শুক্রবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের মঞ্চে দেওয়া ভাষণে বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার হাজার বছরের ব্যবসায়িক যোগাযোগের প্রসঙ্গ টেনে সেটাকে আরও জোরদারে একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছার কথা জানান তিনি।
রাজাপাকসে বলেন, দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ইতিহাস রয়েছে। অনেকে মনে করে থাকেন, দুই হাজার বছর আগে বঙ্গ অঞ্চল থেকে মানুষ শ্রীলংকায় গিয়েছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকেই দুই অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য চলছে বলেও মনে করা হয়।
বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদাতা সামনের সারির দেশ হিসেব শ্রীলংকার ভূমিকার কথা স্মরণ করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন নীতিনিষ্ঠ মানুষ। বাংলার মানুষের জন্য তিনি তার সারাটি জীবন উৎসর্গ করেছেন, এই বাংলার ভাষা এবং তাদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য। স্বাধীনতার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এবং একটি নতুন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে তিনি ছিলেন দৃঢ়চিত্ত। দুর্ভাগ্যবশত তিনি তার প্রিয়ে দেশের জন্য যে স্বপ্ন লালন করছিলেন তা দেখে যাওয়ার জন্য বেঁচে থাকতে পারলেন না।”
পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওইদিন এক জাতি তার নায়ককে, স্বাধীনতার জনককে হারিয়েছে। এক মেয়ে হারিয়েছেন তার পিতা, ভাই ও অন্য স্বজনদের।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যেও আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকার ও ত্যাগের প্রতি এটাই সর্বোচ্চ সম্মান।”
এক পর্যায়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হোয়ার দ্য মাইন্ড ইজ উইদাউট ফিয়ার’ বা প্রার্থনা কবিতাটির কয়েক চরণ আবৃত্তি করেন।
“চিত্ত যেথা ভয়শূণ্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
… সেই স্বর্গে করো জাগরিত।”
তিনি বলেন, “এই একুশ শতকে এসে আমাদের নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতা অর্জনে তাদের পূর্বসূরিদের সীমাহীন ত্যাগের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। একজন প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে শ্রীলংকা বাংলাদেশের বৃহত্তর স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে পাশে থেকে কাজ করবে।
“অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও দারিদ্রতা দূর করা ও উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র অর্জনে আরও লক্ষ্যগুলো এখনও চ্যালেঞ্জর মধ্যে রয়েছে।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে রাজাপাকসে বলেন, “বাংলাদেশের মাটি উর্বর এবং এখানকার মাঠে সোনার ফসল ফলে। আমাদের যে উর্বর ভূমি আছে তা বিশ্বের খুব কম দেশেরই আছে।
“আমাদের দুই দেশের ভৌগোলিক অবস্থান সামুদ্রিক যোগাযোগ, বাণিজ্য ও মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক জোরদারের জন্য খুবই সহায়ক।”
ব্লু ইকনোমি বা সমুদ্র অর্থনীতিতে জোর দিয়ে তিনি বলেন, “বঙ্গোপসারে সম্ভাবনা খুঁজতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাব আমাদের সামুদ্রিক অর্থনীতি জোরদার করার চিন্তাকে আরও উৎসাহিত করবে।
“বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কয়েক দশকে দুদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির পথে রয়েছে। ঢাকায় সার্ক এগ্রিকালচারাল সেন্টার থেকে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা উন্নয়নের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে যৌথকাজের পরিধি বাড়ানোর প্রস্তাব করছি।”
শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দারিদ্র্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবেলা করেই বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে তাদের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখছে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এই দেশের সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানাই।”