আগের ম্যাচের একাদশ থেকে ৭ পরিবর্তন এনেও শেষ ম্যাচে জয় পেল বাংলাদেশ ইমার্জিং দল। শেষ বলে নিষ্পত্তি হওয়া ম্যাচে বাংলাদেশের উঠতিরা ৫ উইকেটে হারাল আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলকে।
কোভিড বিপত্তিতে সিরিজের প্রথম ম্যাচ ৩০ ওভার শেষে পরিত্যক্ত হওয়ার পর একদিনের ম্যাচের সিরিজের বাকি ৪টি ম্যাচই জিতল বাংলাদেশ।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার মাহমুদুল হাসান জয়ের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ইমার্জিং দল তোলে ২৬০ রান। আইরিশরা জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত থমকে যায় ২৫৫ রানে।
আগের ম্যাচে দলের রান তাড়ায় ৮০ রানে অপরাজিত থাকা মাহমুদুল এবার পেরিয়ে যান শতরান। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিতে ১৩৫ বলে করেন ১২৩ রান।
সিরিজ জয় আগেই নিশ্চিত হওয়ায় এই ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে পরিবর্তন আনে একগাদা। গোটা সিরিজে ব্যর্থ তানজিদ হাসান তামিম, ইয়াসির আলি চৌধুরি এ দিন সুযোগ পাননি। বিশ্রাম পান কিপার আকবর আলি, তিন পেসার সুমন খান, মুকিদুল ইসলাম, সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসান।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ চতুর্থ ওভারে হারায় অধিনায়ক সাইফ হাসানকে। মার্ক অ্যাডায়ারের ভেতরে ঢোকা বলে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হন সাইফ।
আরেক ওপেনার আনিসুল ইসলাম ইমনের শুরুটাও ছিল ভীষণ নড়বড়ে। দুটি বাউন্ডারি পান তিনি ব্যাটের কানায় লেগে। তিনে নামা মাহমুদুলের প্রথম বাউন্ডারিও আসে ব্যাটের কানা ছুঁয়ে।
এরপর মাহমুদুল থিতু হন দ্রুতই। সিরিজে প্রথমবার খেলতে নামা আনিসুল কয়েকটি আগ্রাসী শটে রান বাড়ালেও ছটফট করছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৮ চারে তার ৩১ বলে ৪১ রানের ইনিংস শেষ হয় লেগ স্পিনার গ্যারেথ ডেলানির বলে আলগা শটে।
এরপর মাহমুদুলই এক প্রান্ত আগলে এগিয়ে নেন দলকে। বড় জুটি গড়ার মতো পাননি কোনো সঙ্গী।
অফ স্পিনার হ্যারি টেক্টরের শর্ট বলে বাজে শটে ক্যাচ দেন তৌহিদ হৃদয় (২০)। আইরিশ অধিনায়কের আরেকটি শর্ট বলে উইকেট বিলিয়ে আসেন শাহাদাত হোসেন (১৩)।
দারুণ ফর্মে থাকা শামীম হোসেন দুটি বাউন্ডারির পর বোল্ড হন পিটার চেইসের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে।
শেষ ম্যাচ ও সিরিজের সেরা মাহমুদুল হাসান জয়। ছবি : বিসিবি।
মাহমুদুলকে কিছুটা সঙ্গ দিতে পারেন কেবল সিরিজে প্রথম সুযোগ পাওয়া মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। ষষ্ঠ উইকেটে দুজন যোগ করেন ৬১ রান। মাহিদুল আউট হন ৩৩ রানে।
মাহমুদুল তার কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১২৪ বলে। এরপর শেষ দিকের দাবি মিটিয়ে তোলেন দ্রুত কিছু রানও। তার সৌজন্যেই মূলত আড়াইশ ছাড়াতে পারে বাংলাদেশ।
৯ চার ও ৩ ছক্কার ইনিংস খেলে মাহমুদুল রান আউটে বিদায় নেন শেষের আগের ওভারে।
আইরিশরা রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারেই হারায় ওপেনার জেমস ললোরকে। তবে মূল পেসাররা না থাকায় বাংলাদেশের বোলিং এ দিন ছিল ধারহীন। স্টিভেন ডোহেনি ও অ্যাডায়ার দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন দারুণ এক জুটি।
বিশেষজ্ঞ বোলারদের ব্যর্থতায় আক্রমণে এসে ৯৭ রানের জুটি ভাঙেন সাইফ। উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন ৪৫ রান করা অ্যাডায়ার।
ম্যাচ জমে ওঠার সেই শুরু। আইরিশ অধিনায়ক হ্যারি টেক্টর উইকেট ছুঁড়ে আসেন বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামকে স্লগ করতে গিয়ে। সাইফের সোজা বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হন শেন গেটকেক।
ডোহেনি খেলছিলেন দারুণ। কিন্তু হুট করেই একটু অস্থির হয়ে ওঠেন ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। ৭৩ রানে বেঁচে যান আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের বলে হৃদয়কে সহজ ক্যাচ দিয়েও। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি জীবন। শামীমকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তিনি থামেন ৮১ রান করে।
এরপর ৩৫ রান করা কিপার-ব্যাটসম্যান নিল রক যখন ফেরেন, আইরিশদের আশাও দমে যায় অনেকটা। লোয়ার অর্ডাররা তবু লড়াইয়ে রাখেন দলকে। কিন্তু শেষ ওভারের দাবি আর মেটাতে পারেননি তারা।
শেষ ম্যাচের সেঞ্চুরি আর সিরিজে ৭১.২৫ গড়ে ২৮৫ রান করে ম্যাচ ও সিরিজের সেরা ২০ বছর বয়সী মাহমুদুল।
দুই দল এখন খেলবে একটি টি-টোয়েন্টি, শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামেই ম্যাচটি হবে মঙ্গলবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বিসিবি ইমার্জিং দল: ৪৯.৪ ওভারে ২৬০ (সাইফ ৩, আনিসুল ৪১, মাহমুদুল ১২৩, হৃদয় ২০, শাহাদাত ১৩, শামীম ১১, মাহিদুল ৩৩, আমিনুল ৩, রেজাউর ৪*, শফিকুল ১, তানভির ০; চেইস ৭-১-৪৪-১, অ্যাডায়ার ৫.৪-১-২৭-৩, ডেলানি ১০-০-৬৩-১, প্রিটোরিয়াস ১০-০-৫১-২, হোয়াইট ৭-০-৩৬-০, টেক্টর ১০-০-৩৭-০২)।
আয়ারল্যান্ড উলভস: ৫০ ওভারে ২৫৫/৯ (ললোর ০, ডোহেনি ৮১, অ্যাডায়ার ৪৫, টেক্টর ৬, গেটকেক ১২, টাকার ১৭, রক ৩৫, ডেলানি ৭, প্রিটোরিয়াস ১০, হোয়াইট ৬*, চেইস ১০*; রাজা ৬-০-২২-১, শফিকুল ৭-০-৫৭-২, তানভির ১০-০-৩৯-২, আনিসুল ৩-০-২২-০, আমিনুল ৭-০-৩৭-০, সাইফ ১০-১-৩১-৩, শামীম ৭-০-৩৮-১)।
ফল: বাংলাদেশ ইমার্জিং দল ৫ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ইমার্জিং দল ৪-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহমুদুল হাসান জয়।
ম্যান অব দা সিরিজ: মাহমুদুল হাসান জয়।