কিশোরের
মামলার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার ঢাকার
মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েশ পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়ে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন
জমা দিতে নির্দেশ দেন।
বিচারক
একইসঙ্গে আরেক আদেশে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা, মেডিসিন এবং অর্থোপেডিকস
বিভাগের প্রধানদের সমন্বয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে কমিটিকে ২৪ কর্মঘণ্টার মধ্যে
কিশোরের নির্যাতনের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতে
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাপস পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত বছরের ২ মে
থেকে ৫ মে তারিখের মধ্যবর্তী সময়ে কিশোরের উপর নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে কি না,
তা জানাতে হবে ওই মেডিকেল টিমকে।
“এই
মেডিকেল প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার
পদমর্যাদার একজন এ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেবেন।”
কিশোর
অভিযোগ করেছেন, গত বছরের ২ মে তাকে ধরে নেওয়ার পর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালানো
হয়েছিল। তিন দিন পর তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে থানায় নেওয়া
হয়।
ডিজিটাল
নিরাপত্তা আইনে বন্দি কিশোর জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর গত রোববার হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ
আইনে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলার আবেদন করেন আদালতে।
সেদিন
বিচারক ইমরুল কায়েশ তা শুনে রোববার আদেশ দেওয়ার জন্য দিন রেখেছিলেন।
নির্যাতনের অভিযোগে মামলার আবেদন কার্টুনিস্ট কিশোরের
কার্টুনিস্ট কিশোরের ডান কানে অস্ত্রোপচার
এরপর
শনিবার কিশোরের ডান কানের ক্ষত সারাতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে জানান তার বড় ভাই
আহসান কবীর।
মামলার
আরজিতে বলা হয়েছে, গতবছরের ৫মে রমনা থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায়
তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। কিন্তু তারও তিন দিন আগে ২ মে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে
সাধারণ পোশাকের ১৬-১৭ জন লোক কাকরাইলের বাসা থেকে তাকে ‘জোর করে হাতকড়া ও মুখে
মুখোশ পরিয়ে অজ্ঞাত এক নির্জন জায়গায়’ নিয়ে যায়।
ওই
তিন দিন তাকে সেখানে ‘নির্যাতন’ করা হয় অভিযোগ করে তার বিস্তারিত বিবরণও মামলার
আর্জিতে তুলে ধরেছেন কিশোর।
সেখানে
বলা হয়েছে, গত বছরের ২ মে সন্ধ্যার দিকে কলিং বেলের শব্দে কিশোরের ঘুম ভাঙে। দরজা
খুলতেই অপরিচিত এক লোক বলেন, ‘দরজা খোলেন না কেন? পরনের লুঙ্গি পরিবর্তন করে
প্যান্ট পরে নেন। সাথে একটা ভালো শার্ট।’
কিশোর
পরিচয় জিজ্ঞেস করলেও তারা পরিচয় দেননি; তবে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় তাদের একজনকে
‘জসিম’ নামে ডাকতে শোনার কথা কিশোর তার আর্জিতে লিখেছেন।
সেখানে
বলা হয়েছে, অপরিচিত ওই লোকেরা ঘরে ঢুকে তল্লাশি শুরু করে। অথচ কোনো ধরনের পরোয়ানা
তারা দেখাতে পারেনি।
কিশোরের
বাসা থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, কম্পিউটার সিপিইউ, পোর্টেবল হার্ড ডিস্কসহ
ডিজিটাল যত ডিভাইস ছিল, সবই তারা নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন কিশোর।
আহমেদ কবির কিশোর
আর্জিতে
বলা হয়েছে, কিশোরকে যখন হাতকড়া পরিয়ে বাসার নিচে নামিয়ে আনা হয়, তখন সেখানে
ছয়-সাতটি গাড়ি অপক্ষো করছিল। তাকে একটি গাড়িতে তোলার সময় বাসার সামনে অনেক মানুষ
জড়ো হয়েছিল। গাড়িতে তোলার পর কিশোর চিৎকার শুরু করলে সেই শব্দ চাপা দিতে জোরে গান
বাজানো হয়, যাতে চিৎকারের শব্দ বাইরে না যায়।
কিশোর
বলছেন, তাকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি পুরানো ও স্যাঁতস্যাঁতে বাড়ির একটি কক্ষে। সেখান
থেকে তিনি বাইরে গাড়ির হর্নের শব্দ পাচ্ছিলেন।
মামলার
আর্জিতে বলা হয়, ওই ঘরে প্রজেক্টরের মাধ্যমে কিশোরের নিজের আঁকা বিভিন্ন কার্টুন একের
পর এক দেখিয়ে সেগুলোর মমার্থ জানতে চাওয়া হয়। করোনাভাইরাস নিয়ে আঁকা কিছু কার্টুন
দেখিয়ে জানতে চাওয়া হয়, তিনি সেগুলো কেন এঁকেছেন? কার্টুনের চরিত্রগুলো
কারা?
কিশোর
বলেছেন, এক পর্যায়ে ‘প্রচণ্ড জোরে থাপ্পর মারা হয়’ তার কানে। তাতে কিছু সময়ের জন্য
বোধশক্তিহীন হয়ে পড়েন। তবে তিনি বুঝতে পারছিলেন যে কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। পরে
‘স্টিলের পাত বসানো লাঠি দিয়ে’ তাকে ‘পেটানো’ হয়। যন্ত্রণা ও ব্যথায় তিনি সংজ্ঞা
হারিয়ে ফেলেন।
সেখানে
২ মে থেকে ৪ মে এভাবে তার ওপর ‘শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার’ চালানো হয় বলে অভিযোগ
করেছেন কিশোর। আর্জিতে তিনি বলেছেন, পরে তিনি নিজেকে র্যাব কার্যালয়ে দেখতে পান।
সেখানে তার সঙ্গে লেখক মুশতাক আহমেদের দেখা হয়। মুশতাকের সঙ্গে আলাপ করে জানতে
পারেন, মুশতাককে ‘বৈদ্যুতিক শক’ দেওয়া হয়ছে।
৬
মে রমনা থানায় হস্তান্তর করার পর ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয় তাদের বিরুদ্ধে।
মুশতাক
আহমেদ বন্দি অবস্থায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান, যা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দেয়।
এরপর
গত ৩ মার্চ ছয় মাসের জামিন পাওয়ার পরদিন কিশোর কারাগার থেকে ছাড়া পান।
আরও পড়ুন
বিচারের মুখে কিশোর-মুশতাক-দিদার, মিনহাজ-তাসনিম খলিলরা অভিযোগপত্রে বাদ