শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিন বলেন, “এই সরকার নিঃসন্দেহে একটা জায়গায় সাকসেসফুল হয়েছে যে, ভীতি-ভয় ছড়িয়ে দিয়ে, মিথ্যা প্রচারণা দিয়ে বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়াতে পুরোপুরি নিয়ে গেছে।”
“আপনারা দেখবেন গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী সুনামগঞ্জে যে সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে সেই সম্পর্কে অবলীলায় মিথ্যাচার করেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা বিএনপিকে দেখে, বিএনপিকে ভয় পায়, বিএনপিকে নিয়ে তারা দুঃস্বপ্ন দেখে। এখানেও (সুনামগঞ্জে) তারা চেষ্টা করেছে বিএনপিকে কিভাবে চালানো যায়।”
সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দুদের গ্রামে হামলার ঘটনায় আলোচিত ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম স্বাধীন ওরফে স্বাধীন মেম্বারকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। শহীদুল স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি।
গত ১৭ মার্চ শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার পর হামলাকারীদের ‘মদদদাতা’ হিসেবে স্বাধীন মেম্বারের নাম আসে।
সত্য প্রকাশে গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ দিতে চাই তারা আজকে এর প্রকৃত চিত্রটা তুলে ধরেছে। যেটার শুরুটা করেছে নোয়াগাঁওর সালনায় যুবলীগের যে নেতা, তার সঙ্গে ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের কারও হাওড়ের বিষয় নিয়ে সমস্যা ছিল এবং তারই কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।
“আওয়ামী লীগ বলছে যে, এটার সাথে বিএনপি জড়িত আছে এবং অন্যদের কথা বলছে। এটা তাদের মজ্জাগত। যখন তারা ব্যর্থ হচ্ছে প্রশাসনে, যখন তারা ব্যর্থ হচ্ছে জনগণকে নিরাপত্তা দিতে, যখন তারা ব্যর্থ হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ঠিক রাখতে, তখনই তারা এই সমস্ত ঘটনা ঘটায় এবং বিএনপিকে দায়ী করার চেষ্টা করে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন যে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সব সময় বিনষ্ট হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে। আমি এই কথাটা জোর দিয়ে বলতে চাই, একটা সার্ভে করুন, কতজন হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি, বাড়ি-ঘর দখল করে আছে কারা? সেখানে বিএনপির লোককে কী তারা খুঁজে পাবে? বেশিরভাগই দেখবেন আওয়ামী লীগের লোকেরা দখল করে আছে, এটা হচ্ছে বাস্তবতা। অথচ অবলীলায় তারা এই মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।”
বিএনপির সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুরে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কেএম ওবায়দুর রহমান স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।
ওবায়দুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “তিনি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্যে অনুপ্রেরণার মানুষ। এই সংকটময় সময়ে কেএম ওবায়দুর রহমান সাহেব নিশ্চয়ই আমাদের সামনে একটা বাতিঘর হয়ে দাঁড়াতে পারেন। তার সময়ে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়।”
১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সালে কেএম ওবায়দুর রহমান বিএনপির মহাসচিব ছিলেন। ২০০৭ সালের ২১ মার্চ কেএম ওবায়দুর রহমান মারা যান।
আলোচনা ষবার সভাপতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমাদের গর্বের বিষয় স্বাধীনতার ৫০ বছর পালন করছি। স্বাধীনতা এদেশের সকল মানুষের। মুক্তিযুদ্ধ এই দেশের গুটিকয়েক নয়, সকলেই করেছে।
“আজকে শুধুমাত্র বিদেশিদের এনে সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছে সরকার। দেশের মানুষকে পালন করতে দিচ্ছেন না। এটা সুবর্ণ জয়ন্তী পালন হয় না।”
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “দেশের অবস্থার তো গোল্লায় যাচ্ছে। মোটা চালের দাম ৫২ টাকা। আর বিদেশ থেকে প্রতিদিন একেকটা ধরে নিয়ে আসছে। আর প্রথম কথা তারা বলছে, বাংলাদেশ যে অগ্রগতির পথে দৌড়াচ্ছে, দেখবার মতো। নিজেদের দেশে কথা বলবার মতো মানুষ নাই। বিরোধী দল যদি কথা বলে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করতে পারবে, পুলিশ দিয়ে পেটাতে পারবে।
তিনি বলেন, “কেবল জিডিপি মানে দেশের অর্থনীতির উন্নতি না। করোনার আগে দরিদ্র লোকের সংখ্যা শতকরা ২১ ভাগ, এখন ৪২ ভাগ। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোর মালিকদের প্রথম দিয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। দুই বছরের মধ্যে শোধ করার কথা ছিল। তারা বলেছে পারবে না। পরে আরও ১০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু শ্রমিক ছাঁটাই প্রতিদিনের ঘটনা। আর কি রকম অত্যাচার চলছে সেটা তো জানেন।”
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মান্না।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়া সম্রাটের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আমীরুল ইসলাম আলিম, সাইফুল আলম নিরব, প্রয়াত নেতা কেএম ওবায়াদুর রহমানের মেয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ বক্তব্য দেন।