তিন সংস্করণ মিলিয়ে নিউ জিল্যান্ডে তাদের বিপক্ষে ২৬টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ।
জয়ের দেখা মেলেনি কখনোই। অচেনা সেই স্বাদ পেতে এবার মরিয়া বাংলাদেশ দল। লক্ষ্য পূরণে
অধিনায়ক তামিমের বাজি পেস বোলিং, আত্মবিশ্বাস আর আগ্রাসী ক্রিকেট।
বাংলাদেশ-নিউ জিল্যান্ড তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি ডানেডিনে শুরু হবে
বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোর চারটায়।
আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ এই সিরিজ। গত জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে
৩-০তে হারিয়ে সুপার লিগে বাংলাদেশ পেয়েছে পূর্ণ ৩০ পয়েন্ট। নিউ জিল্যান্ডে ৩০ পয়েন্ট
পাওয়ার আশা দলের সুদূরতম ভাবনাতেও সম্ভবত নেই। স্রেফ একটি জয়, ১০ পয়েন্ট পেলেও বর্তে
যায় দল। চ্যালেঞ্জ এতটাই কঠিন।
সফর শুরুর আগে থেকেই বাংলাদেশ দলের আবহ সঙ্গীত হয়ে বাজছে ওই একটি জয়। তামিম দেশ
থেকে বলে গেছেন, ওখানে যাওয়ার পর দলের অন্যদের কণ্ঠেও একই সুর। নিউ জিল্যান্ডে এবার
নতুন কিছু করতে চায় দল।
ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে অধিনায়ক তামিম বললেন, মূলত দুটি কারণে ভিন্ন কিছু করার
সাহস এবার দেখতে পাচ্ছে দল।
“আগে যতবার এসেছি, তার চেয়ে আমাদের পেস বোলিং আক্রমণ হয়তো এবার ভালো
অবস্থায় আছে। অবশ্যই ভালো করাও লাগবে (মাঠে)। কিন্তু এতটুকু বলতে পারি, এখন যে গ্রুপটা
আছে পেস বোলারদের, তারা খুবই ভালো।”

ইউনিভার্সিটি ওভালে অনুশীলন শুরুর আগে বাংলাদেশ দলের কথোপকথন। ছবি : বিসিবি।
“দ্বিতীয়ত, আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, বিদেশ সফরগুলোতে
নিজের প্রতি বিশ্বাস। এই দলে বিশ্বাস আছে, তারা কিছু করতে চায়। সেটাই আমি আশা করছি,
আমরা প্রথম ম্যাচ থেকেই লক্ষ্য আমাদের ভালো করার, সেটা যেন আমরা করতে পারি।”
নিউ জিল্যান্ডে পা রাখার তিন সপ্তাহের বেশি সময় পর প্রথম ম্যাচ খেলছে বাংলাদেশ।
কয়েক দিন ঘরবন্দি থেকে পরে কোয়ারেন্টিনের মধ্যেই কয়েকজনের গ্রুপে অনুশীলন করার সুযোগ
পেয়েছে দল। এরপর প্রস্তুতি ক্যাম্প হয়েছে কুইন্সটাউনে, অনুশীলন হয়েছে ডানেডিনে। প্রস্তুতির
কোনো ঘাটতি তাই এবার দেখেন না তামিম।
“ আমরা নিজেদেরকে যেভাবে প্রস্তুত করেছি, চেষ্টা করেছি যেন সবকিছু
ব্যবহার করতে পারি। এতটুকু বলতে পারি, প্রথম ম্যাচের আগে আমরা পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত।
আমাদের মুখ থেকে শুনবেন না যে প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল, এই সিরিজ ভালো হোক বা খারাপ। এখনও
পর্যন্ত যে প্রস্তুতি নিয়েছি, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। কথা অনেক কিছু বলতে পারি, কিন্তু
পুরো জিনিসটা বাস্তবায়ন করাটা হলো গুরুত্বপূর্ণ।”
বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের কৌশল ও শরীরী ভাষা। তামিম জানালেন, দল
বেছে নেবে আগ্রাসনের পথ। সেখানে পেসারদের ভূমিকা অধিনায়ক তুলে ধরলেন আবারও।
“ আমাদের ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে হবে, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে হবে।
আক্রমণাত্মক ক্রিকেট বলতে প্রতি ১০ ওভারে ১০০ রান করতে হবে, সেটা বোঝাইনি। কিংবা প্রথম
