ক্যাটাগরি

তামিম-মিঠুনের ব্যাটে বাংলাদেশ ২৭১

সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ক্রাইস্টচার্চে নিউ জিল্যান্ডের
বিপক্ষে ৫০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ২৭১।

বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ফিফটির
ফিফটি করার ইনিংসে তামিম করেন ৭৮। অধিনায়কের দারুণ ইনিংসটি শেষ হয় জিমি নিশামের অসাধারণ
‘ফুট ওয়ার্কে’ রান আউট হয়ে।

পাঁচে নেমে মিঠুন অপরাজিত থাকেন ৬ চার ও ২ ছক্কায়
৫৭ বলে ৭৩ রান করে। নিউ জিল্যান্ডে ৪ ইনিংস খেলে এটি তার তৃতীয় ফিফটি।

এই মাঠে ২৬০ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই।
তবে উইকেট এ দিন দারুণ ব্যাটিং সহায়ক। নিউ জিল্যান্ডের উইকেট বিবেচনায় যদিও খানিকটা
মন্থরও। তবে এই মাঠের প্রথম দিন-রাতের ম্যাচ এটি, কৃত্রিম আলোয় উইকেটের আচরণ দেখার
আছে।

বাংলাদেশের ইনিংসে অর্ধশত রানের জুটি তিনটি, আরেকটি
জুটি ৪৮ রানের।

আগের ম্যাচের মতোই টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ।
হ্যাগলি ওভালে রোদ ঝলমলে দুপুরে উইকেটে ছিল না আর্দ্রতা। নেই ঘাসের ছোঁয়াও।

বাংলাদেশ তবু ধাক্বা খায় শুরুতে। লিটন দাস পারেননি
এই উইকেটেও নিজেকে খুঁজে পেতে। বিদায় নেন ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই।

ব্যাটিং ক্রিজের বেশ বাইরে স্টান্স নেওয়া লিটন পুল
করেন ম্যাচ হেনরির শর্ট বলে। তবে না পারেন তিনি অনেক উঁচিয়ে মারতে, না পারেন নিচে রাখতে।
বল যায় সরাসরি স্কয়ার লেগে ফিল্ডার উইল ইয়াংয়ের হাতে। চার বলে শূন্য রানেই শেষ তার
ইনিংস।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের ৩ ম্যাচের পর এই সিরিজের ২
ম্যাচ, এই ৫ ইনিংস মিলিয়ে লিটনের রান ৫৫। শূন্য দুটিতে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪১ ইনিংসে
তার ষষ্ঠ শূন্য।

তামিম শুরু করেন প্রথম ওভারে ট্রেন্ট বোল্টকে আত্মবিশ্বাসী
এক ফ্লিকে চার মেরে। তবে লিটনের বিদায়ের পর সাবধানী হয়ে ওঠেন কিছুটা। তিনে নেমে সৌম্য
সরকার ব্যাটে-বলে করতেই ধুঁকতে থাকেন শুরুতে। বেশ কয়েকবার অল্পের জন্য তার ব্যাটের
কানা নেয়নি বল।

৭ ওভার শেষে দলের রান ছিল ১ উইকেটে ১৪।

অষ্টম ওভারে হেনরিকে দারুণ তিনটি বাউন্ডারিতে রানের
গতি কিছুটা বাড়ান তামিম। প্রথমটি ফ্লিক করে, পরের পুল শটে, শেষটি নান্দনিক স্কয়ার ড্রাইভে।

১০ ওভার শেষে সৌম্যর রান ছিল ২১ বলে ২। একাদশ ওভারে
কাইল জেমিসনকে অফ ড্রাইভে প্রথম বাউন্ডারি পান তিনি। পুরো ছন্দ না পেলেও এরপর কিছুটা
সাবলীল হতে শুরু করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

