শুক্রবার সকালের দিকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের
সমাগম কম হলেও বিকালে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার দুটি অংশে মানুষের
ঢল নামে। তবে কড়াকড়ি স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় ঢুকলেও ভেতরে অনেকেকেই মাস্ক ছাড়া ঘুরতে
দেখা গেছে।
অপরদিকে বইমেলায় জনসমাগম বেশি থাকলেও
মেলায় বেচাকেনার পুরোদমে শুরু হয়নি বলে দাবি বিক্রেতা ও প্রকাশকদের।
বাবা-মায়ের সাথে বইমেলায় আসা চতুর্থ
শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসরুর ফাহিম জানালো গত বছরও সে বইমেলায় এসেছে। তবে এবার ‘শিশু
প্রহর’ না থাকায় মন খারাপ তার।
“গত বছর হালুম, টুকটুকি-ইকরিদের সাথে
খেলা করেছিলাম। এবছর তাদেরকে মেলায় দেখছি না। তাদেরকে অনেক মিস করছি।”
ফাহিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন,
“বইমেলাটা আসলে একটা উৎসব। এটা শিশুদের মননশীলতা বিকাশ ও আনন্দের খোরাকও বটে। এবার
‘শিশু প্রহর’ না থাকায় আনন্দ একটু কম অনুভূত হচ্ছে ফাহিমের। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায়
বাস্তবতা মানতে হবে আমাদের।”
গত বছর বইমেলায় জনপ্রিয় শিশুতোষ অনুষ্ঠান সিসিমপুরের চরিত্র হালুম, টুকটুকি,
ইকরিদের নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বটতলায় শিশু চত্বরে খেলাধুলা ও আড্ডার জায়গা রাখা
হলেও এবছর তা চোখে পড়েনি। এবার বটতলায় দেখা গেছে বালুর স্তূপ। তবে শিশু চত্বরে সিসিমপুর
শিশুকিশোরদের বইয়ের প্রকাশনার স্টল রয়েছে।
সিসিমপুর প্রকাশনার
কর্মকর্তারা জানান, এবার মহামারী পরস্থিতিতে বাংলা একাডেমি অনুমতি না দেওয়ায় তারা সেটির
আয়োজন করেননি।
বাংলা একাডেমির
পরিচালক ও মেলা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“
করোনাভাইরাসের কারণে আমরা প্রথম দিকে শিশু প্রহর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিস্থিতি
উন্নতি হলে শিশু প্রহরের বিষয়টা বিবেচনা করা হবে।”
এদিকে শিশুপ্রহর
না থাকলেও বইমেলায় শিশুদের আগমন ও বই কেনার প্রতি বেশ আগ্রহ দেখছেন প্রকাশকরা।
চিলড্রেন বুকস সেন্টারের
প্রকশ যুগল সরকার বলেন,“ শিশু প্রহর না থাকলেও মেলায় শিশুদের বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
তারা আসছে, পছন্দের বই ঘুরে ঘুরে দেখছে। অনেকেই কিনছে।”
তবে মেলায় এখনও
পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়নি বলে জানান বিক্রেতা ও প্রকাশকরা।
প্রগতি প্রকাশনীর
প্রকাশক আশরার মাসুদ বলেন, “মেলা তো মাত্র শুরু হল। মানুষ আসছে, ঘুরে দেখছে। আস্তে
আস্তে বেচাকেনা বাড়বে।”
এদিকে মেলার দ্বিতীয় দিনেও বাংলা
একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে অসম্পূর্ণ স্টল নির্মাণ, ধুলা নিয়ে অসন্তোষ
জানিয়েছেন পাঠক-দর্শনার্থীরা।
এ বিষয়ে জালাল আহমেদ বলেন, “বইমেলায় ধুলো বিষয়টি আমিও দেখেছি। আমার কাছেও খারাপ
লেগেছে। আমরা সকালে পানি
ছিঁটিয়েছি। রোদের তীব্রতার জন্য পানি ছিটিয়েও কাজ হয়নি৷ এখন থেকে রাতে, সকালেসহ
সুবিধাজনক সময়ে পানি ছিটানো হবে৷”
মেলায় শুক্রবার আজকের বইমেলায় মোট
৫৫টি নতুন বই এসেছে।
মূল মঞ্চের আয়োজন
বইমেলার দ্বিতীয় দিনে মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত
হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী: বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ’ শীর্ষক আলোচনা
অনুষ্ঠান।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুভাষ সিংহ
রায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আরমা দত্ত এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব
করেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
এছাড়া ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের
বই নিয়ে আলোচনা করেন রঞ্জনা বিশ্বাস, আশরাফ জুয়েল এবং মঈনুল হাসান।
শনিবারের অনুষ্ঠান
শনিবার বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে
অনুষ্ঠিত হবে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী: স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ শীর্ষক আলোচনা। সেখানে
প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আবুল মোমেন। আলোচনায় অংশ নেবেন আবুল কাশেম এবং আবদুল মান্নান
চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন এম আমীর-উল ইসলাম।