ডায়াবেটিস রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যেমন বেশি তেমনি আক্রান্ত হওয়ার
পর সেরে ওঠার গতিও হয় ধীর। এজন্য সামান্য কাটাছড়াও তাদের জন্য মারাত্মক হুমকি বয়ে আনে।
স্বাস্থবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত
প্রতিবেদনে ভারতের ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ পেরিওডন্টোলজি’য়ের সভাপতি, ‘পেরিওডন্টিস্ট’
ও ‘ইমপ্লান্টোলজিস্ট’ ডা. অনির্বান চ্যাটার্জি জানিয়েছেন ডায়াবেটিস রোগীদের দাঁত ও
মাড়ির সচরাচর দেখা দেওয়া সমস্যাগুলো সম্পর্কে।
মাড়ির সমস্যা:
সময়ের ব্যবধানে মাড়ির চারপাশে ‘প্লাক’ জমে যখন শক্ত হতে থাকে তখনই মাড়ির রোগবালাইয়ের
সুত্রপাত হয়। মাড়ি লাল হয়ে যায়, ফুলে ওঠে, হতে পারে রক্তপাত। যত্ন নেওয়া না হলে যা
মোড় নেয় ‘পেরিওডন্টাইটিস’য়ের দিকে। শুধু মুখের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় অবহেলা থেকেই
নয়, ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রিত না হয় তবে সেখান থেকেও মাড়ির সমস্যা বাড়তে থাকে দ্রুত
গতিতে।
তাই ডায়াবেটিস রোগীকে দুই দিক থেকে সাবধান
হতে হবে।
প্রথমত, তার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে
রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত দাঁত ও মাড়ির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে কঠোরভাবে।
এজন্য দাঁত ব্রাশ করতে হবে নিয়মিত, ব্যবহার
করতে হবে নরম ‘ব্রিসল’য়েল ব্রাশ। দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা ‘প্লাক’ কিংবা খাদ্যকণা বের
করে আনতে ‘ফ্লস’ ব্যবহার করতে হবে।
এসবকিছুর পর ‘মাউথওয়াশ’ ব্যবহার করাটা
মোটেও বিলাসিতা নয়, জরুরি। ‘মাউথওয়াশ’ পুরো মুখগহ্বর একসঙ্গে পরিষ্কার করে এবং মুখের
অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্গন্ধ দূর করে।
দাঁত পড়ে যাওয়া: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের রাখতে না পারলে দাঁত পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
দাঁত পড়ে যাওয়ার বিভিন্ন কারণের মধ্যে অন্যতম হল রক্তে শর্করার অনিয়ন্ত্রিত মাত্রা।
রক্তে শর্করা মাত্রা বেশি হওয়ার কারণে
মুখে ব্যাক্টেরিয়া তৈরি হয় বেশি, যা থেকে সৃষ্টি হওয়া মাড়ির রোগ ‘জিনজিভাইটিস’ এবং
দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা। অতিরিক্ত ব্যাক্টেরিয়া থেকে যদি সংক্রমণ সৃষ্টি হয়, তবে একজন
সুস্থ মানুষের তুলনায় সেই সংক্রমণ সারতে ডায়াবেটিস রোগীর প্রয়োজন হবে ভারী চিকিৎসা
এবং সময়ও লাগবে বেশি।
এতে দাঁতকে যে হাড় ধরে রাখে তা দুর্বল
হবে দ্রুতহারে। আর সেখান থেকেই দাঁত খসে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ে। শুষ্ক মুখগহ্বর: মুখের ভেতর লালা তৈরির হার কমে যায় ডায়াবেটিস রোগীর, যা ডেকে আনে শুষ্ক মুখগহ্বরের
সমস্যা বা ‘ড্রাই মাউথ’।
এর প্রধান কারণ হলো ডায়াবেটিস রোগীদের
সেবন করা ওষুধ। আর মুখগহ্বর শুষ্ক থাকলে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে। আর ‘ড্রাই মাউথ’য়ের
সমস্যা থেকে মুখে তীব্র দুর্গন্ধও সৃষ্টি হয়।
এই সমস্যা সহজ সমাধান হল ঘন ঘন পানি পান
করা। ‘ড্রাই মাউথ’য়ের সমস্যা যাদের আছে তাদের নিয়মিত দাঁত ও মাড়ি পরীক্ষা করানো অত্যন্ত
জরুরি।
খাওয়ার পর যদি কোনো কারণে দাঁত ব্রাশ
করতে না পারেন তবে কমপক্ষে ‘মাউথওয়াশ’ অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত। ‘মাউথওয়াশ’য়ের সঙ্গে
ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাকনাশক গুণসম্পন্ন ‘এসনশল অয়েল’ মিশিয়ে কুলি করলে মুখের দুর্গন্ধ
তাড়ানো আরও সহজ ও কার্যকর হবে।
দাঁত নষ্ট হওয়া: রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি মানেই শরীরে চিনি ও ‘স্টার্চ’ দুইয়ের সরবরাহ বেশি।
একারণে মুখগহ্বরের অম্লতা বাড়বে এবং দাঁতের ক্ষয় বাড়বে।
তাই দাঁতের সঠিক যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি
খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করার গুরুত্বও কম নয়।
চিনি ও প্রক্রিয়াজাত ‘কার্বোহাইড্রেইট’
বেশি এমন খাবার যতটা এড়ানো যায় ততই ভালো, কারণ দুটোই দাঁতের ক্ষয় ও পঁচে যাওয়ার আশঙ্কা
বাড়ায়।
পাশাপাশি ‘ফ্লুরাইড’ সমৃদ্ধ ‘টুথপেস্ট’
ব্যবহার উপকারী হবে। ‘ফ্লস’ করার পর ‘মাউথওয়াশ’ ব্যবহার করতেই হবে।
আরও পড়ুন
প্রাকৃতিকভাবে দাঁত সাদা করার উপায়
দাঁত শিরশির: যে কারণে হয় জেনে নিন