দুর্দান্ত স্কিল আর
ক্রিকেটীয় বুদ্ধির খেলায় তামিম ইকবালকে হারিয়ে শিকার ধরেন ট্রেন্ট বোল্ট। মোহাম্মদ
মিঠুন দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হন বোলারের হাত ছুঁয়ে বল নন-স্ট্রাইক প্রান্তের
স্টাম্পে লাগায়। ব্যাটসম্যানদের বাকি সবার বিদায় নিজেদের খামখেয়ালিপনায়।
ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি
ওভাল বরাবরই রান প্রসবা। সাম্প্রতিক সময়েও ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখানে রান
উঠেছে দেদার। সেখানেই কিনা বাংলাদেশ অলআউট ১৩১ রানে!
তিন সংস্করণ মিলিয়েই এই
মাঠে আগে ব্যাট করে সবচেয়ে কম রানের দলীয় ইনিংস এটি।
উইকেটে এ দিন কিছুটা
বাড়তি বাউন্স ছিল, নিউ
জিল্যান্ডের সব উইকেটেই যা কম-বেশি থাকে। রোদের দেখা তেমন মেলেনি বলে আর্দ্রতাও
শুরুতে কিছুটা থাকার কথা। কিন্তু একটু সময় কাটালেই এটা দারুণ ব্যাটিং উইকেট। যারা
উইকেটে কিছুটা সময় কাটাতে পেরেছেন, তারা সেটির প্রমাণও
পেয়েছেন।
বাংলাদেশের শুরুটা ছিল
আশা জাগানিয়া। ইনিংসের তৃতীয় বলেই দারুণ এক শটে পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন তামিম
ইকবাল। পরের ওভারে তার ব্যাট থেকেই বাউন্ডারি আসে ম্যাট হেনরির বলে ফ্লিক শটে।
তার ও দলের স্নায়ু তাতে
থিতু হয়ে যাওয়ার কথা। এরপর ছিল স্রেফ নিজেদের সময় দেওয়ার ব্যাপার। হয়েছে উল্টো।
তামিমকে যেভাবে আউট
করেছেন বোল্ট, ক্রিকেটের
পরিভাষায় যেটিকে বলে ‘সেট আপ।’ দারুণ
কয়েকটি আউট সুইঙ্গারে বাংলাদেশ অধিনায়ককে অস্বস্তিতে ফেলেন এই বাঁহাতি পেসার। আউট
হওয়া ডেলিভারিও সুইং করবে ভেবে তামিম চেষ্টা করেছিলেন পা একটু বেশি বাড়িয়ে বলের
লাইন কাভার করতে। কিন্তু ওই বল সুইং না করে সোজা ছোবল দেয় প্যাডে। আম্পায়ারের আঙুল
উঠতে সময় লাগেনি।
কৃতিত্ব এখানে বোলারের
বেশি, তবে কিছুটা দায় তামিমেরও থাকে।
এভাবে পা আড়াআড়ি বাড়িয়ে তিনি কম তো আউট হলেন না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে!
সৌম্য সরকারের ঘরানার
ব্যাটসম্যানদের জন্য এই উইকেট হওয়ার কথা আদর্শ। তিনি নিজে সেটা বুঝতে চাইলে তো!
স্রেফ দুটি বল দেখলেন। তৃতীয় বলে লাফানো ডেলিভারিতে অযথাই আপার কাট করতে চাইলেন।
ফলাফল, শূন্য হাতে বিদায়।
শুরুতে সহজ ক্যাচ দিয়ে
বেঁচে যাওয়ার পর লিটন খেলছিলেন বেশ সাবধনতায়। প্রথম ১০ ওভারে তার ব্যাট থেকে
বাউন্ডারি আসেনি, ভাবা
যায়! আগের সফরে নিউ জিল্যান্ডে তিন ওয়ানডেতে তিনি করেছিলেন ১, ১, ও ১। এবার সেই বিভীষিকা কাটাতে পারলেও ভালো কিছু
করতে পারলেন না। মূল বোলারদের সামলে কাটা পড়লেন জিমি নিশামের মিডিয়াম পেসে। শর্ট
অব লেংথ বলে তিনি ব্যাটের মুখ ঘুরিয়ে দিলেন একটু আগেই, অনেকটাই
আয়েশি ভঙ্গিতে।
এমনকি মিচেল স্যান্টনারের বাঁহাতি স্পিনও ভালোভাবে সামলাতে পারেনি বাংলাদেশ। ছবি: আইসিসির টুইটার।
নিজের
শটে নিজে হতাশা প্রকাশ করলেন বটে। কিন্তু শোধরানোর সুযোগ তো আর বারবার আসে না!
