মঙ্গলবার ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে নির্বাচনের ইশতিহার ঘোষণার সময় প্রতিশ্রুতি ও পরিকল্পনা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।
মহামারীকে কেন্দ্র করে সরকার ১৮ মাসের কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য যে প্রণোদনা পোশাক মালিকদের দিয়েছেন নির্বাচিত হতে পারলে তা ১৮ মাস থেকে বাড়ানোর চেষ্টা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন ফারুক।
পাশাপাশি নতুন বাজার সৃষ্টি, ইউরোপ, আমেরিকার বাজারে আরও বেশি শুল্কমুক্ত সুবিধা লাভ, দূতাবাসগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং ছোট ছোট শিল্পকে সামনে এগিয়ে নিতে নয় পৃষ্ঠার বিশদ পরিকল্পনা হাজির করে সম্মিলিত পরিষদ।
‘অর্জনে আপোষহীন, সংকটে সহযোদ্ধা’ এমন স্লোগান নিয়ে এবারের নির্বাচনে প্রচারণা চালাচ্ছে সম্মিলিত পরিষদ। তাদের বিপরীতে রয়েছে বর্তমান সভাপতি রুবানা হকের প্যানেল।
নিজের প্যানেলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ফারুক বলেন, “প্যানেলে যারা আছেন তাদের অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা আছে। কিছু লোক আছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে বিজিএমইএতে সময় দিয়েছেন, এই প্রতিষ্ঠানের কাজগুলো বোঝেন। আরেকটা গ্রুপ হলো- যারা ব্যবসায় অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তারা বিজিএমইএতে সময় দিলে ব্যবসার অভিজ্ঞতাটা সাধারণ সদস্যরা নিতে পারবেন। আরেকটা গ্রুপ আছে যারা দেশে বিদেশে পড়াশোনা করে এখন ব্যবসায় সময় দিচ্ছে। সেকেন্ড জেনারেশন তারা। তিন টিমের কম্বিনেশনের আমাদের প্যানেল।
“এর সঙ্গে রয়েছে আমাদের সাবেক সভাপতিরা। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমাদের লোক আছেন। আমারও অনেক বন্ধু আছে সরকারের সচিব পর্যায়ে, রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে। সবার সহযোগিতা নিয়ে আমরা কাজগুলো ভালোভাবে করতে পারবো।”
দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন পর্যায়ে নিজের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সম্মিলিত পরিষদের এই প্রধান নেতা।
“ইউএসএতে ডিউটি ফ্রি সুবিধা নিয়ে আমরা কথা বলব। এই মুহূর্তে ইউএসএতে যে আছেন, সে আমার ছোটবেলার বন্ধু। এই মুহূর্তে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সে আমার ক্লাসমেট। ফ্রান্সের এম্বাসেডার আমার বন্ধু। আমি নিজেও ঢাকায় ইউরোপের একটা দেশের অ্যাম্বেসেডার (গ্রিস) হিসাবে কাজ করছি। কূটনীতিকদের সঙ্গে আমার ভালো যোগাযোগ রয়েছে। সবগুলো কম্বিনেশনে আমরা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করব।”
পূর্ববর্তী নেতৃত্বের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমরা খোলা চিঠি দিয়ে কাউকে বিড়ম্বনায় ফেলতে চাই না। মেম্বাররা যাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করবেন তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করব।”
ইশতেহার ঘোষণার দিনেও নির্বাচনে ভোটগ্রহণের স্থান নিয়ে চলমান বিতর্কের বিষয়টি উঠে আসে শক্তভাবে।
প্যানেলের সমন্বয়ক আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, “১৯৮০ সালে ফকিরাপুলে বিজিএমইএর প্রথম অফিসেই কিন্তু নির্বাচনটা হয়েছিল। বিগত অন্যান্য নির্বাচনগুলোও বিজিএমইএর কার্যালয়ে হতো। এটা বিজিএমইএর ট্রেডিশন। নমিনেশনগুলোও কিন্তু বিজিএমইএ কার্যালয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তাই এই বিল্ডিংকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাবো। সেখানে নির্বাচন করতে কিসের এতো ভয়?”
বিদায়ী নেতৃত্বের গুলশানে অফিস বসানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সালাম মুর্শেদী বলেন, “নিজের মাটি বাদ দিয়ে গুলশানে ১৮/২০ লাখ টাকা খরচ করে একটা অফিস ভাড়া নেওয়া হয়েছে। উত্তরার অফিস যদি অনিরাপদ হতো তাহলে বর্তমান পর্ষদ কেন সেখানে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন?”
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, মেয়র আতিকুল ইসলাম, এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সাবেক ফুটবল তারকা আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সাবেক সভাপতি এসএম ফজলুল হক, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জমান, কুতুবুদ্দিন আহমেদ, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেদোয়ান আহমেদকে সম্মিলিত পরিষদের পূর্বসূরি হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
সম্মিলিত পরিষদের ইশতিহারের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ:
>> নতুন বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেওয়া হবে। নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানির জন্যে প্রণোদনা ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ উন্নীত করা হবে।
>> বিভিন্ন দেশ যেমন দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, রাশিয়া ল্যাটিন আমেরিকা, ভারতসহ সম্ভাবনাময় নতুন বাজার গুলোতে রোড শো আয়োজন এবং গুরুত্বপূর্ণ মেলাগুলোতে বিজিএমইএ সদস্যদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
>> মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় পোশাকের শুল্কমুক্ত রপ্তানি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা।
>> বিজিএমইএ ও কাস্টমস বন্ড এর যৌথ কমিটি গঠন করে সমস্যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা।
>> পাশাপাশি কাস্টম সংক্রান্ত সব হয়রানি বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে সেল গঠন করা হবে।
>> আমদানি ও রপ্তানির অডিট কার্যক্রমে অটোমেশন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
>> স্যাম্পল ক্লিয়ারিং এর জটিলতা নিরসন পদ্ধতির ব্যবহার, এক্সপোর্ট প্রক্রিয়া সহজীকরণ, আমদানি ও রপ্তানির অটোমেশনসহ এইচএস কোড হালনাগাদ উন্নীতকরণ করা হবে।
>> সরকারের সাথে এফবিসিসিআই, বিকেএমইএসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনের সমন্বয়ে সফল আলোচনার মাধ্যমে একটি বাস্তবসম্মত কমিটি করে কাজ করা হবে। তাছাড়া মালিক কল্যাণ তহবিল গঠন করা হবে।
>> ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন কাজ করা হবে।
>> সরকারি ফাইন্যান্সিং স্কিমের আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাকশিল্পের উপযুক্ত সংজ্ঞায়ন ও অন্তর্ভুক্তকরণ যার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাকশিল্প ৪ থেকে ৫ শতাংশ সুদ হারে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।