ক্যাটাগরি

নিত্যপণ্যের চড়া বাজারে ‘হিসেব মেলানো ভার’

শুক্রবার রাজধানীর একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, মুরগি, গরুর মাংস
ও মাছের সঙ্গে চালের বাজার চড়া অবস্থায় রয়েছে। তবে পেঁয়াজ, রসুনের দাম কিছুটা কমেছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের লাগামহীন বাজারদরে নাকাল রাজধানীর নিম্ন
ও মধ্য আয়ের মানুষরা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন দরবৃদ্ধির কারণে তারা সংসারের
আয়-ব্যয়ের ফর্দ মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

তারা বলছেন, বাজারে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকা ও সামগ্রিকভাবে
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার মাশুল তাদের টানতে হচ্ছে। হিসাব করে সংসার চালানো
তাদের জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে গেছে।

গত সপ্তাহের চেয়ে বাজারে মুরগির দাম বেশ বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে
১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়।

শান্তিনগর বাজারের মনির এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন বলেন,
মুরগির দাম এখন চড়া। শীতের সময় থেকেই প্রায় সব ধরনের মুরগির দাম বেড়ে চলেছে।

মুরগির দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে একই বাজারের ভাই ভাই ব্রয়লার হাউজের বিক্রেতা
ইমরান হোসেন বলেন, “শীত মৌসুমে খামারে নতুন করে মুরগি উৎপাদন ও লালন-পালন কম হয়েছে,
যে কারণে এখন শীতকাল চলে যাওয়ার পর পর এর প্রভাব এসে পড়েছে বাজারে। এখন খামারে যেসব
নতুন মুরগি হচ্ছে, সেগুলো বাজারে এলেই দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।

শান্তিনগর বাজার থেকে পাঁচটি কক মুরগি কেনার পর নগরীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা
মারজিয়া আক্তার বলেন, “বাসায় ছোট একটা প্রোগ্রাম আছে, যে কারণে মুরগি কেনা লাগছে।

“মুরগির দাম এতো বেশি বেড়েছে যে হিসেবে করেও মেলানো যাচ্ছিল না। পাশাপাশি
অন্যান্য মাছ-মাংসসহ সব জিনিসপত্রের দামই তো বেড়েছে। এতে করে আমাদের মাসিক খরচ খবর
বেড়ে গেছে।”

রাজধানীর কোনো বাজারেই গরুর মাংসের কেজি ৬০০ টাকার কমে বিক্রি হচ্ছে না।
আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা।

মাছের দামও কিছুটা চড়া বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। আকারভেদে কেজি
প্রতি রুই বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, বোয়াল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, কালিবাউশ
দেশি ৮০০ টাকা, চাষের ৪৫০ টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা, ইলিশ ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা, চিংড়ী
এক হাজার টাকা, কৈ ৫০০ টাকা, পাবদা ও টেংরা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

মালিবাগ বাজারের মাছ বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, “গত কয়েক দিনে মাছের
দাম কিছুটা বেড়েছে। এর কারণ হলো, নদীতে মাছ কম ধরা পড়ছে, আর যেসব এলাকায় মাছ চাষ হয়
সেখান থেকে সরবরাহও কমে গেছে।”

সেগুনবাগিচা এলাকার বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দীক বলেন, “মাছ-মাংস থেকে শুরু
করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যেই দাম বেড়েছে। সংসার হিসাব করে চালানো অনেক কষ্টকর হয়ে
গেল।

“সরকারের নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতেছে না, তাদের
ব্যর্থতার কারণে সবকিছুর দাম দিন দিন বাড়ছেই। আর আমাদের মত সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে
এখন অসহায়।”

বাজারে সয়াবিন তেলের দাম আরেক দফায় বেড়েছে। সর্বনিম্ন প্রতি লিটার বোতল
১৩৫ টাকা এবং পাঁচ লিটার বোতল ৬৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পুষ্টি ও তীর ব্র্যান্ডের দাম
একটু কম থাকলেও বাজারে রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের তেলের দাম কিছুটা বেশি।

