মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের ডিজিটাল বেতন ব্যবস্থা: অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে চারজন উদ্যোক্তা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
২০২০ সালে কভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে বেতন দিতে কারখানা মালিকদের পরামর্শ দেয় সরকার। সেই সময় বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা নিয়ে পোশাক কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে বিকাশ।
এদিন সেই অভিজ্ঞতার কথা জানান বিকাশের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মিজানুর রশীদ, নিউএজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ ইব্রাহীম, অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক খান, এজে গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, নিউ এশিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির শরীফ।
বিজিএমইএর পরিচালক ও অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক খান বলেন, বিকাশের মাধ্যমে পোশাক কারখানার বেতন বিতরণের ঝামেলা একেবারেই শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারণ ও নারীর ক্ষমতায়নে এই পদ্ধতি বিরাট সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। নারীরা এখন নিজের উপার্জন নিজের ইচ্ছে মতো খরচ করতে পারছেন।
“মহামারীকালে একটি মাস শ্রমিকরা বাড়িতে বসে ছিল। এই সময়ে তাদের বেতন পাওয়ার সময় হলেও চলাচলে কড়াকড়ি ছিল। কিন্তু বিকাশের মাধ্যমে তারা বাড়িতে বসেই বেতন পেয়ে গেলেন। তা নাহলে এই বেতনের জন্য শ্রমিকদেরকে শত শত মাইল পাড়ি দিতে হতো।”
অগাস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস থেকে অনন্ত গ্রুপের ১২ হাজার কর্মীর বেতন বিকাশে যাওয়া শুরু হয়েছে বলে জানান বিজিএমইএর এই নেতা।
“বিজিএমইএতে শ্রমিক সংক্রান্ত যেই ঝামেলাগুলো আসে, তার অধিকাংশই বেতন সংক্রান্ত। এখন সেখানেও সমস্যা অর্ধেক কমে যাবে।”
এজে গ্রুপের আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, একমাসের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার দিনটিই ছিল, তার জন্য সবচেয়ে কঠিন দিন। বেতন দেওয়ার তিন দিন আগ থেকেই টেনশন শুরু হয়ে যেতো। টাকা কীভাবে ব্যাংকে যাবে, কীভাবে বিতরণ হবে এসব নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ ছিল না।
নিউ এশিয়া গ্রুপের আমির শরীফ বলেন, আগে বেতন দেওয়ার পর দিনই অনেক শ্রমিককে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পাওয়া যেতো। টাকা পয়সা ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য কাজের জন্য বেতন পাওয়ার পরের দিন তাদের অনেকেই অনুপস্থিত থাকতেন। এখন সেই সমস্যা কেটে গেছে। ফোনেই এদিক সেদিক টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন শ্রমিকরা।
নিউএজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ ইব্রাহীম সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য বিকাশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “ডিজিটাল এই পদ্ধতির কারণে মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষই বিভিন্ন দিক থেকে লাভবান হয়েছে। বিভিন্ন ডকুমেন্টেশনের সমস্যা থাকার কারণে অনেক সময় একাউন্ট ফ্রিজ হয়ে যাচ্ছে। আবার কোনো কারণে কোনো শ্রমিকের ফোন নাম্বার পরিবর্তন হলে তার বিকাশ নাম্বারও পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এই সমস্যাগুলো আমরা দ্রুত সমাধান চাই।”
মাহামারীর শুরুতে সরকার মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন বাবদ প্রণোদনার ঋণ বিতরণ করে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে ১১ লাখ শ্রমিক বিকাশের মধ্যে যুক্ত হয়। অবশ্য পরে আবার তা সাড়ে সাত লাখে নেমে আসে।
প্রতিবেশি দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অন্যান্য মোবাইল ফিনান্সিয়াল সেবায় পিছিয়ে রয়েছে উল্লেখ করে বিকাশের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মিজানুর রশীদ বলেন, “ভারতে ৯৫ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৮৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৮৪ শতাংশ এবং চীনে ৭৮ শতাংশ শ্রমিক ডিজিটাল বিতরণ ব্যবস্থায় বেতন পান। আর বাংলাদেশে এই হার ৪০ শতাংশ। তাই আমাদের পক্ষে আরও বেশি প্রযুক্তির কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।”
অনুষ্ঠানে জানান হয়, কোভিডকালীন প্রণোদনা বিতরণে ৯৮০টি কারখানায় প্রায় ১১ লাখ শ্রমিক প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেতন ভাতা পেয়েছেন তাদের বিকাশ একাউন্টে। কভিড পরিস্থিতি শুরু হওয়ার আগে প্রায় ৪ লাখ শ্রমিক বিকাশের মাধ্যমে তাদের বেতন ভাতা পেতেন। সরকারি ঋণ প্রণোদনা বিতরণ করতে গিয়ে তা বহুগুণে বেড়ে যায়।
“তবে সেটা আবার কমে গেছে। বর্তমানে বিকাশ প্রায় সাড়ে সাত লাখ শ্রমিকের বেতন বিতরণ করছে। ”
সানেমের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত এপ্রিল, মে জুন মাসে প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন পোশাককর্মী বেতন পেয়েছেন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে। কেবল ক্যাশআউট সেবা নয়; সেন্ড মানি, মোবাইল রিচার্জ, পেইমেন্ট এসব সেবাও নিয়েছেন শ্রমিকরা।
বিকাশ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মার্চেন্ট রিটেইল অ্যাকাউন্টের অনুমোদন দিয়েছে। এটা বিশেষ ধরনের মার্চেন্ট একাউন্ট। এটা ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করবে। গ্রাহকরা তার দৈনন্দিন খরচে আরও বড় পরিসরে বিকাশের সহযোগিতা নিতে পারবেন। এর ফলে একজন সাধারণ ফল বিক্রেতাও বিকাশের মাধ্যমে ক্রেতার কাছ থেকে পণ্যমূল্য বুঝে নিতে পারবেন।
এছাড়া সিটি ব্যাংকের একটি জামানতবিহীন ঋণের প্রকল্পে যুক্ত হতে পারবেন বিকাশ গ্রাহকরা।
ব্র্যাক ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানি ইন মোশন, বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন-আইএফসি, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং অ্যান্ট ফিনান্সিয়ালের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বিকাশ।
২০১১ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস দিয়ে আসছে।