বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন
আয়োজনের মাধ্যমে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে স্মরণ ও
শ্রদ্ধা জানাচ্ছে চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো।
রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির
অংশ হিসেবে সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম আদালত ভবন চত্বরে তোপধ্বনির মাধ্যমে
শুরু হয় জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন।

এরপর চট্টগ্রাম জেলা
শিল্পকলা একাডেমিতে জাতির পিতার মুর্যালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রামের বিভাগীয়
কমিশনার এবিএম আজাদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার
সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমান, চট্টগ্রামের পুলিশ
সুপার এসএম রশিদুল হক।
অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা
সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি।
চট্টগ্রাম সেনানিবাসে
জাতির জনকের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। যেখানে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের
বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

সকালে সেনানিবাসের
নিসর্গ চত্বর থেকে শুরু হওয়া এ শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি
মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদীন।
সকালে প্রেস ক্লাবে
বঙ্গবন্ধুর মুর্যালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রেস ক্লাব ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের
(সিইউজে) নেতারা। আলোচনা সভা ও কেক কাটা হয়।
দিনটি উপলক্ষে নগরীর
বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে
জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। করা হয়েছে আলোকসজ্জা।
রাজনৈতিক দল ও সংগঠন
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী
উপলক্ষে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে নগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায়
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান দূরদ্রষ্টা
রাজনীতিক। তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই বুঝেছিলেন স্বাধীন ভূ-খণ্ড ছাড়া বাঙালির
অধিকার আদায় ও পরিপূর্ণ মুক্তি সম্ভব নয়।

“যেদিন তিনি লাহোরে
বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক কনভেনশনে ৬ দফা উত্থাপন করেন সেদিনই পাকিস্তানী শাষক গোষ্ঠী বুঝেছিল
বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। কৌশলী পদক্ষেপে তিনি ৭ মার্চ ডাক দেন- ‘এবারের সংগ্রাম
মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মই বাংলাদেশের
জন্য।”
নগর কমিটির সাধারণ
সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের স্থপতি বা জাতির পিতাই
নন, তিনি তৃতীয় বিশ্বের ভাগ্যাহত অধিকার বঞ্চিত, শোষিত মানুষের মুক্তির মহানায়ক। বঙ্গবন্ধু
ব্যক্তি নন, একটি আদর্শ।
নগর কমিটির প্রচার
সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি
নঈম উদ্দীন চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ,
চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মশিউর রহমান চৌধুরী, আবু তাহের প্রমুখ।
সভা শেষে বর্ণাঢ্য
শোভাযাত্রা বের হয়। এছাড়া সকালে দারুল ফজল মার্কেটস্থ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় দলীয় পতাকা
উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ
সম্প্রচার এবং বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী
উদযাপন উপলক্ষে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম চত্বরে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
ও শিশু উৎসবের আয়োজন করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)।
অনুষ্ঠানের প্রধান
অতিথি সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নয় বিশ্বের
মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি যুগে যুগে স্বাধীনতার নিরন্তর আইকন এবং ক্যারিশমাটিক
নেতা। বঙ্গবন্ধুর জম্মদিন আমাদের ইতিহাস। আমাদের স্বপ্নের সৌরভ।”
বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মবার্ষিকীতে
কেক কাটা ও বেলুনেউড়ানো হয়। বঙ্গবন্ধুর আদলে পোশাক ও সজ্জিত হয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত
হয় একশ শিশু।
জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী
উদযাপনে সিসিসি জেনারেল হাসপাতালে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পও করা হয়।
এছাড়া সিসিসির আয়োজনে
অস্থায়ী নগর ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন, এতিমদের বস্ত্র
ও খাবার বিতরণ এবং বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা হয়।

সিটি করপোরেশনের সাবেক
মেয়র এম মনজুর আলমের উদ্যোগে উত্তর কাট্টলী মোস্তফা হাকিম কলেজে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী
পালন করা হয়।
সেখানে এম মনজুর আলম
বলেন, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। বঙ্গবন্ধুর
জন্ম হয়েছিল বলে আজ আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু
এবং উনার অবদান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাই।”
মুক্তিযুদ্ধের বিজয়
মেলা পরিষদ সংগঠনের কার্যালয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের
উপস্থিতিতে কেক কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন করে।
চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা
একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ
চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগর
কমিটির নেতারা।
সরকারি-বেরসকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও সংগঠন
চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও নানা আয়োজনে জাতির পিতার জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস পালন
করা হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
(চবি) ক্যাম্পাসে সকালে বঙ্গবন্ধু চত্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা
জানান উপাচার্য শিরীণ আখতার।
আলোচনা সভায় চবি উপাচার্য
শিরীণ আখতার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাঙালি জাতির পথ প্রদর্শক,
মহান স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি মা, মাটি ও মানুষকে ভালোবাসতেন বলেই নিজের জীবন
উৎসর্গ করে বাঙালি জাতিকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত
রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের
পরিচালক প্রণব মিত্র চৌধুরী এবং প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া।
সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীতে
চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে মুখ্য আলোচক
উপাচার্য অধ্যাপক ইসমাইল খান বলেন, বঙ্গবন্ধু নৈতিকতা ও দেশপ্রেমের যে আদর্শের সাক্ষর
রেখে গেছেন তা অনুসরুণ করতে পারলেই জাতির পিতাকে যথার্থ শ্রদ্ধা জানানো হবে।
সহযোগী অধ্যাপক মামুনুর
রশীদের পরিচালনায় আলোচনায় অংশ নেন বিআইটিআইডির পরিচালক অধ্যাপক এম এ হাসান, চট্টগ্রাম
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দেলোয়ার হোসেন, পরিচালক (অর্থ) মাসুদুর
রহমান, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার হাসিনা নাসরিন, উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) বিদ্যুৎ বড়ুয়া, বিআইটিআইডির উপ-পরিচালক
বখতিয়ার আলম প্রমুখ।

চট্টগ্রামের বেসরকারি
ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটিতে (ইডিইউ) আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক
মু. সিকান্দার খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন বাঙালির ইতিহাসের মাহেন্দ্রক্ষণ। হাজার
বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসার স্বপ্ন তিনি নিজে দেখেছেন এবং সেই দুঃসাহসিক
স্বপ্ন বাঙালি জাতির মধ্যে সঞ্চার করেছিলেন।
ইডিইউ ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর
প্রতিকৃতিকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপন করা
হয়।
বেসরকারি চিটাগাং ইন্ডিপেন্ডেন্ট
ইউনিভার্সিটি (সিআইইউ) আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাহফুজুল
হক চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছিল সম্মোহনী শক্তি, সাহস, সততা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা-
তাই ইতিহাসের পাতায় তিনি অক্ষয় থাকবেন অনন্তকাল।
বেসরকারি ইম্পেরিয়াল
হাসপাতালে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের আলোচনা সভায় আইএইচএল এর চেয়ারম্যান
ও সিইআইটিসি এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক রবিউল হোসেন এবং স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক রোকেয়া বেগম বক্তব্য রাখেন।
সামাজিক সংগঠন অরিজিন
ফাউন্ডেশন নগরীর জে এম সেন হলে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি শিশু কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার
আয়োজন করে।
এদিকে রাতে এম এ আজিজ
স্টেডিয়ামে আতশবাজি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি রাখা হয়েছে।