ক্যাটাগরি

কংগ্রেসের শুনানি নিয়ে গুগল-মাইক্রোসফটের ‘হাতাহাতি’

বিজ্ঞাপন ব্যবসায় গুগলের আধিপত্যকেই টার্গেট করেছে মাইক্রোসফট এবং এই ওয়েব জায়ান্টের আচরণ স্থানীয় পর্যায়ে সংবামাধ্যমকে মেরে ফেলতে যেভাবে ভূমিকা রেখেছে সেইটিই মাইক্রোসফট সবিস্তারে বর্ণনা করেছে বলে উঠে এসেছে সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে।

সংবাদপত্র শিল্পে বৈরি পরিস্থিতির কারণ হিসেবে মাইক্রোসফট গুগলকে “আংশিক দায়ী” বলে বর্ণনা করেছে। ব্যাখ্যা হিসেবে সফটওয়্যার জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথ মার্কিন হাউজ অ্যান্টিট্রাস্ট কমিটিকে তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, অনলাইন বিজ্ঞাপন বাণিজ্যে কার্যত গুগলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি একচেটিয়া প্রভাব উপভোগ করছে।

“গুগল বেআইনী আচরণ করছে কি না এ বক্তব্য সে সম্পর্কে নয়”, স্মিথ বলেন। “তবে আমরা যেমন দুই দশক আগে মাইক্রোসফটের নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকেই সরাসরি শিখলাম, যখন কোনও প্রতিষ্ঠানের সাফল্য এমন পর্যায়ে যায় যে তা বাজার এবং আমাদের সমাজকে প্রতিকূলভাবে প্রভাবিত করে, তখন সে পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। এবং এর জন্য সাধারণত সরকারী পদক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে।”

শুনানির আগে অবশ্য গুগলও মাইক্রোসফটের ওপর এক হাত নিয়েছে। এক ব্লগ পোস্টে গুগল দাবি করে, সফটওয়্যার জায়ান্ট প্রতি‍ষ্ঠানটি “নিজের স্বর্থে বক্তব্য” দিচ্ছে এবং গুগলের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক নীল নকশা হাতে এগুচ্ছে।

“সর্বশেষ এই আক্রমণের মাধ্যমে মাইক্রোসফট তার দীর্ঘকালীন অভ্যাসের পথেই ফিরে গেছে” বলে এক ব্লগ পোস্টে মন্তব্য করেছেন গুগলের বৈশ্বিক জনসংযোগ বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কেন্ট ওয়াকার। সেখানেও থামেনি তিনি। জনসংযোগের পাশাপাশি গুগলের এই প্রধান আইন কর্মকর্তা অনেকটা উকিলের ঢংয়েই আক্রমণ করে বসেছেন মাইক্রোসফটকে।

“মাইক্রেসফট যে এই সময়টাতেই গুগলকে আক্রমণ করে বসেছে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, বিশেষত যখন সোলারউইন্ডসের ঘটনাটি একেবারে জ্বলজ্বল করছে। প্রতিষ্ঠানটি আদতে তাদের লাখো গ্রাহককে তাদের নিজেদের নিরাপত্তা ত্রুটির মাধ্যমে সরাসরি হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে ফেলে আক্রমণের লক্ষ্য স্থির করেছে আমাদের ওপর। ওরা আসলে সহজ ভাষায় নিজেদের কাঁধ থেকে ময়লা ঝেড়ে ফেলতে চাইছে।”

কয়েক সপ্তাহ আগেই অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবিত এক আইন নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে ছিল গুগল এবং মাইক্রোসফট। ওই আইনে সংবাদ শেয়ারের জন্য পত্রিকার সঙ্গে প্রযুক্তি জায়ান্টদের আর্থিক আয় শেয়ার করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাইক্রোসফট আনন্দের সঙ্গেই ওই আইনে সমর্থন দিলেও গুগল এমন আইন করা হলে অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এর জবাবে আবার মাইক্রোসফট জানিয়ে রেখেছে, গুগল অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলে সেই কাজটি আনন্দের সঙ্গেই করবে মাইক্রেসফটের বিং।

যে উদ্বেগ থেকে অস্ট্রেলিয়া নতুন আইনটি করেছে সেই একই উদ্বেগ এখন প্রতিধ্বনি তুলছে গোটা বিশ্বে এবং মার্কিন কংগ্রেসের সভাকক্ষে – প্রতিবেদনে বলেছে সিএনএন।

প্রথাগতভাবে অ্যান্টিট্রাস্ট আইন একই ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জোটবদ্ধ হতে বাধা দেয় যাতে করে প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেট আকারে একচেটিয়া প্রভাব তৈরি করতে না পারে। তবে মার্কিন জনপ্রতিনিধি ডেভিড সিসিলাইন এই আইনের বিপরীত একটি বিল প্রস্তাব করেছেন কংগ্রেসে। ওই বিলে প্রযুক্তি জায়ান্টদের কাছ থেকে এক জোট হয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে পত্রিকাগুলোকে দলবদ্ধ হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত ওই বিলে সমর্থন জানিয়েছে মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথ বলেন, “মাইক্রোসফট নিজেও হয়তো এই আইনের আওতায় পড়বে। তবে, মানসম্মত সাংবাদিকতার সমর্থনে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও কাজ করার বাধ্যবাধকতা আছে।”