কোমল পানীয়র ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা
শুনলে প্রথমেই মাথায় আসে ওজন বেড়ে যাওয়ার কথা। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপরেও যে এর
ক্ষতিকর প্রভাব আছে তা হয়ত খুব কম মানুষই জানেন।
কোমল পানীয় বা ‘সোডা ওয়াটার’য়ের প্রধান
উপাদান হলো চিনি। আর এই চিনিই সকল নষ্টের মূল, এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করার
ক্ষেত্রেও।
খাদ্য ও পুষ্টি-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে
প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর কোমল পানীয়র ক্ষতিকর
প্রভাব সম্পর্কে।
ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার খোরাক যোগায়: কোলা-জাতীয় পানীয়র ১২ আউন্সের একটি ক্যান’ অর্থাৎ দেড় কাপ
কোমল পানীয়তে চিনির পরিমাণ ৩৯ গ্রাম। অর্থাৎ প্রায় আড়াই চেবিল-চামচা বা ১০ চা-চামচ
চিনি।
নিয়মিত এই পানীয় পান করা থেকে নানাবিধ
স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেওয়া সম্ভব। শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে যে ব্যাক্টেরিয়া
ও ভাইরাস নানান রোগ সৃষ্টি করে তার বংশবিস্তারের স্থানই হল চিনি সমৃদ্ধ অংশ। আবার শরীরের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কিছু মাত্রায় দমিয়ে দেয় চিনি। যে কোষগুলো ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া
দমন করে সেগুলোকে দমিয়ে রাখে চিনি। তাই সপ্তাহের সর্বোচ্চ এক ‘ক্যান’ কোমল পানীয় পান
করতে পারবেন, এর বেশি পান করলেই সমস্যা শুরু হবে।
সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ায়: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার শ্বেত রক্তকণকাকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় অতিরিক্ত
চিনি। যেকোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার মূল উপাদান এই শ্বেত রক্তকণিকা। ফলে সংক্রমণে
আক্রান্ত হওয়া আশঙ্কা বেড়ে যায় বহুগুন। আর যাদের ‘টাইপ টু’ ডায়াবেটিস আছে, তাদের জন্য
এই ঝুঁকির তীব্রতা আরও বেশি। কারণ ডায়াবেটিস এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে
দেয়। আর চলমান করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার মানে প্রাণঘাতি।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়: ‘এনার্জি ড্রিংক’ সাময়িক কর্মশক্তি বাড়ায় আবার পরমুহূর্তেই ক্লান্ত
করে তোলে। তবে এতে থাকা অতিরিক্ত চিনি ডায়বেটিসের ঝুঁকি একবার বাড়ালে তা কিছুক্ষণ পর
কমে যায় না। নিয়মিত এই পানীয়গুলো পান করার কারণে ‘ইনসুলিন সেনসিটিভিটি’ কমে যায়, আর
এটাই ‘টাইপ টু ডায়াবেটিস’য়ের প্রধান কারণ।
প্রদাহ: কোমল
পানীয়র অতিরিক্ত চিনি শরীরে বিভিন্ন প্রদাহ সৃষ্টি করতে সক্ষম যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার
ক্ষতি করার পাশাপাশি মধ্যবয়সে বিভিন্ন দূরারোগ্য ব্যাধির ঝুঁকিও বাড়ায়। যারা নিয়মিত
কোমল পানীয় পান করেন তাদের শরীরে ‘ইউরিক অ্যাসিড’য়ের মাত্রা বাড়ে। যে কারণে নানান প্রদাহ
ও ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’ সৃষ্টি করে।
স্থূলতা: অতিরিক্ত
ওজনও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য ক্ষতিকর। ‘ওবেসিটি অ্যাকশন কোয়ালিশন’য়ের দেওয়া
তথ্য মতে, ‘সাইটোকাইন’য়ের উৎপাদন কমানো থেকে শুরু ‘লিম্ফোসাইট’য়ের কাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি
করা পর্যন্ত অসংখ্য উপায় আছে যার মাধ্যমে স্থূলতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে। রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় রাখতে ‘সাইটোকাইন’ অত্যন্ত জরুরি। আর ‘লিম্ফোসাইট’ বা শ্বেত
রক্তকণিকা হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সেই উপাদান যা রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুকে দমন করে।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন