ক্যাটাগরি

‘বিপ্লব’ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার মিয়ানমারের বেসামরিক নেতার

শনিবার জনতার উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রথম ভাষণে এ মনোভাব জানিয়েছেন এনএলডির আত্মগোপনকারী নেতা মান ‍উয়িন খাইং থান, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।  

অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি পার্টির (এনএলডি) নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে যারা গ্রেপ্তার এড়িয়ে আত্মগোপন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা একটি নতুন গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর নাম কমিটি ফর রিপ্রেজেন্টিং পাইডাংসু লুত্তাও বা সিআরপিএইচ। মান ‍উয়িন খাইং থান এর অস্থায়ী প্রধান নিযুক্ত হয়েছেন। 

সিআরপিএইচ মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

গোপন অবস্থান থেকে ফেইসবুকের মাধ্যমে দেওয়া ভাষণে খাইং থান বলেন, “এটি জাতির সবচেয়ে অন্ধকার মূহুর্ত কিন্তু নিকটেই ভোর।”

সিআরপিএইচ মিয়ানমারে একটি ফেডারেল গণতন্ত্র তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। এর নেতারা দেশটির বৃহত্তম নৃগোষ্ঠীগুলোর সশস্ত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করছে এবং ইতোমধ্যে কিছু গোষ্ঠী সিআরপিএইচের প্রতি সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

এই বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠনগুলো মিয়ানমারের বিস্তৃত বহু অঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে। 

সিআরপিএইচ জান্তাকে একটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে ঘোষণা করেছে।

খাইং থান বলেছেন, “নিজেদের রক্ষার আইনি অধিকার যেন জনতার থাকে সেই লক্ষ্যে সিআরপিএইচ প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ণের উদ্যোগ নিয়েছে।” 

‘অন্তবর্তী জনপ্রশাসন দল’ মিয়ানমারের সরকারি প্রশাসন পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সিআরপিএইচের অস্থায়ী প্রধান মান ‍উয়িন খাইং থান। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সিআরপিএইচের অস্থায়ী প্রধান মান ‍উয়িন খাইং থান। ফাইল ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী একটি আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন দেশটির চিকিৎসক ও শিক্ষকরা। সেটি বিস্তৃত হতে হতে এখন পেশাজীবীদের সাধারণ ধর্মঘটের রূপ নিয়েছে। এতে দেশটির অর্থনীতির বিভিন্ন খাত স্থবির হয়ে পড়েছে এবং সরকারি কাজকর্মের একটি বড় অংশ সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত নেত্রী সু চি ও তার দলের অধিকাংশ ঊর্ধ্বতন নেতাদের গ্রেপ্তার করে সামরিক বাহিনী দেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে মিয়ানমারজুড়ে জান্তাবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে।

প্রতিবাদ দমনের চেষ্টায় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ইতোমধ্যেই নিহতের সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়ে গেছে বলে দেশটির আইনজীবীদের গোষ্ঠী ‘অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফল পলিটিক্যাল প্রিজনার্স’ জানিয়েছে।

অভ্যুত্থানের পর থেকে শনিবার অন্যতম রক্তাক্ত দিন দেখেছে মিয়ানমার। এদিন অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা ও স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে প্রতিবাদকারীদের অবস্থান ধর্মঘটে পুলিশের গুলিতে পাঁচ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন, রয়টার্সকে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

পুলিশের গুলিতে মধ্যাঞ্চলীয় শহর পিয়েতে দুই জন ও বাণিজ্যিক রাজধানী বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গনে আরও দুই জন নিহত হয়েছেন। এর আগের দিন রাতে ইয়াঙ্গনের পুলিশের গুলিতে আরও তিন জন নিহত হন বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

মধ্যাঞ্চলীয় মাগউই অঞ্চলের চাউক শহরে পুলিশের ছোড়া গুলি বুকে বিদ্ধ হয়ে একজন ট্রাক চালক নিহত হয়েছেন বলে নিহতের এক পারিবারিক বন্ধু রয়টার্সকে জানিয়েছেন।