দোকানিরা বলছেন, গত সপ্তাহে তেলের দাম যে আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে, সেই নতুন
মূল্য নিয়ে বাজারে দু-তিন দিনের মধ্যে তেল আসছে। সেগুলো লিটারে আরও পাঁচ টাকা বাড়তি
মূল্য থাকবে।

রামপুরা বাজারের তাহের স্টোরের মালিক আবু তাহের বলেন, “পুষ্টি ও তীর মার্কা
পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ডিলার থেকে আমাদের ৬১০ টাকায় কেনা পড়ে, এটি খুচরা বিক্রি
করি ৬৫০ টাকা। আর রূপচাঁদা কেনা মূল্য ৬৩০ টাকা, বিক্রি করা হয় ৬৬৫ টাকা।”

এগুলো গত সপ্তাহের মূল্য তালিকা অনুযায়ী বিক্রি হলেও দু-তিন দিনের মধ্যে
লিটারে পাঁচ টাকা বেশি নিয়ে তেল বাজারে আসছে দাবি করে তিনি বলেন, “গত সপ্তাহে ডিলাররা
বলে গিয়েছেন, পরবর্তি যেসব তেল আসবে দাম বাড়তি থাকবে। আন্তর্জাতিক বাজারে নাকি তেলের
দাম বেড়েছে।”

বাজারে বোতলজাত ছাড়াও খোলা (লুজ) সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। এসব তেলের লিটার
১২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাম অয়েল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে।

গত দুই সপ্তাহ পেঁয়াজ ও রসুনের দাম বাড়ার পর শুক্রবার বাজারে এই দুই জিনিসের
দাম কিছুটা কমে বিক্রি হচ্ছে।

দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
গত দুই তিন আগেও দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকার ওপরে কেজি বিক্রি হয়েছে। আর আমদানি করা ভারতীয়
পেঁয়াজ ছিল ৪৫ টাকা।

অন্যদিকে রসুনের দাম কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন দোকানীরা। প্রতি কেজি
আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১৪০ টাকা।

শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ও রসুনের পাইকারি বিক্রেতা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “কয়েক
দিনে আড়তে দেশি-বিদেশি পেঁয়াজের সরবরাহ একটু বেড়েছে, যে কারণে দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০
টাকা পর্যন্ত কমেছে। বাজারে সরবরাহ যথাযথ থাকলে আশা করা যাচ্ছে রোজা পর্যন্ত দাম নাও
বাড়তে পারে।”

ভারত থেকে চাল আমদানির পরও বাজারে চালের দাম কমেনি। বিক্রেতারা বলছেন,
ভারতীয় চাল দেশের বাজারে আসার কারণে দেশিয় চাল নতুন করে আর বাড়েনি, স্থিতিশীল রয়েছে।
সরকার চাল আমদানির উদ্যোগ যদি না নিতো তাহলে এতোদিনে চালের কেজি ৮০ টাকা ওপরে উঠতো।

মালিবাগ বাজারের নাহিদ রাইস এজেন্সির মালিক আবদুল মাবুদ বলেন, “গত দুই
সপ্তাহ ধরে নতুন করে কোনো চালের দাম বাড়েনি। তবে এখন গড়ে চালের দাম ৭০ টাকা বা তার
কাছাকাছি হলেও চাল যদি আমদানি করা না হতো তাহলে মানুষকে ৮০ টাকারও বেশি কেজিতে চাল
কিনতে হতো। ভারতীয় চাল বেশ আছে, যে কারণে এখন বাজার স্থিতিশীল আছে।”

শান্তিনগর বাজারের নোয়াখালী রাইস এজেন্সির মালিক গোলাম মাওলা জানান, চালের
সর্বনিম্ন এখন মোটা পাইজামের দাম ৫০ টাকা। আর বি-আর ২৮ এর দাম ৫৫ টাকা, মিনিকেট ৬৫
টাকা, নাজিরশাইল ৬৫/৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আমদানি করা ইন্ডিয়ান মিনিকেট
৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।