ক্যাটাগরি

কিশোর বয়সে শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে সচেতন করতে

আর এসময়ই অন্যরা তাকে নিয়ে কী ভাবছে,
কেমন চোখে দেখছে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে চিন্তা আসে। আত্মনির্ভরতা নিয়ে ভাবনা দেখা দিতে
শুরু করে, শুরু হয় নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়া।

শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে ভাবনা, আশপাশের
মানুষের সে বিষয়ে মন্তব্য ইত্যাদি নেতিবাচক বিষয়ে তৈরি হওয়া সচেতনতা এই বয়সে ছেলেমেয়েদের
একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

কে মোটা, কে রুগ্ন, কার গালে ব্রণ বেশি,
কার দাড়ি গোঁফ আগে দেখা দিয়েছে, কে বেশি খায় এই বিষয়গুলো নিয়ে বন্ধুমহলে চলে নানান
মন্তব্য, কৌতুক।

অভিভাবকদের কাছে বিষয়গুলো নিছক কৌতুক
মনে হলেও এখান থেকেই আপনার সন্তানের মনে সৃষ্টি হয় শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে নেতিবাচক
ধারণা।  

বিষয়টা কেনো গুরুত্বপূর্ণ

মানসিক স্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিভিন্ন পরিসংখ্যানের তথ্য তুলে ধরে জানায়, অধিকাংশ ‘ইটিং ডিজওর্ডার’য়ের
সুত্রপাত হয় বয়ঃসন্ধিকাল বা ‘টিনএজ’ বয়সে।

পাশাপাশি প্রায় ৬০ শতাংশ মেয়েরা এই বয়সে
শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে অতিরিক্ত সচেতন হয়ে ওঠে। সৌন্দর্যের প্রচলিত সঙ্গায় যারা সুন্দর
তারা যেমন অহংকারী হতে পারে, তেমনি যারা সেই সঙ্গায় অসুন্দর তারা শিকার হয় কৌতুকরূপি
নেতিবাচক মন্তব্যের।

এতে একদল আক্রমনাত্মক হতে থাকে আর অপরদল
কোণঠাঁসা হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে।

আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর ছবি ‘এডিটিং’য়ের
এই যুগে যখন পরিণত বয়সের অনেকেই রূপের প্র্রতিযোগিতায় মত্ত, সেখানে সদ্য নিজের চেহারা
ভালো না-কি খারাপ তা বুঝতে শেখা ছেলেমেয়েগুলো প্রচণ্ড মানসিক চাপে পড়ে যায়।

ফলে সমাজের চোখে সুন্দর হতে গিয়ে তারা
ধাবিত হয় অস্বাস্থ্যকর সিদ্ধান্তের দিকে।

খাদ্যাভ্যাসের মূল বিষয় হয় শারীরিক সৌন্দর্য,
সুস্বাস্থ্য নিয়ে ভাবার তাদের অবকাশ নেই। আর সুন্দর হওয়ার সেই প্রতিযোগিতায় তাদের মানসিক
বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দেয়।

এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের উচিত হবে
সন্তানের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর দেওয়া। আশপাশের মানুষের ‘বডি শেইমিং’কে শিশুদের কাজ বলে
অবহেলা না করে সন্তানের ওপর কী প্রভাব পড়ছে সেদিকে মনযোগ দেওয়া। শারীরিক সৌন্দর্যই
একটা মানুষের পরিচয় নয় এই শিক্ষা আসতে হবে পরিবার থেকেই।

আলোচনা

বয়ঃসন্ধিকালে প্রতিটি মানুষের শারীরিক
পরিবর্তন হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে পরিবর্তণগুলো অনেক বেশি লক্ষ্যণীয় হওয়ায় তারাই বেশি
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয় এই বিষয়ে।

এই পরিবর্তনগুলো স্বাভাবিক হলেও সেই পরিবর্তনগুলো
সম্পর্কে সন্তানকে বুঝিয়ে বলার দায়িত্ব বাবা-মায়ের। পরিবর্তনগুলোকে স্বাগত জানানোর
শিক্ষা বাবা-মাই দিতে পারেন।

এসময় ওজন কমা কিংবা বেড়ে যাওয়া, শরীরের
বিভিন্ন স্থানে চুল গজানো, গলার স্বর পরিবর্তন, শারীরিক গড়নে পরিবর্তন, হরমোনের তারতম্য-
এসব কিছুর সঙ্গে পরিচিত করাতে হবে। সেই সঙ্গে শেখাতে হবে এই বিষয়গুলো নিয়ে কাউকে হাসির
ছলে অপমান না করার গুরুত্ব এবং ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে।

