়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আন্দোলনকারীরা শনিবার বড় বিক্ষোভ আয়োজনের ডাক দিয়েছিলেন।
১৯৮৮ সালের এই দিনে (১৩ মার্চ) মিয়ানমারে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তৎকালীন রেঙ্গুন ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফোন মাও। পুলিশ ক্যাম্পাসের ভেতরই তাকে গুলি করে হত্যা করে।
মাও এবং কয়েক সপ্তাহ পর আরেক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর ওই সময় মিয়ানমার জুড়ে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। অগাস্টে প্রতিবাদ তুঙ্গে ওঠায় এটি ‘৮-৮-৮৮’ আন্দোলন নামে পরিচিতি পায়। ওই সময় প্রায় তিন হাজার বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে আন্দোলন দমন করেছিল সামরিক বাহিনী।
এই আন্দোলনের সময়ই মিয়ানমারের গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পান অং সান সু চি। তারপর থেকে প্রায় দুই দশক তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়।
সামরিক বাহিনী গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু করার পর ২০১০ সালে সু চি মুক্তি পান। এরপর ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয় পেয়ে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) সরকার গঠন করে। ২০২০ এর জাতীয় নির্বাচনে দলটি ব্যাপক জয় পায়।
কিন্তু সামরিক বাহিনী এ জয়ের স্বীকৃতি না দিয়ে নির্বাচনে বড় ধরনের কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে। এই অভিযোগকে সামনে রেখেই গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথ রুদ্ধ করে দিয়ে ফের মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে তারা। আবার গ্রেপ্তার ও বন্দি হন নেত্রী অং সান সু চি; তার সঙ্গে তার দলের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দকেও গ্রেপ্তার করে কারাবন্দি করে রেখেছে সামরিক জান্তা।