ভিটামিনের অভাব পূরণের জন্য ‘সাপ্লিমেন্ট’
প্রায় সকলের কাছে সহজ একটা উপায় হিসেবে পরিচিত।
আর মানুষ এটাও ভেবে নেয় য়ে প্রয়োজন না
থাকলেও কোনো পুষ্টি উপাদানের ‘সাপ্লিমেন্ট’ নেওয়া কখনই ক্ষতিকর নয়।
‘সাপ্লিমেন্ট’ নেওয়ার এই হুজুগের মাঝে
অন্যতম হল ভিটামিন ই।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকাল স্কুলের
পরিসংখ্যান বলে, ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সি মানুষের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ মানুষ প্রতিদিন
ভিটামিন ই ‘সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেন। তবে তা উপকারের চাইতে তাদের ক্ষতিই করে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের
বিশেষজ্ঞদের দাবি, “ভিটামিন ই ‘সাপ্লিমেন্ট’ সচেতনভাবে এড়িয়ে চলা উচিত। এর স্বাস্থ্যগত
উপকারিতার পেছনে শক্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই বললেই চলে। উল্টা কিছু মানুষের ক্ষেত্রে
তা ক্ষতিকর।”
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন
অবলম্বনে জানানো হলো ভিটামিন ই ‘সাপ্লিমেন্ট’য়ের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অংশ ভিটামিন ই: গমের অঙ্কুর থেকে তৈরি তেল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, পার্সলে,
অ্যাভোকাডো, কুমড়ার দানা, সূর্যমুখীর বীজ, পালংশাক ইত্যাদিসহ আরও অনেক খাবার থেকে ভিটামিন
ই মেলে। এই ভিটামিনটি মূলত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ঘরানার।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট
অফল হেলথ (এনআইএইচ)’য়ের ‘অফিস অফ ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টস’য়ের ভাষ্যমতে, “অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’য়ের
কাজ হল ‘ফ্রি র্যাডিক্যাল’ বা মুক্ত মৌলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীরের কোষকে রক্ষা
করা। এই মুক্ত মৌলই দায়ী ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতো দূরারোগ্য ব্যাধির জন্য।”
ভিটামিন ই একটি একক বস্তু নয়, একাধিক
উপাদানের সমষ্টি, যা অসংখ্য উদ্ভিজ্জ খাবারে পাওয়া যায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের
দৈনিক ১৫ গ্রাম ভিটামিন ই প্রয়োজন। আর তার সবটুকুই স্বাভাবিক স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
থেকে সহজেই যোগান দেওয়া সম্ভব।
অপরিদিকে, ভিটামিন সি শরীরে সংরক্ষণ হয়
না। তবে ভিটামিন ই’য়ের সেই সমস্যা নেই। দৈনিক ভিটামিন ই’য়ের চাহিদা পূরণ হওয়ার পর অবশিষ্টটুকু
তাৎক্ষণিত শরীর জমা করে রাখে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য।
অতিরিক্ত ভিটামিন ই: এনআইএইচ’য়ের অফিস অফ ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টস’য়ের মতে, ভোজ্য উৎস থেকে অতিরিক্ত
ভিটামিন ই শরীরের জমা হলে সমস্যা হয় না। তবে উৎস যদি ‘সাপ্লিমেন্ট হয়, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি
ভিন্ন।
অতিরিক্ত ভিটামিন ই ‘সাপ্লিমেন্ট’ রক্ত
জমাট বাঁধার ক্ষমতা নষ্ট করে, ফলে সামান্য কাটাছড়ায় প্রচুর রক্তপাত হয়।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ একদিনে সর্বোচ্চ
১০০০ মি.লি. গ্রাম পর্যন্ত ভিটামিন ই গ্রহণ করতে পারেন কোনো রকম সমস্যা ছাড়া। এর বেশি
হলে সমস্যা হবে তার উৎস যাই হোক না কেনো।
আবার ‘সাপ্লিমেন্ট’ থেকে ভিটামিন ই আসলে
এই সর্বোচ্চ মাত্রার নিচেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এক গবেষণায় দেখা যায়, যেসব পুরুষ কয়েক
বছর ধরে প্রতিদিন ১৮০ মি.লি.গ্রাম ‘সিনথেটিক’ ভিটামিন ই গ্রহণ করেছেন, তাদের ‘প্রস্টেট
ক্যান্সার’য়ের ঝুঁকি অন্যান্যদের তুলনায় কয়েকগুন বেশ ছিল।
ওষুধের সঙ্গে বিক্রিয়া: এনআইএইচ’য়ের দাবি, ভিটামিন ই ‘সাপ্লিমেন্ট’ বিভিন্ন ওষুধের সঙ্গে
মিলে ওই ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট করা কিংবা পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। যেমন- ‘অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট’
ও ‘অ্যান্টিপ্লেটলেট’ ধরনের ওষুধের সঙ্গে মিলে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট করে রক্তপাতের
মাত্রা বাড়ায়।
আবার অন্যান্য ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’
নিষ্ক্রিয় করতেও সক্ষম ভিটামিন ই’য়ের ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’। কেমোথেরাপি ও অন্যান্য
রেডিয়েশন থেরাপি’য়ের কার্যকারিতাও কমায় ভিটামিন ই।
ভিটামিন ই‘য়ের অভাব দুর্লভ ঘটনা
এই ভিটামিনটি এতো বেশি খাবারে পাওয়া যায়
যে এর অভাব তৈরি হওয়ার ঘটনা খুব কমই দেখা যায়। আর একই কারণে এই ভিটামিনের ‘সাপ্লিমেন্ট’
গ্রহণ করার পরামর্শ খুব কমই দেন বিশেষজ্ঞরা।
যারা গ্রহন করেন, বেশিরভাগই নিজের সিদ্ধান্তে।
প্রয়োজন নেই তারপরও ভিটামিন ই ‘সাপ্লিমেন্ট’ নেওয়া কতটুকু ক্ষতিকর বা আদৌ ক্ষতিকর কি-না
তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাঝে মতান্তর আছে।
আর শুধু ভিটামিন ই ‘সাপ্লিমেন্ট’ই নয়,
যেকোনো ভিটামিন ‘সাপি্লমেন্ট’ গ্রহণ করার আগে এমনকি যে কোনো ওষুধ সেবনের আগে তা প্রয়োজন
আছে কি-না সে ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
আরও পড়ুন
ভিটামিন ই ক্যাপসুলের পাঁচ ব্যবহার