মুশফিকুর রহিমের জন্য
কিউই পেসারদের কৌশল ছিল শর্ট বল। তাতে বারবার অস্বস্তিতে পড়লেও অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান
মোটামুটি সামলে নিলেন। থিতু হলেন। বড় কিছুর আশা জাগালেন। এবং আশার সমাধিও রচনা
করলেন। লিটনের মতোই নিশামকে দিলেন উপহার। স্টাস্প সোজা বলে কাট খেলার জায়গাই ছিল
না। দেশের অভিজ্ঞতম ওয়ানডে ক্রিকেটার জোর করে কাট খেলে ধরা পড়লেন গালিতে।
মেহেদী হাসান মিরাজ যখন
উইকেটে গেলেন, ইনিংসের
অর্ধেকের বেশি ওভার তখন বাকি। এমনিতে খুব বেশি ব্যাটিংয়ের সুযোগ হয় না তার,
এরকম ম্যাচই তো সুযোগ নিজের অলরাউন্ড সত্ত্বা মেলে ধরার!
পেসারদের হাতে তখন
পুরনো বল, এক পাশে তখন আক্রমণে স্পিন। সবই
মিরাজের পক্ষে। কিন্তু তিনি নিজেই দাঁড়িয়ে গেলেন বিপক্ষে। মিচেল স্যান্টনারের লেগ
স্টাম্পের বল শাফল করে লেগ স্টাম্পেই বোল্ড। অথচ জায়গায় থাকলে আউট হওয়ার উপায়ই নেই
ওই বলে।
অভিষেক মেহেদি হাসানকে
কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর উপায় নেই। ৯৪ মিটার লম্বা ছক্কায় ওয়ানডে ক্রিকেটে পথচলা শুরু
হয়েছে তার। হুক শটে গ্লাভসে লেগে পাওয়া বাউন্ডারিটি সৌভাগ্যের হলেও সাহসের ছোঁয়া
সেখানে আছে। উড়িয়ে মারতে গিয়ে তার আউট হওয়াও অস্বাভাবিক নয়, সহজাত আগ্রাসী ক্রিকেটার। তবে বল নির্বাচন তিনি যত
দ্রুত শিখবেন, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা
তত বেশি।
দলের সর্বোচ্চ রান
মাহমুদউল্লাহর, তবে
সেটি কেবল ২৭ রানের। ক্যারিয়ারে অনেকবার যেমন করেছেন, সেভাবেই
লড়াইয়ের চেষ্টা করেছেন। সতীর্থদের হারিয়ে রান বাড়ানোর দিকেও মনোযোগ দিতে হয়েছে। বোল্টের
বলে পুল শটে বাউন্ডারি, কাইল জেমিসনকে বেরিয়ে
এসে ছক্কা।
যে শটে তিনি আউট হলেন, সেটিতে
টাইমিংও ছিল ভালো। কিন্তু আরেকটু ওপরে কিংবা একদম নিচে রাখতে পারেননি। মিচেল
স্যান্টনারের ক্যাচটিও ছিল দারুণ। মাহমুদউল্লাহকে হয়তো ‘বেনিফিট
অব ডাউট’ দেওয়া যায়।
তবে দলের সামগ্রিক
ব্যাটিং নিয়ে কেবল ‘ডাউট’
বা সংশয়ই থেকে যায়।
সিরিজ শুরুর আগে কোচ
রাসেল ডমিঙ্গো ও অধিনায়ক তামিম জোর দিয়ে বলেছেন, এবার দলের প্রস্তুতি দারুণ। প্রথম ম্যাচের
ব্যাটিংয়ে সেটির প্রতিফলন পড়েনি এতটুকুও। দলের ব্যাটিং লাইন আপের সবাই অভিজ্ঞ,
ম্যাচ খেলার দিক থেকে, ক্যারিয়ারের বয়সে।
কিন্তু ২২ গজে দায়িত্বশীল ছিলেন না একজনও।
ব্যাটিংয়ের এই হালের
নাটকীয় উন্নতি না হলে এবারও হয়তো নিউ জিল্যান্ড থেকে ফিরতে হবে কোনো ম্যাচ জিততে
না পারার হাহাকারকে সঙ্গী করে।