ক্যাটাগরি

‘বদলে যাওয়া’ বাংলাদেশের ভিত্তি বঙ্গবন্ধুর হাতে: কাদের

বঙ্গবন্ধুর
জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ১০ দিনের আয়োজনের পঞ্চম দিন রোববারের অনুষ্ঠানে
তিনি এ কথা বলেন।

সড়ক
পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে উন্নয়নের
এমন কোনো ক্ষেত্র ছিল না, যেখানে বঙ্গবন্ধুর ‘ছোঁয়া লাগেনি’।

“এক
কথায় বলতে গেলে আজ বদলে যাওয়া বাংলাদেশে যা কিছু হচ্ছে, তার সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, তার সবকিছুরই ভিত্তি রচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু্।”

জাতীয়
প্যারেড গ্রাউন্ডে এ আয়োজনে পঞ্চম দিনের থিম ‘ধ্বংসস্তূপে জীবনের জয়গান’ এর ওপর বক্তৃতা
করছিলেন কাদের।

যুদ্ধ-বিধ্বস্ত
দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার কথা তুলে ধরে মুজিব বাহিনীর নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ থানার
কমান্ডার কাদের বলেন, সেই কাজ করতে গিয়ে সাড়ে সাত কোটি মানুষের পনের কোটি হাতকে দেশের
উন্নয়নে কাজে লাগানোর আহ্বান জানালেন জাতির পিতা।  

“শান্তি-শৃঙ্খলা
রক্ষায় প্রতিটি বাহিনীকে স্বাধীন দেশের উপযোগী করে গড়ে তোলার কাজে হাত দিলেন। অল্প
সময়ের ব্যবধানে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করল। স্বাধীন
দেশের পতাকা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পেতে শুরু করল মর্যাদা।”

সদ্য
স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি আদায়ের পাশাপাশি বন্ধু তৈরিতে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগের কথা স্মরণ
করিয়ে দিয়ে কাদের বলেন, “অবকাঠামো উন্নয়নে এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণে নিলেন নব নব উদ্যোগ।
রপ্তানি বাড়িয়ে বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দিলেন মনযোগ। খাদ্য
নিরাপত্তার পাশাপাশি কৃষিখাতকে দিলেন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। দায়িত্ব গ্রহণের চৌদ্দ
মাসের মাথায় একটি জাতীয় নির্বাচন উপহার দিয়েছিলেন।”

বক্তৃতায়
কাদের বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই স্বাধীনতা
এসেছিল।

“স্বাধীনতার
অদম্য স্পৃহায় এ শ্যামল মাটিতে কত ফুল গেছে ঝরে, কত খেলা গেছে ভেঙে, কত বাঁশরী হয়েছে
চিরদিনের মত নীরব। বাংলার শ্যামল বুক কত বীরের রক্তস্রোত, কত মাতার অশ্রুধারায় সিক্ত
হয়েছে। স্বাধীনতা আসেনি।”

অবশেষে
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সেই স্বাধীনতা আসার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক বলেন, “হাজার বছর পর ইতিহাসের এক বাঁকে, বাংলার ওই গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়
এক বীর প্রসবিনী মা যাকে জন্ম দিয়ে সারা বাংলাদেশকে ধন্য করেছেন, যিনি আমাদের পূর্ব
পুরুষদের হাজার বছরের পরাজয়, অপমান আর রক্তের প্রতিশোধ নিয়েছিলেন।”

মুক্ত
স্বদেশ গড়ে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে জাতির পিতা ‘নতুন সংগ্রাম’ শুরু করেছিলেন
বলে মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী।

তিনি
বলেন, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কাজের পাশাপাশি স্বাধীনতার এক বছরের মধ্যেই মুক্তিকামী
মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে একটি সংবিধানও প্রণয়ন করেছিলেন জাতির পিতা।  

