তাদের অভিযোগ, এবার বিশাল পরিসরের মেলার বিন্যাসে প্যাভিলিয়নগুলো মূল কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। আর সাধারণ স্টলগুলো মেলা প্রাঙ্গণের মূলকেন্দ্র থেকে দূরে রাখা হয়ছে।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শুরু হওয়া বইমেলার প্রথমদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভের লেকের পাশে ‘সাধারণ প্রকাশক বৃন্দ’ ব্যানারে একদল প্রকাশ ও বিক্রেতা মানববন্ধন করে এ অভিযোগের কথা জানান।
মহামারী পরিস্থিতি বিচেনায় এবার ভিড় এড়াতে স্টলের সামনে ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে বেশি; স্টলের দূরত্বও বাড়ানো হয়েছে। ফলে এবার প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুটের বিশাল বিস্তৃতি পেয়েছে বইমেলা; যা গতবারের প্রায় দ্বিগুণ।
মানববন্ধনে ‘সমগ্র প্রকাশনী’র প্রকাশক শওকত আলী বলেন, “এবারের মেলার বিন্যাস নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। মূল কেন্দ্রবিন্দুটা সমস্ত প্যাভিলিয়নের দখলে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি যাদের বেশি আছে, তাদেরকে নিয়েই মেলা হচ্ছে। এটা বৈষম্যমূলক আচরণ। আমরা এরকম মেলা চাই না।”
তিনি বলেন,“ ফ্রাঙ্কফুর্টের মেলা যে রকম হয়, ইউরোপের অন্যান্য বইমেলা যেরকম হয়, সেখানে দেখবেন সব স্টল একই রকম। কিন্তু আমাদের বইমেলায় কেন এই বৈষম্যমূলক প্যাভিলিয়ন সংস্কৃতি? একুশে বইমেলার সমস্ত জাতির চেতনার মেলা। এটা অংশগ্রহণমূলক হওয়া উচিত।”
অমর একুশে বইমেলার পর্দা উঠলেও অনেক স্টল এখনও গোছানো হয়নি।
মুক্তচিন্তা প্রকাশনার প্রকাশক শিহাব বাহাদুর বলেন, “আমাদেরকে এক সাইডে ফেলা হয়েছে। আমাদের অনেকের স্টল এমন প্রান্তে পড়েছে, যেখানে কোনো বই বিক্রি করার উপায় নাই।”
প্রতি বছর বইমেলায় প্রকাশকদের অংশগ্রহণে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে স্টল বরাদ্দ দেয় বাংলা একাডেমি। তবে এবার লটারির মাধ্যমে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হলেও স্টল বিন্যাস আগে থেকেই প্রকাশকদের দেখানো হয়নি বলে অভিযোগ উঠে।
শিহাব বলেন, “লটারির মাধ্যমে অংশগ্রহণ ছাড়া তো উপায় নাই। তবে মেলার ডিজাইনটা আগেই প্রকাশ করা উচিত। শেষ মুহূর্তে এসে আমাদের তো আর কোনো পরিবর্তনের সুযোগ থাকে না।”
জয়তি প্রকাশনীর প্রকাশক মাজেদুল হাসান বলেন, “মেলার এত বড় পরিসর মানুষ ঘুরতে পারবে না, অধিকাংশ মানুষ মেলার ফোকাস পয়েন্ট থেকে বই ক্রয় করে। ফলে এবার প্যাভিলিয়নগুলো ভালো সুবিধা পাবে।”
অমর একুশে বইমেলার পর্দা উঠলেও অনেক স্টল এখনও গোছানো হয়নি।
প্রকাশকদের অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা নিয়ে আমরা বাংলা একাডেমির সঙ্গে কয়েক দফা মিটিং করেছি। বাংলা একাডেমিকে আমরা বলেছি, আপনারা ডিজাইনটা আগে দেখালেন না কেন? ডিজাইনটা দেখালে আমরা কিছু কারেকশন দিতে পারতাম। তারা বলেছে, আর্কিটেক্টের কাছ থেকে ডিজাইন পেতে তাদের বিলম্ব হয়েছে। বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ এটার দায় স্বীকার করেছেন।”
এ প্রসঙ্গ বাংলা একাডেমির পরিচালক ও বইমেলার সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বলেন, “তাদের এটা বলার অধিকার আছে। আমরা এবার কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় একটা পরিকল্পনা করেছি, অনেকে পছন্দ হয়েছে, কেউ কেউ বলছেন এটা ঠিক হয়নি।
