ক্যাটাগরি

ব্রাভোর সেঞ্চুরিতে আড়াল হাসারাঙ্গার কীর্তি

তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় ৫ উইকেটে। ওয়ানডেতে এই প্রথম লঙ্কানদের হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পেল ক্যারিবিয়ানরা।

অ্যান্টিগায় রোববার শ্রীলঙ্কা ৫০ ওভারে তোলে ৬ উইকেটে ২৭৪ রান। আটে নেমে হাসারাঙ্গা খেলেন লঙ্কান রেকর্ড ৬০ বলে ৮০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।

রান তাড়ায় ক্যারিবিয়ানরা জিতে যায় ৯ বল বাকি রেখে। আগের ম্যাচেই গড়া লঙ্কানদের বিপক্ষে তাদের রান তাড়ার রেকর্ডও এগিয়ে যায় আরেকধাপ।

ব্রাভোর ব্যাট থেকে আসে ১৩২ বলে ১০২, তার চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরি। এবারের আগে সবশেষটি ছিল সেই ২০১৬ সালের জুনে!

স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামের উইকেট ছিল ব্যাটিং সহায়ক। রান তাড়ায় যথারীতি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভরসা দিয়ে এগিয়ে নেন হোপ।

আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এভিন লুইস এ দিন ফেরেন ১৩ রানে। তিনে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে ব্যর্থ জেসন মোহাম্মদ (৮)। তৃতীয় উইকেটে হোপ ও ব্রাভোর শতরানের জুটিতে পথে ফেরে দলের ইনিংস।

১০৯ রানের এই জুটি ভাঙে হোপের বিদায়ে। ততক্ষণে তার নামের পাশে ৬২ রান। টানা ৬ ইনিংসে ফিফটি ছুঁয়ে এই ওপেনার স্পর্শ করলেন গর্ডন গ্রিনিজ ও ক্রিস গেইলের ক্যারিবিয়ান রেকর্ড। বিশ্বরেকর্ডে তার ওপরে আছেন কেবল জাভেদ মিয়াঁদাদ (টানা ৯ ইনিংস)।

শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশ করতে পারল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ছবি : উইন্ডিজ ক্রিকেট।

শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশ করতে পারল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ছবি : উইন্ডিজ ক্রিকেট।

এরপর নিকেলাস পুরান বিদায় নেন ২ ছক্কায় ১৫ করে। পঞ্চম উইকেটে ব্রাভো ও পোলার্ডের ৭১ বলে ৮০ রানের জুটি দলকে নিয়ে যায় জয়ের কাছাকাছি।

ব্রাভোর ফিফটি ছুঁতে লাগে ৮১ বল। পরের পঞ্চাশ করেন ৪৯ বলেই।

৫ চার ও ৪ ছক্কায় ১০২ করে ব্রাভো আউট হন লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নের দুর্দান্ত ডাইভিং ক্যাচে।

তবে ক্যারিবিয়ানদের জিততে সমস্যা হয়নি। ছক্কায় ফিফটি ছুঁয়ে পোলার্ড অপরাজিত থাকেন ৪২ বলে ৫৩ রান করে। টানা দুই বলে বাউন্ডারি ও বিশাল এক ছক্কায় ম্যাচ শেষ করেন জেসন হোল্ডার।

ম্যাচের প্রথম ভাগে লঙ্কানদের ইনিংসের শেষ ভাগেও ছিল এমন চার-ছক্কার মেলা। নড়বড়ে দলকে শেষের ঝড়ে লড়ার রান এনে দেন হাসারাঙ্গা ও আশেন বান্দারা।

তাদের শুরুটাও খারাপ ছিল না। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দলকে ৬৭ রানের উদ্বোধনী জুটি এনে দেন করুনারত্নে ও দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দানুশকা গুনাথিলাকা।

৬ চারে ৩৬ করে গুনাথিলাকার বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। পরের ওভারেই করুনারত্নে আউট হন ৩১ রান করে।

ক্যারিবিয়ানদের অভিষিক্ত পেসার অ্যান্ডারসন ফিলিপ কোনো প্রভাব রাখতে পারেননি। তবে দারুণ বোলিংয়ে লঙ্কান মিডল অর্ডার দাঁড়াতে দেননি আকিল হোসেন। এই বাঁহাতি স্পিনার ফিরিয়ে দেন পাথুম নিসানকা, দাসুন শানাকা ও দিনেশ চান্দিমালকে।

অভিজ্ঞ থিসারা পেরেরাও যখন ফেরেন রান আউটে, ১৫১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে শ্রীলঙ্কা।

আশেন বান্দারা ও ভানিদু হাসারাঙ্গার জুটি লঙ্কানদের এনে দিয়েছিল লড়ার পুঁজি। ছবি : শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট।

আশেন বান্দারা ও ভানিদু হাসারাঙ্গার জুটি লঙ্কানদের এনে দিয়েছিল লড়ার পুঁজি। ছবি : শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট।

বান্দারা ও হাসারাঙ্গার দুর্দান্ত জুটি সেখান থেকেই। বান্দারা এক প্রান্ত আগলে রাখেন, হাসারাঙ্গা সহজাত ব্যাটিংয়ে বাড়াতে থাকেন রান। শেষ দিকে দুজনই তোলেন ঝড়।

এই সিরিজেই অভিষিক্ত বান্দারার রান এক পর্যায়ে ছিল ৬১ বলে ৩১। সেখান থেকে তিনি অপরাজিত থাকেন ৭৪ বলে ৫৫ রান করে।

হাসারাঙ্গা প্রথম ওয়ানডে ফিফটি স্পর্শ করেন ৪৮ বলে। পরের ১২ বলে করেন ৩০! ইনিংসের শেষ ওভারে হোল্ডারকে মারেন টানা তিন চার ও এক ছক্কা। অপরাজিত থেকে যান ৭ চার ও ৩ ছক্কায় খেলেন ৮০ করে।

দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ১১১ বলে ১২৩ রান। শেষ ৬ ওভারেই ৭৩ রান। কিন্তু ছন্দে থাকা ক্যারিবিয়ানদের সামনে শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হয়নি তা।

দুই দল এখন অ্যান্টিগাতেই খেলবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। প্রথমটি শুরু আগামী রোববার থেকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা : ৫০ ওভারে ২৭৪/৬ (গুনাথিলাকা ৩৬, করুনারত্নে ৩১, নিসানকা ২৪, চান্দিমাল ১৬, শানাকা ২২, বান্দারা ৫৫*, থিসারা ৩, হাসারাঙ্গা ৮০*; হোল্ডার ৬-০-৫৩-০, জোসেফ ১০-০-৫১-১, জেসন ১০-০-৪৯-১, ফিলিপ ৬-০-৪৩-০, আকিল ১০-০-৩৩-৩, অ্যালেন ৮-০-৪৩-০)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৪৮.৩ ওভারে ২৭৬/৫ (লুইস ১৩, হোপ ৬৪, জেসন ৮, ব্রাভো ১০২, পুরান ১৫, পোলার্ড ৫৩*, হোল্ডার ১৪*; লাকমল ৯.৩-১-৫৬-২, আসিথা ৮-০-৬২-০, হাসারাঙ্গা ১০-০-৪৯-১, থিসারা ৫-০-২৭-১, গুনাথিলাকা ৬-০-২৮-১, সান্দাক্যান ১০-২-৫২-০)।

ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ : ৩ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ : ড্যারেন ব্রাভো।

ম্যান অব দা সিরিজ : শেই হোপ।