আনিয়েজ মাস ছয়েক আগেও বলিভিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন; শনিবার গ্রেপ্তারের পর তাকে রাজধানী লা পাজের একটি আটক কেন্দ্রে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তার পাশাপাশি বেশ ক’জন সাবেক মন্ত্রী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, রাষ্ট্রদ্রোহ এবং ১৩ বছর ধরে বলিভিয়ার ক্ষমতায় থাকা সোশালিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আনিয়েজের পোস্ট করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থেকে জানা গেছে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক নির্বাচন ও এরপর হওয়া সহিংস বিক্ষোভের মুখে দেশটির দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট মোরালেস পদ ছেড়ে দিলে আনিয়েজ দায়িত্ব নেন; তিনি এক বছরেরও কম সময় বলিভিয়ার নেতৃত্বে ছিলেন।
সাবেক এ অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারে হওয়া অভিযান, দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে মোরালেসের রাজনৈতিক মিত্র ও উত্তরসূরী প্রেসিডেন্ট লুইজ আরসের এখনকার প্রশাসনের সঙ্গে রক্ষণশীলদের বিরোধ আরও বাড়িয়ে দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সাবেক এ অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারে হওয়া অভিযান দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে মোরালেসের রাজনৈতিক মিত্র ও উত্তরসূরী প্রেসিডেন্ট লুইজ আরসের এখনকার প্রশাসনের সঙ্গে রক্ষণশীলদের বিরোধ আরও বাড়িয়ে দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
শনিবার ভোরের দিকে মধ্যাঞ্চলীয় শহর ত্রিনিদাদে আনিয়েজের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের কয়েক ঘণ্টা পর ছবিতে সাবেক এ ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টকে লা পাজের একটি আটক কেন্দ্রে নারীদের রাখার কক্ষের গরাদের ভেতর দেখা গেছে।
সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুনানি শুরু হওয়ার কথা, এমন ব্যক্তিদের এ ধরনের আটক কেন্দ্রে রাখা হয়।
আনিয়েজের অভিযোগ, তিনি রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার। সাবেক প্রেসিডেন্ট হওয়ায় তিনি যে দায়মুক্তি সুবিধা পান, তা দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন ডানপন্থি এ রাজনীতিক।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটসের (ওএএস) কাছে লেখা চিঠিতে তিনি নিজের ও তার আমলের জ্বালানি ও বিচার মন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
“অভিযোগের মধ্যে সত্যের কণামাত্রও নেই। এটা হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে ভয় দেখানো। কোনো অভ্যুত্থানই হয়নি। আমি সাংবিধানিক ধারা অনুসরণে অংশ নিয়েছি,” কড়া পুলিশি পাহারায় সামরিক বিমানে লা পাজের বিমানবন্দরে নামার পর স্থানীয় একটি টেলিভিশনকে এমনটাই বলেছেন সাবেক এ অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট।
নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে বিরোধীদের সহিংস বিক্ষোভের মুখে মোরালেস পদত্যাগ করলে ২০১৯ এর শেষ দিকে বলিভিয়ার ক্ষমতা নেন আনিয়েজ। মোরালেসের পদত্যাগ এবং তার ক্ষমতা গ্রহণকে কেন্দ্র করে হওয়া সহিংসতায় অন্তত ৩৩ জনের প্রাণ যায়, এর মধ্যে ৩০ জনেরই মৃত্যু হয় আনিয়েজ অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর।
মোরালেসের দল মুভমেন্ট ফর সোশালিজম পার্টির এখনকার নেতা লুইজ আরসে গত বছরের অক্টোবরের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন।
আরসে এর আগে মোরালেস প্রশাসনের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তার জয় আর্জেন্টিনায় নির্বাসনে থাকা মোরালেসকে দেশে ফেরার সুযোগ করে দেয়।
শনিবার বলিভিয়ার মন্ত্রী এদুয়ার্দো দেল কাস্টিলো জানান, দেশে একটি অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগে পাবলিক প্রসিকিউটর কার্যালয় আনিয়েজকে আটক করেছে।
সব নিয়ম মেনেই সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টকে আটক করা হয়েছে, বলেছেন তিনি।
“আমাদের দিক থেকে কোনো ধরনের রাজনৈতিক নির্যাতন নেই; যদি কেউ ভিন্নভাবে ভেবেও থাকে তাকে নিয়ে ভীতও নই আমরা,” সংবাদ সম্মেলনে কাস্টিলো এমনটাই বলেছেন।
লাতিনের দেশটির বিচারমন্ত্রী ইভান লিমা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানান, আনিয়েজের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে যে সময় তিনি বিরোধীদলীয় সেনেটর ছিলেন, তখনকার কর্মকাণ্ড নিয়ে। যখন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখনকার কর্মকাণ্ড নিয়ে নয়।
এ কারণে আনিয়েজ সাংবিধানিক যে দায়মুক্তির কথা বলছেন, তা পাবেন না, বলেছেন লিমা।