আর তা করতে না পারার কারণেই বহু কষ্টে ঝরানো ওজন আবার
ফিরে আসে।
শরীরচর্চা-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে
জানানো হল ওজন আবার বেড়ে যাওয়ার কারণ ও তা এড়াতে করণীয় সম্পর্কে।
অবাস্তব লক্ষ্য: ওজন কমানো কিংবা স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা গড়ে তোলার শুরুতে
যদি অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে রাখেন তবে নানান বিপদ হতে পারে।
প্রথমত, আপনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না, ফলে দেখা দেবে
হতাশা। আবার অবাস্তব লক্ষ্য অর্জন করতে গিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে তা উপকারে বদলে
আরও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেকোনো পর্যায়ে আপনার লক্ষ্যমাত্রা
হওয়া উচিত বর্তমান ওজনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমানো। সেটায় সফল হয়ে আরও ১০ শতাংশ, এভাবেই
ছোট ছোট ধাপে স্বাস্থ্যকর ওজন অর্জন করতে হবে।
এর বেশি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নেমে যদি সফল হয়েও যান
তবে সেটাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর হবে। হঠাৎ শরীরের ওজন কমে যাওয়া যেমন অস্বাস্থ্যকর তেমনি
তার স্থায়িত্বও কম।
খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত
বিধিনিষেধ: সুষম খাদ্যাভ্যাসে অনেক
ধরনের খাবার থাকতে হবে। তাই যে খাদ্যাভ্যাস অনেক ধরনের খাবারে নিশেধাজ্ঞা দেয় তা লম্বা
সময়ে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে।
পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে বৈচিত্র্য না থাকলে একসময় স্বাদের
একঘেয়েমি আসবে, ফলে সেই খাদ্যাভ্যাসে অটুট থাকাটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
আর খাদ্যাভ্যাস বিশৃঙ্খল হয়ে গেলেই আবার হারানো ওজন ফিরে
আসবে, এমনকি আগের চেয়েও বেশি ওজন বেড়ে যেতে পারে।
শরীরচর্চা নিয়ে
বাড়াবাড়ি: অনেকেই দ্রুত ওজন কমানোর
জন্য প্রতিদিন ব্যায়াম করেন। কেউ কেউ আবার দিনে একাধিকবার ব্যায়াম করার চেষ্টা করেন।
প্রথমদিকে এতে উপকার পেলেও তা ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব।
বিশেষত, যারা আগে কখনও ব্যায়াম করেননি তাদের জন্য।
আগে কিছুই না করা থেকে হঠাৎ করে প্রতিদিন ব্যায়াম করা
শুরু করলে শরীর প্রচণ্ড অবসাদগ্রস্ত হয়ে উঠবে। একসময় ব্যায়ামের আগ্রহ হারাবেন পুরোপুরি।
তাই ছোট থেকে শুরু করতে হবে। সপ্তাহের তিন দিন আধা ঘণ্টা
ব্যায়াম দিয়ে শুরু করতে হবে, ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে।
অতিরিক্ত ব্যায়ামের আরেকটি ক্ষতিকর দিক হলো কাঙ্ক্ষিত
শরীর পাওয়া পর অধিকাংশই ব্যায়াম করা কমিয়ে দেন বা একেবারে ছেড়ে দেন। ফলে ঝরানো ওজন
আবার ফিরে আসে।
সমস্যা যখন মনে: জীবনে হতাশা কাটাতে অনেকেই বেছে নেন শরীরচর্চার পথ।
তবে সমস্যা হলো সবকিছু ঠিক রেখে সুঠাম ও স্বাস্থ্যবান শরীর গড়ার পরও দেখা যায় আপনার
হতাশা যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেছে।
কারণ হতাশা আপনার মানসিক সমস্যা শারীরিক নয়। তাই শরীর
গঠন করে মনের হতাশা দূর হয় না। বরং এতো পরিশ্রমের পরও যখন হতাশা ফুরায় না তখন সেটাই
আরেক হতাশা হয়ে দেখা দেয়।
অলস জীবনযাত্রা: ব্যায়ামাগারে প্রচুর পরিশ্রম করে সুঠাম দেহ গড়ার পর
যদি সব ছেড়ে অলস সময় কাটান তবে ঝরানো ওজন ধীরে ধীরে আবার ফিরে আসবে।
স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখতে হলে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম
চালিয়ে যেতে হবে।
পুরানো অভ্যাসে
ফিরে যাওয়া: ওজন কমানো মানে এই নয়
যে কিছুদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন, ব্যায়াম করবেন, ফাস্টফুড বাদ দেবেন আর পরে ওজন
নিয়ন্ত্রণে চলে আসলে আবার সকাল বিকাল পিৎজা, বার্গার খাবেন।
একবার স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বেছে নিয়ে তা সারাজীবনের
জন্য মেনে চলতে হবে। যে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে ওজন বেড়েছিল তাতে আর কখনই
ফিরে যেতে পারবেন না। ফিরে গেলেই ওজন আবার বাড়তে শুরু করবে।
মানসিক চাপ: নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস আর নিয়মিত ব্যায়ামের পরও যদি
কারও ওজন না কমে তবে প্রায় নিশ্চিত হয়েই বলা যায় এর পেছনে দায়ী মানসিক চাপ।
একইভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার পাশাপাশি যদি মানসিক চাপও
নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারেন তবে ওজন আবার বাড়বে।
কারণ মানসিক চাপ যত বেশি থাকবে ততই আপনি ‘কমফোর্ট ফুড’য়ের
দিকে ঝুঁকবেন।
আপনার মনে হবে একদিন খেলে কিছু হবে না, পরে ভাববেন দিনে
একবার খেলে কিছু হবে না। এভাবে ক্রমেই ওজন বাড়াতে থাকবে।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন