ক্যাটাগরি

বাঙালির বঙ্গবন্ধু দক্ষিণ এশিয়ার পূজনীয় নেতা: নেপালের প্রেসিডেন্ট

সোমবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী
ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

নেপালি প্রেসিডেন্ট বলেন, “অনলবর্ষী বক্তা, সংগঠক ও যোদ্ধা
হিসাবে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন এবং অর্জন করেছিলেন নতুন রাষ্ট্র
গঠনের লক্ষ্য। এ অঞ্চলের মানুষের কাছেও তিনি পূজনীয় নেতা।”

বাঙালির জোড়া উদযাপনে ১০ দিনব্যাপী আয়োজন ’মুজিব চিরন্তন’
এর ষষ্ঠ দিন বিদেশি রাষ্ট্রনেতা হিসেবে বক্তব্য দেন বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী।

বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিকসহ অন্যান্য
নৈকট্যের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি জন্মলগ্নের সম্পর্কের কথাও বলেন নেপালের প্রথম নারী
রাষ্ট্রপ্রধান।

তিনি বলেন, “আমি মনে করি, বাংলাদেশের ক্রমাগত অগ্রগতিই জাতি
গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন।

”তরুণ বয়স থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করেছিলেন।
তিনি ছিলেন অনন্য সাধারণ নেতা, চমৎকার সংগঠক, ব্যক্তিত্বে দৃঢ় সংকল্প এবং লড়াকু যোদ্ধা।”

নেপালের প্রেসিডেন্ট বলেন, “বঙ্গবন্ধুর অবিরাম সংগ্রাম বাংলাদেশের
জন্ম দিয়েছে। যার জন্য অবিচল নেতৃত্ব ও নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা ছিল তার। সেজন্য তাকে ১৯৬৯
সালে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিল সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, যা গোটা জাতি তাৎক্ষণিকভাবে
মেনে নিয়েছিল।

”বাংলা ভাষার জন্য গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ছিল বঙ্গবন্ধুর।
এ কারণে জনগণকে নিয়ে বাংলা ভাষাকে রক্ষা ও প্রসারে অগ্রগামী ভূমিকায় ছিলেন তিনি। নিপীড়িত,
বঞ্চিত ও দরিদ্র মানুষের জন্য গভীর সহমর্মিতা ছিল তার।”

বঙ্গবন্ধুর ’সোনার বাংলা’র স্বপ্নের সঙ্গে নেপালের ‘সমৃদ্ধ
নেপাল, সুখী নেপালি’ সংকল্পের মিল থাকার কথা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ভাণ্ডারী বলেন, “নেপালকে
সমৃদ্ধ দেশ করার জন্য আমাদের সব কার্যক্রম। আমি বিশ্বাস করি, উন্নয়নের মাধ্যমে নেপাল
ও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতেও ভূমিকা রাখবে।”

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদাতা দেশগুলোর মধ্যে নেপাল
ছিল ষষ্ঠ। সে কথা স্মরণ করে দেশটির প্রেসিডেন্ট বলেন, “স্বাধীনতার পর খুব অল্প সময়ের
শাসনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিলেন।”

নেপালের প্রেসিডেন্ট হয়ে এবার প্রথম এলেও এর আগে ব্যক্তিগত
সফরে বাংলাদেশের আসার কথা বক্তৃতায় উল্লেখ করেন বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী।

দুই সফরের তুলনা করে তিনি বলেন, ”এবারের সফরে আমি বাংলাদেশের
অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি
দেখতে পাচ্ছি।

”সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে
বাংলাদেশ বিপুল সংখ্যক মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করেছে এবং সেটি চলমান আছে। বন্ধু দেশের
এবং জনগণের এমন অগ্রগতির সাক্ষী হতে পেরে আমি খুশি।”

আকাশ, স্থল ও রেলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের যোগাযোগ বাড়ানোর
ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট।

বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন,
“আমাদের মাঝারি পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে আরও বেগবান করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের
সঙ্গে নেপালের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি বিরাজমান।

”বাণিজ্যকে দুই দেশের জন্যই লাভজনক করতে ঘাটতি কমিয়ে আনা দরকার।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও ত্বরান্বিত করতে বাণিজ্য বাধা দূর করা, অবকাঠামো
উন্নয়ন এবং বাজারে প্রবেশাধিকার সহজ করতে হবে।”

জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বাড়াতে নেপাল-বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের
ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী।

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে যোগ দিতে সোমবার
সকালে ঢাকায় পৌঁছান নেপালের প্রেসিডেন্ট। এরপর সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের
বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।

বিকাল সাড়ে ৪টার পর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানের
ভেন্যুতে  এলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা তাকে স্বাগত জানান।