সোমবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলাম এই দাবি করে।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক ছাড়াও হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নূরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি জুনায়েদ আল হাবীব, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, আতাউল্লাহ আমিন উপস্থিত ছিলেন।
এক হিন্দু যুবকের ফেইসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বুধবার শাল্লার গ্রাম নোয়াগাঁওয়ে ওই সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর ও তছনছ করা হয় বলে পুলিশের ভাষ্য।
এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে শাল্লা থানার ওসি নাজমুল জানিয়েছিলেন, গত ১৫ মার্চ দিরাই উপজেলায় হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত সম্মেলনে যান হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। সম্মেলনে মামুনুল হকের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেন স্থানীয় এক হিন্দু যুবক।
ওই ঘটনাকে ধর্মীয় উসকানি আখ্যায়িত করে ওই এলাকার মামুনুল হকের অনুসারীরা মঙ্গলবার রাতে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাতেই ওই যুবককে আটক করে বলে জানান ওসি।
“এরপর ১৭ মার্চ সকালে কাশিপুর, নাচনী, চণ্ডিপুরসহ কয়েকটি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামের হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কয়েক হাজার অনুসারী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে নোয়াগাও গ্রামে অতর্কিত হামলা চালায়,” বলেন ওসি।
সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, “গত ১৭ মার্চ বুধবার সকালে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের সংখ্যালঘুদের উপর জঘন্য আক্রমণ হয়েছে। ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বসতভিটা। হেফাজত তাৎক্ষণিক এর নিন্দা জানিয়েছে এবং আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে পুনরায় নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
“কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হল, এই ঘটনার যাচাই-বাছাই ছাড়াই এক শ্রেণির মিডিয়া তাৎক্ষণিক প্রচার শুরু করে দেয় যে, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে জনৈক ঝুমন দাসের ফেইসবুকে কটুক্তির প্রতিবাদে এই হামলা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এভাবে কোনো ধরনের নিরপেক্ষ বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই এই ঘটনার দায় হেফাজতে ইসলামের উপরে চাপানোর চেষ্টা করা হয়। অথচ দুদিনের মাথায় জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এই বর্বরোচিত ঘটনার সাথে হেফাজতে ইসলাম বা মাওলানা মামুনুল হকের দূরতম কোনো সম্পৃক্ততাও নেই।”
ওই হামলার ঘটনায় আলোচিত ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম স্বাধীন ওরফে স্বাধীন মেম্বারকে গত ২০ মার্চ গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হামলাকারীদের বেশিরভাগই আসে স্বাধীনের গ্রাম দিরাইয়ের নাচনি থেকে। স্বাধীনের ‘উপস্থিতিতেই’ সেদিন হামলা হয়।
তদন্তকারীরা বলছেন, স্বাধীন মেম্বারের সাথে জলমহাল নিয়ে নোয়াগাঁওবাসীর পুরনো বিরোধ রয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক ব্যক্তির কথায় স্বাধীন মেম্বারের নাম এসেছে।
ফোজত নেতা জুনায়েদ বলেন, “দু’দিন পরেই এই হামলার মূল রহস্য উম্মোচন হয়েছে। জলমহাল নিয়ে সেখানে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ ছিল। পূর্ববিরোধের জের ধরে ঝুমন দাস আপনের আপত্তিকর ফেইসবুক স্ট্যাটাসকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেই এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ফেইসবুক কটূক্তিকে মেম্বার স্বাধীন ও তার সহযোগীরা নিজেদের দূরভিসন্ধি বাস্তবায়নে কাজে লাগিয়েছে। এর মাধ্যমেই অসদুদ্দেশ্যে হেফাজতের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “যখনই কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ও বাড়িঘরে হামলা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তৎক্ষণাৎ দেশি-বিদেশি চিহ্নিত ইসলাম বিদ্বেষী মহল ইসলামী সংগঠন এবং ওলামায়ে কেরামের ওপর দায় চাপিয়ে বিভ্রান্তিকর ও প্রোপাগান্ডা চালায়।
“অথচ পরবর্তীতে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার কিংবা রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে এমন ঘটনা সংঘটিত হবার প্রমাণ মিললেও মিডিয়া তার অসত্য নিউজের জন্য ভুল স্বীকার করে না। এতে সামাজিকভাবে ওলামায়ে কেরাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
জুনায়েদ বলেন, “সরকারের কাছে আমরা আহ্বান করছি, শাল্লার ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। একইসাথে আমরা সুনামগঞ্জের ওলামায়ে কেরামসহ সবাইকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই।”
তিনি সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।
দেশবিরোধী যেকোনো চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোও হেফাজতে ইসলামের নৈতিক কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত বলে জুনায়েদ আল হাবীব জানান।
আরও পড়ুন
শাল্লায় হিন্দুদের গ্রামে হামলা:
‘মূল আসামি’ স্বাধীন মেম্বার গ্রেপ্তার
শাল্লায় রাতভর অভিযান, দুই
মামলায় আসামি দেড় সহস্রাধিক
শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলায়
জড়িতদের ছাড় নয়: র্যাব মহাপরিচালক