ক্যাটাগরি

ইসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি ‘সুজনের’

সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০২১ ‘বিজয়ীদের তথ্য বিশ্লেষণ ও নির্বাচন মূল্যায়ন বিষয়ক’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে এই দাবি জানানো হয়।

ভার্চুয়ালি ওই সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে এক প্রশ্নে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারও একই দাবি জানান।

নির্বাচন মূল্যায়ন প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়, ২০২১ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের বছর। এই বছরেই অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন।

এতে বলা হয়, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন ছিল সেই আকাঙ্ক্ষার বিপরীত।

সুজন মনে করে, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে কখনই সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্নপূরণ সম্ভব নয়’।

এর আগে রাষ্ট্রের ৪২ জন বরেণ্য নাগরিক নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে রাষ্ট্রপতির প্রতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যে আবেদন করেছেন, সংবাদ সম্মেলনের সেই একই দাবি তোলা হয়।

এ প্রসঙ্গে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “চট্টগ্রামে যে নির্বাচন হল এতে নির্বাচন কমিশন এবং ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হল। নির্বাচন কমিশনের অতীতের কর্মকাণ্ড, অতীতের নির্বাচনে তাদের যে জালিয়াতি এবং বিভিন্ন রকমের পক্ষপাতদুষ্টতা, একইসাথে তাদের বিরুদ্ধে যে অভূতপূর্ব আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল তার ভিত্তিতে ৪২ জন নাগরিক রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

“আমরা সুজনের পক্ষ থেকেও এই দাবির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। আশা করি মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।”

সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, “একটা জিনিস এ পর্যন্ত মোটামুটিভাবে প্রতিষ্ঠিত  হয়ে গেছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের উপরে কারও কোনো আস্থা নাই।

“আমরা যে ৪২ জন নাগরিক, আমরা স্পেসিফিক কেস দিয়েছি। যে দুর্নীতিতে তারা এই এই ঘটনায় অংশ নিয়েছে। শুধু যে নির্বাচন কমিশন হিসেবে দায়িত্বে পালনে তারা ব্যর্থ হয়েছে তাই নয়, করাপশনও ইনডালজ করেছে। সুতরাং এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে কিছুই হবে না।”

এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, “আমরা যদি ভোট দিতে না পারি। বুথে যদি অন্য কেউ বোতাম টিপে দেয় তাহলে তো আর লাভ নাই কিছু। আসল কথা হল ওইটা। ইলেকশন বুথে ভোটারদের যাওয়ার অধিকার, আমার ভোট যেন অন্য কেউ না দেয় সেটা এনশিউর করা এবং প্রত্যেক প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতি এগুলোকে এনশিউর না করলে হবে না।

“এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সবগুলো নির্বাচন কোনোটাই প্রশ্নাতীত হয় নাই এবং তারা তাদের দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।”

এর আগে সুজন এর প্রধান সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার সংবাদ সম্মেলনে সিসিসি নির্বাচন বিষয়ক মূল্যায়ন প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

প্রতিবেদনে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, মামলা, আয়, নির্বাচনপূর্ব প্রস্তুতি, ভোটের দিনের পরিস্থিতি- প্রাণহানি, সহিংসতা, বিএনপির এজেন্ট বের করে দেয়া, ভোটকেন্দ্রের বাইরে মহড়া, বুথ দখল, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধ্য করা, ইভিএমেও ১০ ঘণ্টা পর ফল ঘোষণা, কম ভোট পড়াসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।

এছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভোট পড়া, ভোটের হারে অসামঞ্জস্যতাসহ বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করা হয় প্রতিবেদনে।

সংবাদ সম্মেলনে সুজন এর নির্বাহী সদস্য ও চট্টগ্রামের ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান বলেন, “চট্টগ্রামের ভোটে মেয়র পদে দুজন ভালো মানুষ থাকা স্বত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত যেভাবে নির্বাচন হয়েছে তাতে দলীয়ভাবে তাদের আচরণ ঠিক হয়নি। বিএনপি দল হিসেবে যতটা আপত্তি করে তার চেয়ে অনেক কম মাঠেঘাটে তাদের উপস্থিতি থাকে।

“তারা যদি মাঠে থাকত তাহলে আরও বেশি মানুষ তাদের পক্ষে থাকত। কিন্তু ভোটাররা কখনই মনে করতে পারেনি কর্মীদের মাঠে রেখে বিএনপি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে। মাঠে কর্মীবাহিনীর উপস্থিতি দেখাতে না পারায় ভোটাররা সেভাবে আসেনি। বিএনপি যে চেষ্টা করেছে তা প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় যথেষ্ট ছিল না। থাকলে অনেক কেন্দ্রে তারা ভালো ফল করতে পারত।”

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “চট্টগ্রামের নির্বাচন সবসময় কঠিন নির্বাচন। ব্যবস্থাপনা ও ইসির নজরদারির কারণে আমাদের সময়ে হওয়া নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের কোনো বিতর্ক হয়নি।

“এবার কয়েকটি লক্ষণীয় বিষয় আছে। যে ট্রেন্ড- শিক্ষিত লোকজন নির্বাচন করছে। তবে ভোটে প্রত্যাশার চেয়ে ব্যবস্থাপনা ছিল অনেক দূরবর্তী। আশা করেছিলাম অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। যেভাবে নির্বাচনটি কনডাক্ট করা হয়েছে তাতে মনে করি না তুলনামূলকভাবে ভালো কোনো নির্বাচন হয়েছে।”

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “একটি ভালো জিনিস দেখেছি। একজন একটি মামলা করেছেন। এডজুডিকেশনটা যেন তাড়াতাড়ি হয় সে বিষয়ে সুজন ও নাগরিক সমাজের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। আর ইভিএমে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় ঘণ্টায় ফল দেওয়ার কথা। বাতিল ভোটের কোনো সুযোগ ইভিএমে থাকার কথা না।”

এরপর বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “মামলার কথা বলেছেন। মামলা তো পাঁচ বছরে শেষ হবে না।”

তখন সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “অনিয়মগুলো যদি আদালতে রেকর্ডেড থাকে পাঁচ বছরও যদি লাগে কোনো ফলাফল তো আমরা পাব।”

‘কোয়ালিটি অব ইলেকশন’ সম্পর্কে জানতে এবং দেশবাসীকে জানাতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ বলে জানান বদিউল আলম মজুমদার।