“আমাদের চিন্তাটা হচ্ছে, প্রত্যেকটি প্রবেশপথে সাধারণ স্টলগুলো রাখা হয়েছে। যাতে মানুষ মেলায় প্রবেশ করে সাধারণ স্টরগুলো আগে ভিজিট করে তারপর প্যাভিলিয়নে যায়। আবার যখন বের হবে, তখনও কিন্তু ক্রেতারা ওই সাধারণ স্টলগুলো অতিক্রম করেই বের হবে। সুতরাং এদিক থেকে চিন্তা করলে সাধারণ স্টলগুলো ভালো অবস্থানে আছে।”
অমর একুশে বইমেলার পর্দা উঠলেও অনেক স্টল এখনও গোছানো হয়নি।
ভিড় এড়াতে এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব প্রান্তে নতুন প্রবেশ পথ করা হয়েছে। সব মিলে উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণে তিনটি প্রবেশ ও তিনটি বের হওয়ার পথ রাখা হয়েছে।
জালাল আহমেদ বলেন, “আমরা এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা প্রাঙ্গণে আরও একটি প্রবেশ পথ রাখায় পুরো মেলার প্রাঙ্গণে একটা ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। অন্যবার পূর্বদিকে যারা পড়ত, তারা পেছনে পড়ত।
“এবার যদি প্রবেশ পথগুলোতে প্যাভিলিয়ন দেওয়া হত, তাহলে বলা যেত, প্যাভিলিয়নগুলোকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তারপরও প্রত্যেকেরই মত প্রকাশের অধিকার আছে। তারা তাদের অভিযোগ জানিয়েছে, আমরা এগুলো নিয়ে ভাবব। হয়ত আগামীবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বিষয়গুলোর মাথায় রেখে কাজ করব। তবে এবারের পরিকল্পনাটা সবাই বলছেন খুবই ভারসাম্যপূর্ণ পরিকল্পনা হয়েছে। ভিন্ন মতও থাকতে পারে।”
সব প্রস্তুতি হয়নি শেষ
মহামারীর কারণে পিছিয়ে যাওয়া অমর একুশে বইমেলা প্রায় দেড় মাস পর শুরু হলেও শেষ হয়নি মেলার সব প্রস্তুতি।
অমর একুশে বইমেলার পর্দা উঠলেও অনেক স্টল এখনও গোছানো হয়নি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেলার প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, প্যাভিলিয়নসহ বেশকিছু প্রকাশনীর স্টল নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। অনেক স্টলে বই সাজানো হয়নি। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে ধুলা ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
বই মেলার সদস সচিব জালাল আহমেদ বলেন, “কিছু প্রতিষ্ঠান এখনও স্টল নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেনি, এটা দুঃখজনক। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য দুয়েকটি প্যাভিলিয়নও কাজ শেষ করতে পারিনি। তবে ৮১৭টি স্টলের মধ্যে পাঁচ-দশটা এমন হতে পারে। তারপরও তাদের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল।
“আমরা আশা করব, রাতের মধ্যেই তারা কাজ শেষ করবে। কাল থেকে আমরা সম্পূর্ণ নির্মিত একটা বইমেলা দেখতে পারব।”
শুক্রবার দ্বিতীয় দিন মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।
এদিন বিকাল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী: বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ’ শীর্ষক আলোচনা।
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সুভাষ সিংহ রায়। আলোচনায় অংশ নেবেন আরমা দত্ত এবং নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।