আলফ্রেদো দি স্তেফানো স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে ৩-১
গোলে জিতে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল জিনেদিন জিদানের দল। প্রথম দেখায়
ইতালিয়ান ক্লাবটির মাঠে ১-০ গোলে জিতেছিল তারা।
প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন, খেলতে হবে আক্রমণাত্মক-এমন ফুটবল দর্শনেই পরিচিত
হয়ে উঠেছে আতালান্তা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে প্রতিযোগিতার রেকর্ড চ্যাম্পিয়নদের
বিপক্ষে সেই কৌশলে সুবিধা করতে পারল না গত আসরে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠে চমকে দেওয়া দলটি।
করিম বেনজেমার গোলে রিয়াল এগিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান বাড়ান
সের্হিও রামোস। শেষ দিকে লুইস মুরিয়েল ব্যবধান কমানোর পর রিয়ালের তৃতীয় গোলটি করেন
মার্কো আসেনসিও।
সেরি আয় ২৭ রাউন্ডে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৩ গোল করা দলটি এবারের বাঁচা-মরার
লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে পারতো দ্বিতীয় মিনিটেই। তবে ছয় গজ বক্সের মুখে বল পেয়ে ঠিকমতো শট
নিতে পারেননি রবিন গোসেন্স।
আক্রমণের শুরুর ঝাপটা সামলে ধীরে ধীরে পাল্টা আক্রমণে উঠতে শুরু করে রিয়াল।
তবে প্রতিপক্ষের জমাট রক্ষণ ভাঙতে পারছিল না তারা। ২৭তম মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় স্বাগতিকরা;
কিন্তু ডি-বক্সে বেনজেমার কাটব্যাক ভিনিসিউস জুনিয়র ফাঁকায় পেয়েও প্রথম প্রচেষ্টায়
শট নিতে ব্যর্থ হওয়ায় হতাশ হতে হয়।
প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের ভুলের সুযোগে ৩৪তম মিনিটে এগিয়ে যায় রিয়াল। সতীর্থের
ব্যাকপাস পেয়ে মার্কো স্পোর্তিয়েল্লো সরাসরি তুলে দেন সামনে লুকা মদ্রিচের পায়ে। ক্রোয়াট
এই মিডফিল্ডার দ্রুত ডি-বক্সে ঢুকে বাঁয়ে ফাঁকায় বেনজেমাকে খুঁজে নেন। আর ডান পায়ের
নিচু শটে বল জালে পাঠান তিনি।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচে গোল পেলেন বেনজেমা। চোট
কাটিয়ে গত সপ্তাহে লা লিগায় আতলেতিকো মাদ্রিদের
বিপক্ষে ম্যাচে ফিরে শেষ সময়ে গোল করে হার এড়ান ফরাসি ফরোয়ার্ড। এরপর গত শনিবার লিগে তার জোড়া গোলেই এলচেকে ২-১ ব্যবধানে হারায়
রিয়াল।
ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতায় বেনজেমার গোল হলো ৭০টি। আর একটি করলেই উঠে বসবেন
সাবেক রেকর্ড গোলদাতা ও বর্তমানে তালিকার চতুর্থ স্থানে থাকা রাউল গনসালেসের পাশে।
দ্বিতীয়ার্ধের সপ্তম মিনিটে দারুণ একটি গোল হতে পারতো ভিনিসিউসের। নিজেদের
ডি-বক্সের বাইরে থেকে বল ধরে ছোটার পথে সতীর্থকে পাস দিয়ে এগুতে থাকেন। ফিরতি পাস ধরে
দ্রুত ডি-বক্সে ঢুকে ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান
এই ফরোয়ার্ড; কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে হতাশ করেন তিনি। নিশ্চিত গোলের সুযোগ এভাবে নষ্ট
হওয়ায় মাঝমাঠে হতাশায় নুইয়ে পড়েন রামোস।
ছয় মিনিট পর অবশ্য তার আরেকটি দ্রুত গতির আক্রমণের ফলশ্রুতিতেই পেনাল্টি
পায় রিয়াল। ডি-বক্সে তাকে ফাউল করেন রাফায়েল তোলোই। সফল স্পট কিকে শেষ আটের পথ সুগম
করেন রামোস।
৬৮তম মিনিটে ভাগ্যের ফেরে দ্বিতীয় গোল পাননি বেনজেমা। তার প্রথম প্রচেষ্টার
হেড গোলরক্ষক ঠেকানোর পর পাল্টা হেড পোস্টে বাধা পায়। ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া আতালান্তা
এর আগে ও পরে দারুণ দুটি সুযোগ পায়। কিন্তু থিবো কোর্তোয়াকে পরাস্ত করতে পারেনি তারা।
দুবারই দুভান জাপাতার শট পা দিয়ে ঠেকান বেলজিয়ান গোলরক্ষক।
৮৪তম মিনিটে আর পারেননি কোর্তোয়া। দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে রক্ষণ প্রাচীরের
ওপর দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন কলম্বিয়ার ফরোয়ার্ড মুরিয়েল।
তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা অবশ্য শেষ হয়ে যায় পরের মিনিটেই। লুকাস ভাসকেসের
পাস ধরে কাছের পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়ান দুই মিনিট আগেই বদলি নামা আসেনসিও।
২০১৭-১৮ মৌসুমে সবশেষ ইউরোপ সেরা হওয়ার পরের আসরে রিয়াল ছিটকে যায় শেষ
ষোলোয় আয়াক্সের বিপক্ষে হেরে। আর গত মৌসুমে তারা একই পর্বে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে
হারে দুই লেগেই।
পরের ধাপের টিকেট মিলল এবার। মৌসুম জুড়ে উত্থান-পতনের পথচলায় লক্ষ্য এখন
আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার।