গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নির্দয় নিপীড়ন চালানো বাহিনীগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর আরও নিষেধাজ্ঞার খবরের মধ্যেই মঙ্গলবার সামরিক জান্তার মুখপাত্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভকতারীদের দুষলেন।
জান্তার মুখপাত্র জ মিন তুন নেপিডোতে এক সংবাদ সম্মেলনে অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনে ১৬৪ বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর খবরও স্বীকার করে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা।
“তারা আমাদের নাগরিকও,” মঙ্গলবার নেপিডোতে সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বলেছেন তিনি।
তবে অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনার্সের (এএপিপি) হিসাবে, অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক দমনাভিযানে অন্তত ২৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবারই মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে এক কিশোরসহ তিনজন নিহত হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের পাশাপাশি স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এরপর রাতভর নিরাপত্তা বাহিনী ইয়াংগনের একাংশে অভিযান চালায়। সেখানে গুলির শব্দ শোনা গেছে, কয়েকজন আহতও হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম মিজিমা।
দেশটির সামরিক জান্তা ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পেছনে গত বছরের ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে হওয়া ‘জালিয়াতিকে’ ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ওই নির্বাচনে নোবেলজয়ী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল।
সেনাবাহিনী ও তাদের সমর্থকরা নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলে ফল গণনার পর থেকে অভিযোগ জানিয়ে এলেও মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশন সেসময় তা উড়িয়ে দেয়। এর ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনী ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখল, অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকে বন্দি ও মিয়ানমারজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে।
দেশটির সামরিক বাহিনীর নেতারা যত শিগগির সম্ভব নতুন নির্বাচন দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ বা সময় ঘোষিত হয়নি।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে জ মিন তুন জানান, অভ্যুত্থানের পর সহিংসতায় এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর ৯ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।
“আমরা কি এদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী বলতে পারবো? কোনো দেশ বা সংস্থা কি এই সহিংসতাকে শান্তিপূর্ণ বলতে পারবে?,” কারখানায় অগ্নিসংযোগের একটি ভিডিও দেখিয়ে বলেন সামরিক জান্তার এ মুখপাত্র।
ধর্মঘট এবং হাসপাতালগুলো পুরোপুরি কাজ না করায় অনেকের মৃত্যু হচ্ছে; এদের মধ্যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তরাও আছেন, বলেছেন জ মিন তুন।
একে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অনৈতিক’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।
সামরিক জান্তার এ মুখপাত্র গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া সংবাদ’ প্রকাশ করে অস্থিরতায় হাওয়া দেওয়ারও অভিযোগ আনেন। জান্তার হাতে ধরা পড়েনি, সিআরপিএইচ নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত সু চি সরকারের অংশবিশেষের সঙ্গে কোনো সাংবাদিকের যোগাযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধেও মামলা হতে পারে বলে এ সেনা কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন।
সিআরপিএইচকে ‘অবৈধ সংগঠন’ ঘোষণা করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
নভেম্বরের নির্বাচনে এনএলডি সু চির আসনসহ অনেকগুলো এলাকায় হাজারও ভুয়া ভোটার বানিয়ে, কয়েকশ এমনকি কোথাও কোথাও কয়েক হাজার ব্যালট ছাপিয়ে জালিয়াতি করেছে বলে সামরিক জান্তা যে অভিযোগ করে আসছে তার সপক্ষে কিছু ‘তথ্য-প্রমাণও’ দিয়েছেন জ মিন তুন।
তিনি ইয়াংগনের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফিও মিন থেইনের একটি ভিডিও সাক্ষ্য দেখান। ওই ভিডিওতে ফিও বলেন, তিনি বেশ কয়েকবারই সু চির সঙ্গে দেখা করেছেন এবং নোবেলজয়ী নেত্রী তাকে ‘যখনই প্রয়োজন হত’ তখনই টাকা দিতেন।
সু চির আইনজীবী এ অভিযোগকে ‘বানানো’ অ্যাখ্যা দিয়ে তা উড়িয়ে দিয়েছেন।
সোমবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে অভ্যুত্থান ও বিক্ষোভকারীদের ওপর নিপীড়নে সংশ্লিষ্টদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
ইইউ যে ১১ জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তার মধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও ক্ষমতা দখল করা সামরিক জান্তার প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নামও আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় মিয়ানমার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থান হ্লাইং ও সেনা কর্মকর্তা অং সোয়ের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশীয় দেশটির সেনাবাহিনীর ১৮ ও ৭৭তম পদাতিক ডিভিশন।
এসব নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।