৫ ওভারে ৫ উইকেট নিয়ে নিতে হবে। ব্যাপারটি হলো, সবকিছুতে ইতিবাচক থাকতে হবে, যা-ই করিনা
কেন। যেহেতু আমাদের অতীত রেকর্ড ভালো নয় এখানে, সেহেতু ভিন্নভাবে কাজ করতে হবে, ভিন্নভাবে
ভাবতে হবে।”
“ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল
বোলিং বিভাগ। আমরা যদি বোলিংয়ে আক্রমণাত্মক থাকতে পারি… আমি আসলে আমাদের নতুন পেসারদের
নিয়ে বেশ আশাবাদী। খুবই রোমাঞ্চিত। তারা কঠোর পরিশ্রম করছে। নেটে বলেন, প্রস্তুতি ম্যাচ
বলেন, ওরা ভালো বল করেছে। আমি খুব আশাবাদী, ওরা ভালো করবে।”
আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে চাওয়ার ছাপ একাদশ গঠনেও রাখছে বাংলাদেশ। ছুটির কারণে
সাকিব আল হাসান না থাকয় দলে ঘাটতির জায়গা আছেই। অধিনায়ক নিশ্চিত করেছেন, ৫ জন বিশেষজ্ঞ
বোলার নিয়ে নামবে দল।
বাংলাদেশের জন্য আরেকটি বড় সুবিধা, নিউ জিল্যান্ড প্রথম ম্যাচ খেলবে তাদের সেরা
দুই ব্যাটসম্যানকে ছাড়া। চোটের কারণে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন নেই গোটা সিরিজেই। প্রথম
ওয়ানডেতে থাকছেন না রস টেইলরও। ২০১০ সালে উইলিয়ামসনের অভিষেকের পর এই নিয়ে মাত্র তৃতীয়বার
এই দুজনকে ছাড়া ওয়ানডে খেলবে নিউ জিল্যান্ড, ২০১৪ সালের অক্টোবরের পর প্রথমবার!
নিউ জিল্যান্ড দলের যে গভীরতা, এই দুজনকে ছাড়াও তারা অনেক এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশের
চেয়ে। এই ম্যাচে তাদের ওয়ানডে অভিষেক হবে তিনজনের, দুই ব্যাটসম্যান ডেভন কনওয়ে, উইল
ইয়াং ও পেস বোলিং অলরাউন্ডার ড্যারিল মিচেল। কনওয়ে এর মধ্যেই টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের
শুরুটা করেছেন দুর্দান্ত। দাঁড়িয়ে গেলে তিনি একই হারিয়ে দিতে পারেন বাংলাদেশকে।

সিরিজ শেষে ট্রফি হাতে হাসিমুখ থাকবে কোন অধিনায়কের? ছবি : বিসিবি।
সুপার লিগে নিউ জিল্যান্ডের এটি প্রথম ম্যাচ, ওয়ানডে খেলতে নামছে তারা ১ বছর পর।
তবে অন্যান্য সংস্করণে খেলার মধ্যেই থাকায় এটি বড় কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এই মৌসুমে
তাদের ফর্ম দুর্দান্ত। কদিন আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তারা হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। এর
আগে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেবেন টম ল্যাথাম। এই ম্যাচ তার শততম ওয়ানডে।
তার আশা, দারুণ পারফরম্যান্সের ধারা ধরে রাখবে দল। বাংলাদেশকেও বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন
বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
“ আমাদের জন্য এটি আরেকটি সুযোগ নিজেদের মেলে ধরার। দল এবার একটু আলাদা, কয়েকজন
নতুন মুখ আছে। তবে ছেলেরা এবছর লাল-সাদা, দুই বলেই দারুণ ক্রিকেট খেলছে। আশা করি, সেই
ধারাবাহিকতা এই সিরিজেও থাকবে।”
“ গত কয়েক বছরে আমরা এই দুই দল পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছি বেশকবার। এখানেও খেলেছি।
আমরা জানি, ওরা এমন এক দল যারা শেষ পর্যন্ত লড়ে যায়। এই সিরিজও ভিন্ন হওয়ার কথা নয়।
অনেক সময় নিয়ে এবার তারা প্রস্তুতি নিয়েছে। আমরা মুখিয়ে আছি কালকের লড়াইয়ের জন্য।”
বাংলাদেশের নতুন কিছুর তাড়না, নিউ জিল্যান্ডের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার প্রেরণা।
অপেক্ষা এবার মাঠের লড়াইয়ের।