তবে হাই কোর্টের দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে ঐশীর লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) গ্রহণ করেছে সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। ঐশীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফয়সল এইচ খান।
ডিএজি বিশ্বজিৎ দেবনাথ পরে সাংবাদিকদের বলেন, “তাকে বিচারিক আদালত মৃত্যদণ্ড দিয়েছিলেন। আপিলের রায়ে হাই কোর্ট বিভাগ তাকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন। এই দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ঐশী আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন। আবার রাষ্ট্রপক্ষ তার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আপিল বিভাগে আরেকটি লিভ টু আপিল করে।
“আজকে উভয়পক্ষকে শুনে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছে। আর ঐশীর লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেছে। অর্থাৎ এখন তার যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল থাকবে কি থাকবে না- তার ওপর আপিল শুনানি হবে।”
২০১৩ সালের ১৬ অগাস্ট ঢাকার চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পরদিন ১৭ আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের ভাই মশিউর রহমান বাদী হয়ে পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই দিনই নিহত দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমান পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করে বাবা-মাকে নিজেই খুন করার কথা স্বীকার করেন।
নিহত স্বপ্না বেগম ও তার স্বামী মাহফুজুর রহমান
এ মামলায় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকার একটি আদালত ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার দায়ে ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তার আরেক বন্ধু আসাদুজ্জামান জনিকে খালাস দেওয়া হয়।
পরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাই কোর্টে আসে। আর ঐশীও বিচারিক আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।
শুনানি শেষে হাই কোর্ট ২০১৭ সালের ৫ জুন যে রায় দেয়, তাতে সাজা কমিয়ে ঐশীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে আর্থিক জরিমানা ২০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা করা হয়।
পাঁচটি যুক্তি বিবেচনায় নিয়ে ঐশীর সাজা কমানোর কথা জানিয়ে হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়, ঐশীর অপরাধ ফৌজদারি আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য হলেও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে তাকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়াই যুক্তিযুক্ত মনে করছে আদালত।
পাঁচ কারণ
এক. মাদকাসক্ত ঐশী মানসিক বিচ্যুতির কারণে জোড়া খুনের ওই ঘটনা ঘটিয়েছে। বাবা-মাকে হত্যার পেছনে তার সুস্পষ্ট কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
দুই. আসামি ঐশী অ্যাজমা, ওভারিয়ান সিস্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের পরিবারে মানসিক সমস্যার ইতিহাস রয়েছে। ঐশীর দাদি ও মামা আগে থেকেই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। পরীক্ষা করে ঐশীর মধ্যেও সেই সমস্যা পাওয়া গেছে।
তিন. ঘটনার সময়টি ছিল ঐশীর সাবালকত্ব পাওয়ার মুহূর্ত। তখন তার বয়স ছিল ১৯ বছর।
চার. ওই হত্যাকাণ্ডের আগে ঐশী ফৌজদারি অপরাধ করেছেন, এমন কোনো নজির নেই।
পাঁচ. বাবা-মাকে হত্যার পর ঐশী পালিয়ে না গিয়ে স্বেচ্ছায় থানায় আত্মসমর্পণ করেন।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে, বাস্তবতা ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিচার করে হাই কোর্ট ঐশীর সাজা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
পরে রাষ্ট্রপক্ষ ও ঐশী আপিল বিভাগে আবেদনে করে। সে আবেদনের শুনানি করেই সোমবার এ আদেশ দিল সর্বোচ্চ আদালত।
আরও পড়ুন