রোববার ঢাকার শ্যামলীর টিবি হাসপাতালে ওয়ান স্টপ টিবি সেন্টারের উদ্বোধনী
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই তরুণ, আক্রান্তদের
অনেককেই আইসিইউতে ভর্তি করা লাগছে।
“গত দুই মাসে আমার কাছে কখনোই আইসিইউ বেডের জন্য কোনো অনুরোধ আসে নাই।
কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ফোন পাচ্ছি আইসিইউ বেড পাওয়া যাচ্ছে না, দেন। এখন যারা আক্রান্ত
হচ্ছেন। আগে আমরা দেখছিলাম যাদের কোমর্বিডিটি আছে তাদের আইসিইউ লাগত। এখন ইয়াং, ভালো,
সুস্থ, তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন।”
সবাইকে সতর্ক করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “গেল দুই মাস
আমরা স্বস্তিতে ছিলাম, তাই এখন আমরা কোনো কিছু মানছি না। সামনের দিকে আমরা আরও বড় বিপদে
পড়তে যাচ্ছি যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি না মানি।”
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমতে থাকায় গত ১৯ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্তের
হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিল, এক পর্যায়ে তা ৩ শতাংশেরও নিচে নেমে আসে। এর মধ্যে
সারা দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদানও শুরু হয়।
কিন্তু মার্চের শুরু থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শনাক্তের হারও বাড়তে থাকে।
৯ মার্চ তা আবার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। শুক্র ও শনিবার দৈনিক শনাক্তের হার ছিল ৬ শতাংশের
বেশি, রোববার
তা বেড়ে ৭ দশমিক ১৫
শতাংশ হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারায় গত এক সপ্তাহে
দেশে নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে ৬৭ দশমিক ২৭ শতাংশ; আর মৃত্যু বেড়েছে ৪৯ দশমিক
শূন্য ২ শতাংশ।
মহামারীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে মোট ৫ লাখ
৫৭ হাজার
৩৯৫ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে
৮ হাজার
৫৪৫ জনের।
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে দেশের সব হাসপাতালকে প্রস্তুত
থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডা. খুরশীদ আলম বলেন, ইতোমধ্যে সিভিল সার্জন অফিসগুলোতে
চিঠি পাঠানো হয়েছে; সারা দেশে আইসিইউগুলো প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
“সমস্ত দেশে ডিভিশনাল হাসপাতাল এবং ঢাকায় যতগুলো হাসপাতাল আছে, সেগুলোর
পরিচালকদের সঙ্গে বসেছিলাম, তাদের সুবিধা-অসুবিধা কার কী অবস্থা আমরা সেগুলো শুনেছি।
সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা করছি। তাদের বলেছি যে কয়টা বেড আছে, আপনারা রেডি রাখেন। বি রেডি
ফর ম্যানেজমেন্ট ফর দ্য কোভিড পেশেন্টস।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি জোরদার
করতে এরইমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্য ও আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের কারণে দেশে
সংক্রমণ বাড়ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে
দেখা হচ্ছে।”
করোনাভাইরাসের টিকার তৃতীয় চালান শিগগিরই দেশে পৌঁছাবে বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক ডা.
সামিউল ইসলাম, আইসিডিডিআর,বির শর্ট স্টে ইউনিটের প্রধান ডাক্তার আজহারুল ইসলাম খান,
শ্যামলী টিবি হাসপাতালের উপ-পরিচালক মো. আবু রায়হান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ডিসি ও ইউএনওদের চিঠি
দেশে করোনাভাইরাসের
প্রকোপ আবার বাড়তে থাকায় সবার স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে জোর দিয়ে বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও ইউএনওদের চিঠি
দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “সম্প্রতি
করোনা সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর হার গত কয়েক মাসের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সংক্রমণের
হার রোধের জন্য সর্বক্ষেত্রে সকলের মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত
করা প্রয়োজন।”
সকলের মাস্ক পরা নিশ্চিত
করাসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও
ইউএনওদের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।