তিনি বলেছেন, “এখন শুধু আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। সকল বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে এ দেশকে আমরা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবই, ইনশাআল্লাহ। এটাই আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বুধবার বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাধীনতার অর্ধশতক পরও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি যে সক্রিয়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের প্রতিহত করে দেশকে এগিয়ে নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি এখনও দেশে-বিদেশে সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা অপতৎপরতার মাধ্যমে এ অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শুভ জন্মদিনে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সকল অপতৎপরতা প্রতিহত করে প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথ ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি।”
বাংলাদেশ এমন এক সময়ে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে, যখন মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ সরকারে রয়েছে এবং সরকার প্রধান জাতির পিতারই জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতীক্ষার প্রহরের আজ অবসান হতে চলেছে। আজ এমন এক সময়ে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছি, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মর্যাদাশীল উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে।”
দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মাথাপিছু আয় সম্মানজনক দুই হাজার মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে; দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে; দেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে; মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। আর্থ-সামজিক সূচকে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে।
“আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টা এবং জনগণের ঐকান্তিক পরিশ্রমের ফসল আজকের এই প্রাপ্তি। এ জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, তারা আমাকে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন বলে।”
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বুধবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি
বাংলাদেশ এখন যে অবস্থানে পৌঁছেছে, সেখান থেকে তাকে সহজে নামানো যাবে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ করোনাভাইরাস মহামারীও সফলভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত আমরা দেশে এবং বিদেশে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। আজ তার সূচনাপর্ব। তবে আমাদের উৎসব ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতে থাকবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার সমন্বয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ভ্রাতৃপ্রতীম দেশটির জনগণকে শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা শুভেচ্ছাবাণী পাঠিয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি দেশবাসীর পক্ষ হতে তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”
চীন, কানাডা এবং জাপানের জনগণকেও শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা। পাশাপাশি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতিও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে জাতির পিতার সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরে বলেন, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চের এই দিনে তার বাবা টুঙ্গীপাড়ায় জন্ম নিয়েছিলেন। পিতা শেখ লুৎফুর রহমান এবং মাতা শেখ সায়রা খাতুনের কোল আলো করে যে শিশুর এই ধরিত্রীতে আগমন ঘটে, সেই শিশুই আলো জ্বালিয়েছিল বাঙালি জনগোষ্ঠীর জীবনে। এনে দিয়েছিলেন স্বাধীনতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার-নেতা, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সালাম জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে বলেন, “বাঙালির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ মাতৃভাষার মর্যাদা অর্জনের যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, সে ধারাবাহিক সংগ্রামের সাফল্যের ফসলই আমাদের স্বাধীনতা।”
স্বাধীনতার পর দেশ গড়তে জাতির পিতার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং যুদ্ধপরবর্তী দেশ গড়ার কাজে যেসব বন্ধুপ্রতীম দেশ এবং নেতা বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।