অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদকারীরা সংগঠিত হতে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করে আসছিল, কর্তৃপক্ষ এই পরিষেবার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে; বৃহস্পতিবার থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত স্থানগুলোর অধিকাংশ ওয়াই-ফাই অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দাউইসহ কিছু শহরে কোনো ইন্টারনেট নেই বলে স্থানীয় বাসিন্দারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
মিয়ানমারের উত্তরপূর্বাঞ্চলভিত্তিক বেসরকারি বার্তা সংস্থা তাচিলেক ক্যাবল কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কয়েকটি ছবি প্রকাশ করে জানিয়েছে, তারা প্রতিবেশী থাইল্যান্ড থেকে আসা ফাইবার লিঙ্ক বিচ্ছিন্ন করছেন।
এই প্রতিবেদন তারা যাচাই করতে পারেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। মিয়ানমারে তথ্য যাচাই করা ক্রমাগত কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে তারা।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৩৭ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৯ জন এখনও আটক রয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ কিছু সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও অন্যান্যগুলো রসদের অভাবেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। বুধবার শেষ বেসরকারি সংবাদপত্রটিও প্রকাশনা বন্ধ করেছে।
কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমগুলোর ওপর এসবের কোনো প্রভাব পড়েনি।
একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চারবারে প্রায় পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ডলার ঘুষ নিয়েছিলেন, এমন অভিযোগে অং সান সু চির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে বুধবার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে।
ওই খবরে আবাসন ব্যবসায়ী মং ওয়েইকের মন্তব্য সম্প্রচার করা হয়। তিনি জানান, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চারবার সু চিকে ৫০ হাজার ডলার থেকে আড়াই লাখ ডলার করে দিয়েছেন তিনি; ওই সময় সু চি কয়েক দশকের মধ্যে মিয়ানমারের প্রথম বেসামরিক নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধান ছিলেন।
খবরে বলা হয়, “মং ওয়েইকের সাক্ষ্য অনুযায়ী অং সান সু চি ঘুষ নেওয়ার দায়ে দোষী। দুর্নীতিবিরোধী আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন।”
গত সপ্তাহে জান্তার একজন মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, অবৈধ অর্থ গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষ সু চির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।
তখন এই অভিযোগকে তামাশা অভিহিত করেছিলেন সু চির আইনজীবী। কিন্তু ফের তার মন্তব্য জানার জন্য বৃহস্পতিবার তাৎক্ষণিকভাবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানে সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করে আটক করা হয়। পাশাপাশি তার দলের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দকেও আটক করা হয়। তার পর থেকেই প্রায় নিয়মিতভাবে মিয়ানমারজুড়ে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ চলছে।
প্রথমদিকে সংযম প্রদর্শন করলেও গত মাসের শেষ দিক থেকে বিক্ষোভ দমনে ক্রমাগত সহিংস পন্থা গ্রহণ করতে শুরু করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। তাতে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা মোট ২১৭ জনে দাঁড়িয়ে বলে মানবাধিকার গোষ্ঠী অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) জানিয়েছে। নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা তাদের।
বৃহত্তম শহর ও বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগনসহ অন্যান্য শহরগুলোতে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ দমনে কঠোর অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। এর মধ্যেই দিন দিন দেশটির অন্যান্য এলাকাগুলোতে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ দেখা দিচ্ছে।
ডেমোক্র্যাটিক ভয়েস অব বার্মা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার মধ্যাঞ্চলীয় ছোট শহর নাটমাউকে কয়েক হাজার লোক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ করেছে। এই শহরটি মিয়ানমারের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা সু চির বাবা অং সানের জন্মভূমি।
বার্তা সংস্থা ইরাবতী জানিয়েছে, এদিন প্রায় এক হাজার প্রতিবাদকারী মোটরসাইকেল নিয়ে মধ্যাঞ্চলীয় শহর টুনগোতে ঘুরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে আর উত্তরাঞ্চলীয় জেড খনিসমৃদ্ধ হপাকান্ত শহরে কয়েকশত প্রতিবাদকারী জান্তাবিরোধী মিছিল করেছে।
এসব অঞ্চলের কোথাও থেকে কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।