“দেশের
এ প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে ছুটে চললেন বাংলার মানচিত্রের অমর চিত্রকর। দুচোখে তার সোনার
বাংলার স্বপ্ন, বুকজুড়ে চুয়ান্ন হাজার বর্গমাইল। দুখিনী বাংলাকে ফুলে-ফলে শোভিত করতে
চলে তার অবিরাম প্রয়াস। একদিকে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ আর অপরদিকে
অন্ন, বস্ত্রের সংস্থান।”

বঙ্গবন্ধুকে
সপরিবারে হত্যার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে কাদের বলেন, “বঙ্গবন্ধু ধ্বংসস্তূপের মাঝেই
গেয়েছেন জীবনের জয়গান। মৃত্যুর মিছিলে থেকে তিনি উড়িয়েছেন সৃষ্টির পতাকা। বীরের
বীরত্বগাঁথায় ভরপুর এই বাংলার ইতিহাস, বিশ্বাসঘাতকতারও ইতিহাস। এই ইতিহাসে বারে বারে
বিশ্বাস ঘাতকতায় রক্ত ঝরেছে।

“১৯৭৫
সালের ১৫ আগস্ট মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে, পলাশীর ষড়যন্ত্রের
পুনরাবৃত্তি ঘটে বাংলাদেশের ধানমণ্ডিতে। সেদিন বাংলার মানচিত্র রক্তাক্ত হয়ে গেল।
বঙ্গবন্ধুর বিশাল বক্ষ বুলেটে ঝাঝরা হয়ে পড়ে রইল ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ির সিঁড়িতে।”

ওবায়দুল
কাদের বলেন, “স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাতার এতই বদনসিব যে, তার মরদেহ সমাহিত হল রাজধানী
থেকে অনেক দূরের অজগাঁ টুঙ্গিপাড়ায়। বাংলাদেশের মানচিত্রের সমান যার অস্তিত্ব, চরিত্রহননের
কোনো ছোরা দিয়ে তাকে কী নিধন করা হয়ে গেছে? অবমূল্যায়নের কোনো নরুণ দিয়ে ছেদন কী
করা গেছে স্বাধীনতার এই বটবৃক্ষকে?

“না,
শত ষড়যন্ত্র আর হাজারো চেষ্টার পরও মুজিব মরেননি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন কোটি কোটি
মানুষের হৃদয়ে, হৃদয়ের স্পন্দনে।”

কবিগুরু
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্ধৃত করে ওবায়দুল কাদের বলেন,

“যাহার
অমরস্থান প্রেমের আসনে

ক্ষতি
তার ক্ষতি নয় মৃত্যুর শাসনে

দেশের
মাটি থেকে নিল যারে হরি

দেশের
হৃদয় তাকে রাখিয়াছে বরি”

কাদের
বলেন, “যতদিন এ বাংলায় চন্দ্র-সূর্য উদয় হবে, যতদিন এই জনপদে পাখির কলরব থাকবে, থাকবে
নদীর কলতান, সাগরের গর্জন, বিশ্বমানচিত্রে বাংলা নামে দেশ, ততদিন বঙ্গবন্ধু মুজিব,
আপনিও বেঁচে থাকবেন। এক রক্ত পলাশের দেশে, বাউলের দেশে, নদী-মেখলা এই শ্যামল বাংলায়,
এই বীর প্রসবিনী জনপদে বঙ্গবন্ধুর নাম কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।”

বঙ্গবন্ধুর
জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন,
“শিক্ষা গ্রহণ করি তার সততা, সাহসিকতা ও মানুষকে ভালবাসার যে রাজনীতি সে রাজনীতি থেকে।

“বাংলাদেশে
সততা, সাহস ও মেধায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের জুড়ি নেই। যে শিক্ষা বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন,
সেই শিক্ষা অনুসরণ করে দেশকে স্বপ্নের গন্তব্যে পৌছে দিতে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর
বীর কন্যা শেখ হাসিনা।”