রোববার ভোরে আতাইকুলা থানা ভবনের ছাদে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ বলছে, এই উপ-পরিদর্শক ‘তার ইস্যু করা পিস্তল মাথায় ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।‘
নিহত হাসান আলী প্রশিক্ষণ শেষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাবনার আতাইকুলা থানায় যোগ দিয়েছিলেন। যশোরের কেশবপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের দরিদ্র ভ্যান চালক জব্বার আলীর ছেলে তিনি।
হাসান কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন অবিবাহিত হাসান।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাবনার পুলিশ সুপার মুহিবুল ইসলাম খান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে হাসান পারিবারিক চাপ এবং মানসিক অশান্তিতে আত্মহত্যা করেছেন বলে আমরা মনে করছি।
“মৃত্যুর পরে খুঁজে পাওয়া ডায়েরিতেও হাসান, ‘আই ওয়ান্ট টু ডাই, পৃথিবীর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই’ এসব কথা লিখেছেন।”
ঘটনাস্থলে তার ব্যবহৃত মোবাইলের সিমটি ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাজশাহী থেকে আসা সিআইডির ফরেনসিক টিম আলামত সংগ্রহ করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করছি।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, সহকর্মীর এমন মৃত্যু খুবই বেদনাদায়ক। পুলিশ সদস্যরা প্রতিদিন নানা রকম ঘটনার মুখোমুখি হন।তাদের এমনিতেই মানসিক চাপে থাকতে হয়। তাতে পুলিশ সদস্যের নিয়মিত মানসিক চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং প্রয়োজন।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তবে পারিবারিক আর্থিক টানাপোড়েনে মানসিক অশান্তিতে ছিলেন কিন্তু আত্মহত্যা করবেন ভাবেননি বলছেন তার সহকর্মীরা।
হাসানের এক সহকর্মী ও রুমমেট বলেন, “সম্ভবত হাসানের গ্রামের কিছু স্বজন তার কাছে মাঝে মাঝেই টাকা চাইত। পুলিশের চাকরি করায় সে বৈধ-অবৈধ পথে অনেক টাকা আয় করে বলেও তারা মনে করত কিন্তু হাসান ব্যক্তিগতভাবে কখনোই অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনে আগ্রহ দেখায়নি। ফলে তাদের দাবি অনুযায়ী টাকাও সে দিতে পারত না। এ নিয়ে প্রায়ই তার স্বজনদের সাথে মনোমালিন্য হত।
“মাঝে মাঝে হতাশায় এ পৃথিবী থেকে কবে মুক্তি পাবে জানতে চাইত কিন্তু সে আত্মহত্যার এমন ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা করেছিল তা কখনোই বুঝতে পারিনি।”
এদিকে, রোববার বিকেলে হাসানের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।