আবু ধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে শেষ দিনে গড়ানো দ্বিতীয় টেস্টে রশিদের ঘূর্ণিতে একশ পেরিয়েই থেমে যায় জিম্বাবুয়ের লিড। ৬ উইকেটে জিতে সিরিজে সমতা টানে আফগানিস্তান। দুই টেস্টের সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়।
প্রথম ইনিংসে আফগানিস্তানের ৫৪৫ রানের জবাবে ২৮৭ রানে অলআউট হয়ে ফলো অনে পড়ে জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসেও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ইনিংস হারের শঙ্কায় পড়েছিল তারা। সেখান থেকে প্রতিরোধ গড়েন উইলিয়ামস। নয় নম্বরে নেমে দারুণ সঙ্গ দেন ডোনাল্ড টিরিপানো।
তাদের বাধার দেয়াল ভাঙে রশিদের ঘূর্ণিতে। দ্বিতীয় ইনিংসে আগের দিনই পাঁচ উইকেট নেওয়া এই স্পিনার শেষ দিন নেন আরও দুটি। ১৩৭ রান দিয়ে ৭ উইকেট নেন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারে যা তার ইনিংস সেরা বোলিং। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়া এই লেগ স্পিনার দ্বিতীয়বারের মতো টেস্ট ম্যাচে পেলেন ১০ উইকেট।
দারুণ ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ার সেরা ১৫১ রানে অপরাজিত ছিলেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দুয়ারে থাকা টিরিপানো ফেরেন আক্ষেপ নিয়ে, আউট হন ক্যারিয়ার সেরা ৯৫ রানে।
৩৬৫ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ১০৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় পঞ্চম দিনের শেষ সেশনে জয় নিশ্চিত করে আসগর আফগানের দল।
৭ উইকেটে ২৬৬ রান নিয়ে রোববার দিন শুরু করে জিম্বাবুয়ে। উইলিয়ামস ও টিরিপানো সাবধানী ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। প্রথম ঘণ্টায় কোনো বিপদে পড়েনি তারা।
এই দুইজনের ব্যাটে জিম্বাবুয়ের লিড ৫০ পেরিয়ে যায়। লাঞ্চ বিরতির ঠিক আগে ঘটে বিপত্তি। আগের দিন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পাওয়া টিরিপানোকে হারায় সফরকারীরা। প্রথম সেশনের দ্বিতীয় শেষ ওভারে রশিদের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান তিনি। তার ২৫৮ বলের ইনিংসটি সাজানো ১৬ চারে।
শেষ হয় ১৮৭ রানের জুটি। টেস্টে অষ্টম উইকেটে জিম্বাবুয়ের যা সর্বোচ্চ রানের জুটি।
ব্লেসিং মুজারাবানি প্রথম ৩৩ বলে নিতে পারেননি কোনো রান। এরপর আমির হামজার এক ওভারে মারেন চার বাউন্ডারি। বাঁ হাতি এই স্পিনারের পরের ওভারেই তিনি হন কট বিহাইন্ড। আর রশিদের করা পরের ওভারে মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই ভিক্টর নিয়াউচিকে এলবিডব্লিউ হলে শেষ হয় জিম্বাবুয়ের ইনিংস।
এক প্রান্ত আগলে রাখা উইলিয়ামস অপরাজিত রয়ে যান। ৩০৯ বলে তার ১৫১ রানের ইনিংসটি ১৩টি চার ও এক ছক্কায় সাজানো।
ছোটো লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় আফগানিস্তান। ইনিংসের পঞ্চম বলে উইকেট হারায় তারা। মুজারাবানির বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন জাভেদ আহমাদাই।
এরপর আস্থার সঙ্গে খেলে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিতে থাকেন রহমত শাহ ও ইব্রাহিম জাদরান। দ্রুত রান বাড়াতে থাকেন রহমত। নিয়াউচির পরপর তিন বলে মারেন চার। পরে উইলিয়ামসের ওভারে মারেন তিনটি।
বায়ান বার্লকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় টারাসাই মুসাকান্দার হাতে ধরা পড়েন ৩ চারে ২৯ করা ইব্রাহিম। শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে পরের ওভারেই ফিরে যান শহিদুল্লাহ।
ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং করে ৬২ বলে ফিফটি তুলে নেন রহমত। দলকে জিতিয়ে ফিরতে পারেননি তিনি। বার্লকে ছক্কায় উড়িয়ে পরের বলে হন বোল্ড। ৯ চার ও এক ছক্কায় ৭৬ বলে করেন ৫৮ রান।
অল্প সময়ের মধ্যে তিন উইকেট পড়লেও তা কোনো ভাবনার কারণ হয়নি আফগানিস্তানের জন্য। জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন নাসির জামাল ও প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করা হাশমতউল্লাহ শাহিদি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান ১ম ইনিংস: ৫৪৫/৪ (ডি.)
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৮৭
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: (ফলো অনের পর) ১৪৮.৫ ওভারে ৩৬৫ (উইলিয়ামস ১৫১*, টিরিপানো ৯৫, মুজারাবানি ১৭, নিয়াউচি ০; শিরজাদ ২৭-৭-৪৯-১, রশিদ ৬২.৫-১৭-১৩৭-৭, হামজা ৩৪-৭-১০৪-১, জাভেদ ১৬-৫-৪০-১, শহিদুল্লাহ ৫-১-৬-০, আসগর ১-০-১-০, রহমত ৩-০-৯-০)।
আফগানিস্তান ২য় ইনিংস: ২৬.১ ওভারে ১০৮/১ (জাভেদ ৪, ইব্রাহিম ২৯, রহমত ৫৮, শহিদুল্লাহ ০, নাসির ৪*, হাশমতউল্লাহ ৬*; মুজারাবানি ৯.১-১-২৫-২, নিয়াউচি ৬-১-২৮-০, উইলিয়ামস ৩-০-১৮-০, টিরিপানো ৪-০-১৭-০, বার্ল ৪-১-১৬-২)।
ফল: আফগানিস্তান ৬ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: দুই টেস্টের সিরিজ ১-১ সমতা।
ম্যান অব দা ম্যাচ: হাশমতউল্লাহ শাহিদি।
ম্যান অব দা সিরিজ: শন উইলিয়ামস।