ক্যাটাগরি

শিক্ষা গ্রহণে শিশুর অক্ষমতা বোঝার উপায়

চিকিৎসা-বিজ্ঞানের ভাষায় ‘ডিসকালকুলিয়া’
এক ধরনের শেখার অক্ষমতা। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণ উপায়ে যে কোনো সংখ্যাযুক্ত
তথ্য কিংবা পদ্ধতি শিখতে, বুঝতে ও রপ্ত করতে পারেনা।

ফলে যেকোনো হিসাব, সংখ্যার ক্রম ও গাণিতিক
যুক্তি তাদের বুঝতে সমস্যা হয়। পাশাপাশি একটি সংখ্যার সঙ্গে আরেকটি সংখ্যার সম্পর্ক,
সাংকেতিক চিহ্ন, দিক নির্দেশনা, সময় দেখা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয় অস্বাভাবিক
মাত্রায়।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন
অবলম্বনে জানানো হলো বিস্তারিত।   

লক্ষণ

স্বাভাবিক যেকোনো হিসাব বুঝতে না পারার
সমস্যার তীব্রতা নির্ভর করবে এর কারণ এবং যিনি পারছেন না তার বয়সের ওপর। বিভিন্ন বয়সে
শিশুদের মাঝে ‘ডিসকালকুলিয়া’র লক্ষণ বিভিন্ন হতে পারে। 

স্কুলের আগে: দুই
থেকে পাঁচ বছর বয়সিদের অক্ষরজ্ঞানে হাতেখড়ি হয়। ‘ডিসকালকুলিয়া’র সমস্যা থাকলে এসময়
শিশুর ১ থেকে ১০ গুনতে অস্বাভাবিকমাত্রায় সমস্যা দেখা দেবে। এই সমস্যা ১০০ পর্যন্ত
গুনতে না পারা পর্যন্তও গড়াতে পারে।

অনেকগুলো বস্তু একটি একটি করে গুনতে অসুবিধা
হতে পারে। সেই সঙ্গে একই সংখ্যক বস্তুর একাধিক সমষ্টিকে একটি সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করা
যায় এই ধারণা তাদের বুঝতে অসুবিধা দেখা দেবে।

যেমন- পাঁচ সংখ্যাটি দিয়ে পাঁচটি আঙুল,
পাঁচটি কলা, পাঁচটি কুকুর এই সবগুলোকেই চিহ্নিত করা যায় সেটা তারা ধরতে পারে না। এক
থেকে ২০ পর্যন্ত সংখ্যাগুলো লিখতে বা চিনতে সমস্যা হয়। আবার সংখ্যার ক্রমানুসারে গোনার
সময় কিছু সংখ্যা বাদ পড়ে যায়।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকার অবস্থায়: ছয় থেকে ১৩ বছর বয়সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসে সমস্যার চেহারা
পাল্টায়। দুই, পাঁচ ‍ও ১০ এর ঘরের সংখ্যাগুলো গুনতে সমস্যা হয়। মনে মনে অঙ্ক কষতে পারে
না। যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ ইত্যাদির চিহ্নগুলো চিনতে পারে না। একটি সংখ্যা থেকে আরেকটি
সংখ্যা ছোট কিংবা বড় এই বিষয়টা মাথায় আসে না।

সাধারণ যোগ যেমন- ১০ এর সঙ্গে ১০ যোগ
করলে ২০ হয়, এটা তাদের বুঝতে অসুবিধা হয়্। আবার পাঁচের সঙ্গে পাঁচ যোগ করলে যদি ১০
হয়, তবে ১০ থেকে পাঁচ বাদ দিয়ে পাঁচ হবে, এই সম্পর্ক তারা বুঝতে পারেনা।

ডান, বাম চিনতেও অসুবিধা হতে পারে। সংখ্যাভিত্তিক
যেকোনো খেলা তারা এড়িয়ে চলবে। 

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার পর্যায়: এই সময়ে দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ যোগ,
বিয়োগ, গুন, ভাগ করতে তাদের অস্বাভাবিক ধরনের অসুবিধা দেখা যায়। মানচিত্র, তালিকা,
গ্রাফ ইত্যাদি তারা বুঝতে পারেনা। দৌড়ানো, যানবাহন চালানো ইত্যাদি যেসব কাজে গতি ও
দূরত্বের আন্দাজ থাকা জরুরি সেই কাজগুলোতে তারা প্রচণ্ড দ্বিধাগ্রস্ত হয়।

রোগ চেনার উপায়

সব লক্ষণ বাবা-মা কিংবা অভিভাবকদের চোখে
নাও পড়তে পারে। তাই সন্দেহ হলে প্রথমেই সন্তানের শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলাপ করতে
হবে। পেশার খাতিরে একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমায় একজন শিশুর কতটুকু জ্ঞান থাকা স্বাভাবিক
সেটা শিক্ষকরাই ভালো জানবেন।

‘ডিসকালকুলিয়া’তে আক্রান্ত সব শিশুর লক্ষণ
পুরোপুরি এক হবে না। তাই সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতেই হবে।

গুনতে না পারাই এই রোগ চিহ্নিত করার প্রধান
উপায়। বিভিন্ন আকার-আকৃতি চেনা এবং আঁকতে পারা অঙ্কের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত।
তাই স্মৃতি থেকে কোনো নির্দিষ্ট আকৃতি আকঁতে পারছে কি-না সেটাও ‘ডিসকালকুলিয়া’ চেনার
একটি পদ্ধতি। এমন আরও বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমেই বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন
শিশুর এই সমস্যা আছে কি-না, আর থাকলে তার তীব্রতা কতটুকু।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন


সন্তানের হতাশাগ্রস্ততা বোঝার পন্থা
 

সন্তানের অনলাইন ক্লাস কার্যকর করার উপায়
 

শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর উপায়