আর কেউ যদি তা করে, তবে তা কীভাবে এড়াতে
হবে সেই শিক্ষাও দিতে হবে।

ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্কতা

প্রযুক্তির কল্যাণে দুনিয়া হাতের মুঠোয়
আসায় অনেক নেতিবাচক বিষয়ও এখন আপনার সন্তানের হাতের মুঠোয়।

তারকাদের ছবি, বিজ্ঞাপন, মানুষের মন্তব্য,
সৌন্দর্যের প্রচলিত ধারণা আপনার সন্তান দেখছে এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে। আর সেই রূপ পাওয়ার
জন্য মানুষ কতকিছু করছে সেটাও সে দেখছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের
রূপের প্রতিযোগিতা এবং তাতে মানুষের মন্তব্য তার চোখে পড়ছে। সেটাতে গা ভাসিয়ে আপনার
সন্তানও নিজের রূপ হয়ত উপস্থাপন করছে, যেখানে আসছে মানুষের নানান মন্তব্য।

অল্পবয়সে এতকিছুর সংস্পর্শে আসা আপনার
সন্তানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই ইন্টারনেটের ভয়ঙ্কর রঙিন দুনিয়ায় আপনার সন্তানের
বিচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে আপনাকেই।  

সুস্বাস্থ্যই প্রকৃত সৌন্দর্য সেটা শেখাতে হবে

স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাই মানুষকে সুন্দর
করে। আর সেটাই সৌন্দর্যের প্রাকৃতিক উপায়। তবে সেই সৌন্দর্য স্বল্প সময়ে পেতে গিয়ে
মানুষ বেছে নেয় অপ্রাকৃতিক ও অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতি।

তাই সন্তানের সুস্থতার জন্য বাবা-মায়ের
উচিত সন্তানকে ছোট থেকেই স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার প্রতি আগ্রহী করে তোলা। স্বাস্থ্যকর
খাদ্যাভ্যাস আর নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যম কীভাবে সুন্দর শরীর গড়তে হয় সেটা শেখাতে হবে,
সঙ্গে জানাতে হতে কৃত্রিম উপায়ে শরীর কেটে সৌন্দর্য সৃষ্টির ভয়াল পরিণতি সম্পর্কে।

অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার শিক্ষা

নিজের শরীরকে যেমন ভালোবাসতে শেখাতে হবে
তেমন মোটা, চিকন, ফর্সা, কালো সবধরনের শরীরের মানুষকেও ভালোবাসতে শেখাতে হবে, সম্মান
করতে শেখাতে হবে।

মানুষকে মূল্যায়ন করার মাপকাঠি তার শরীর
নয়, তার চরিত্র, মন-মানসিকতা সেই শিক্ষা দিতে হবে।

সৌন্দর্যের প্রচলিত সঙ্গায় না মিললেও
যে একটি মানুষ তা নিজের মতো সুন্দর হতে পারে সেটা সন্তানকে বোঝাতে হবে।

বাবা-মায়েরও শেখার আছে অনেক কিছু

আপনার সন্তানকে সব ধরনের শরীরের মানুষকে
সম্মান করা শেখানোর আগে বাবা-মায়ের নিজেদের শরীরকে সম্মান করা শিখতে হবে।

প্রশ্ন করতে হবে আপনি নিজে পারেন তো সব
ধরনের শরীরকে সম্মান করতে, মেনে নিতে?

কারণ বাবা-মা হিসেবে সন্তানকে আপনি যা
শেখাবেন তার চাইতে আপনার নিজের আচরণ কয়েকগুণ বেশি প্রভাব ফেলবে সন্তানের ওপর।

তাই আপনি নিজে যদি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
মেনে চলেন, নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, সৌন্দর্যের পিছে না ছুটে সুস্বাস্থ্যের জন্য পরিশ্রম
করেন, তবেই আপনার সন্তান প্রকৃত শিক্ষা পাবে।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন

বয়ঃসন্ধির বেড়াজাল
 

সম্পর্ক নিয়ে সন্তানের সঙ্গে আলাপ
 

সন্তানের সঙ্গে ঋতুস্রাব নিয়ে আলোচনা করতে
 

সন্তানের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ের আলাপ
 

সন্তানকে শেখাতে হবে ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার
 

অশালীন স্পর্শ নিয়ে আলোচনায় দেরি নয়