বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াংগনের হ্লাইং থারিয়ার এলাকায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুড়েছে। বিক্ষোভকারীরা এদিন লাঠি ও ছুরি নিয়ে প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন।
হ্লাইং থারিয়ার এলাকায় চীনের অনেকগুলো কারখানা রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা সেগুলোতে হামলা চালাতে পারে- এমন আশঙ্কায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেখানে সামরিক আইন জারি করেছে।
বিক্ষোভকারীদের ধারণা, চীন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে, যদিও বেইজিং তা অস্বীকার করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, রোববার হ্লাইং থারিয়ার এলাকায় বিক্ষোভের ভিডিওতে নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি বিক্ষোভকারীদের অনেককে সঙ্গে ঘরে বানানো ঢাল আর হেলমেট দেখা গেছে।
পুরো এলাকা ছেয়ে ছিল কালো ধোঁয়ার আস্তরণে। সেখানে দুটি কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।
বিবিসি লিখেছে, রোববার বিক্ষোভের মধ্যে কেবল ইয়াংগনেই ২১ জনের প্রাণ গেছে। মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন অব পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) বলেছে, পুরো মিয়ানমারে একদিনেই অন্তত ৩৯ জনের প্রাণ গেছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারে চলমান আন্দোলনে রোববারই ছিল সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন।
তবে আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসাকর্মীরা।
এএপিপি জানিয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত দুই হাজার একশর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে মিয়ানমারে।
অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি পার্টির (এনএলডি) নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে যারা গ্রেপ্তার এড়িয়ে আত্মগোপন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা একটি ‘পাল্টা সরকার’ প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দিয়েছে। এর নাম কমিটি ফর রিপ্রেজেন্টিং পাইডাংসু লুত্তাও বা সিআরপিএইচ। মান উয়িন খাইং থান এর অস্থায়ী প্রধান।
সিআরপিএইচ মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
শনিবার গোপন অবস্থান থেকে ফেইসবুকের মাধ্যমে দেওয়া ভাষণে খাইং থান বলেন, “এটি জাতির জন্য্য এখন সবচেয়ে অন্ধকার মুহূর্ত, কিন্তু সামনেই ভোর।”
ইয়াংগনের নর্থ ড্রাগন শহরে সেনাঅভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিতে মারাত্মক আহত এক ব্যক্তিকে বাঁচাতে হাসপাতালে ছুটছেন অন্যরা। গুরুতর আহত ওই ব্যক্তি পরে মারা যান।ছবি: রয়টার্স
সিআরপিএইচ মিয়ানমারে ফেডারেল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। এর নেতারা দেশটির বৃহত্তম নৃগোষ্ঠীগুলোর সশস্ত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করছে এবং ইতোমধ্যে কিছু গোষ্ঠী সিআরপিএইচের প্রতি সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
এই বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠনগুলো মিয়ানমারের বিস্তৃত বহু অঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে।
সিআরপিএইচ মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে একটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে ঘোষণা করেছে।
খাইং থান বলেছেন, “নিজেদের রক্ষার আইনি অধিকার যেন জনতার থাকে, সেই লক্ষ্যে সিআরপিএইচ প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ণের উদ্যোগ নিয়েছে।”
‘অন্তবর্তী জনপ্রশাসন দল’ মিয়ানমারের সরকারি প্রশাসন পরিচালনা করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় মোনিওয়া পৌরসভা নিজস্ব স্থানীয় সরকার ও পুলিশ বাহিনী গঠনের ঘোষণা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: