দুই প্রত্যক্ষদর্শী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, শনিবার মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী মানডালায় বিক্ষোভকারীরা অবস্থান ধর্মঘট শুরু করলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি ছোড়ে। এতে তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। মধ্যাঞ্চলের শহর পিআইতে একজন নিহত হয়েছেন।
পিআইতে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৩ বছরের এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘‘গুলির করার পর নিরাপত্তা বাহিনী শুরুতে ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স আসতে বাধা দেয়। পরে অবশ্য অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেওয়া হয়।
‘‘কিন্তু ততক্ষণে মারাত্মক আহত একজন মারা যান।”
এদিকে, আটক বিক্ষোভকারীদের মুক্তির দাবিতে একদল বিক্ষোভকারী শুক্রবার রাতে ইয়াংগনের থারকেতা জেলা পুলিশ স্টেশনের বাইরে জড় হলে পুলিশ তাদের দিকে সরাসরি গুলি চালায়। গুলিতে দুইজন প্রাণ হারান।
মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করা জান্তাবাহিনী একদিকে বিক্ষোভ দমাতে বলপ্রয়োগ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরাও যেন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার প্রতিজ্ঞা করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীরা শনিবার আরো বড় বিক্ষোভ আয়োজনের ডাক দেন। ১৯৮৮ সালের এই দিনে মিয়ানমারে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রেঙ্গুন ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফোন মাও। পুলিশ ক্যাম্পাসের ভেতরই তাকে গুলি করে হত্যা করে।
মাও এবং কয়েক সপ্তাহ পর নিহত হওয়া আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর মিয়ানমার জুড়ে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। যেটা ৮-৮-৮৮ বিক্ষোভ নামে পরিচিত। ওই বিক্ষোভে প্রায় তিন হাজার বিক্ষোভকারী নিহত হয়।
ওই বিক্ষোভের সময়ই গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পান অং সান সু চি। তারপর থেকে প্রায় দুই দশক তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ২০০৮ সালে তিনি গৃহবন্দি দশা থেকে মুক্তি পান।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সু চির দল মিয়ানমারের নির্বাচিত এনএলডি সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতার দখল নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। তারপর থেকে সেখানে সেনাঅভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান মিয়ানমারে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে এক জোট হয়ে কাজ করার প্রতিজ্ঞা করেছে। কিন্তু মিয়ানমারের বড় মিত্র চীন এখনো সেনাঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দেয়নি। বরং তারা শুধু দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার কথা বলছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে এবং চীন এ অভ্যুত্থানের বিষয়ে আগে থেকেই জানতো বলেও গুঞ্জন রয়েছে। যদিও চীন অভ্যুত্থানের বিষয়ে আগে থেকে জানার কথা অস্বীকার করেছে।