তবে ক্যাচ মতো দিয়ে রক্ষাও পান তিনি একবার। ১৫তম ওভারে
জেমিসনের বলে তার ফ্লিকে দুর্দান্ত ফুল লেংথ ডাইভে এক হাতে ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টা করেন
হেনরি নিকোলস। তবে বলে হাত ছোঁয়ালোও শেষ পর্যন্ত তালবন্দী করে রাখতে পারেননি।

বিতর্কের খোরাক জোগানোর মতো একটি ঘটনা ঘটে পঞ্চদশ
ওভারে। তামিমের ড্রাইভে অনেকটা নিচু হয়ে ফিরতি ক্যাচ নেন ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার বোলার
কাইল জেমিসন। বোলারসহ কিউই ফিল্ডাররা উল্লাসে মাতেন। কিন্তু ক্যাচ নিয়ে সংশয়ে সিদ্ধান্ত
যায় টিভি আম্পায়ারের কাছে। মাঠের আম্পায়ারের সফট সিগনাল ছিল ‘আউট।’

টিভি আম্পায়ার বারবার রিপ্লে দেখে রায় দেন, ক্যাচ
নেওয়ার পর একদম শেষ মুহূর্তে বল পুরো নিয়ন্ত্রণে ছিল না জেমিসনের, বল খানিকটা স্পর্শ
করে মাটিতে। মাঠের বড় পর্দায় ‘নট আউট’ সিদ্ধান্ত দেখে হতাশার ভঙ্গি করেন জেমিসন।

তামিম ফিফটি ছোঁয়ার আগেই বিদায় নেন সৌম্য। ড্যারিল
মিচেলকে বেরিয়ে এসে ছক্কা মারার পর মনে হচ্ছিল, আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছেন। কিন্তু হুট
করে অতিআগ্রাসান ডেকে আনে তার বিপদ। স্যান্টনারকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে
যান ৪৬ বলে ৩২ করে। শেষ হয় তামিমের সঙ্গে তার ৮১ রানের জুটি।

এরপর তামিম ও মুশফিকের জুটিও জমে উঠছিল। ৮১ বলে ফিফটি
ছোঁয়ার পর তামিম খেলছিলেন দারুণ। রানের গতিও বাড়াচ্ছিলেন। তখনই নিশামের অসাধারণ প্রচেষ্টায়
তিনি রান আউট। 

নিশামের একটি বল মুশফিকুর রহিম আলতো করে খেলেই ছুটতে
থাকেন দ্রুত সিঙ্গেল নিতে। সাড়া দেন তামিম। ছুটে আসেন বোলার নিশামও। নিচু হয়ে বল কুড়িয়ে
থ্রো করার সময় তখন নেই। নিশাম বাঁ পায়ে টোকা দেন বলে, একদম নিখুঁত নিশানা। বল যখন স্টাম্পে
লাগল, তামিম তখন ক্রিজ থেকে বেশ দূরে।

১০৮ বলে ১১ চারে ৭৮ করে তামিম ফিরলেন হতাশ হয়ে। মুশফিকের
সঙ্গে জুটি থামে ৪৮ রানে।

চতুর্থ উইকেটে মুশফিক ও মিঠুনের সৌজন্যে আরেকটি অর্ধশত
রানের জুটি পায় দল। মুশফিক অবশ্য স্বচ্ছন্দ ছিলেন না খুব। রান বাড়ান মূলত মিঠুন। উইকেটে
যাওয়ার পরপরই দারুণ এক ছক্কা মারেন জেমিসনকে। সাবলীল ব্যাটিংয়ে তিনি এগিয়ে নেন দলকে।

মুশফিকের অস্বস্তিময় উপস্থিতি শেষ হয় ৫৯ বলে ৩৪ রান
করে স্যান্টনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে। তবে মিঠুন পথ হারাননি। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে গড়েন
৪৫ বলে ৬৩ রানের জুটি। যেখানে মিঠুনের অবদান ২৪ বলে ৩৪!

মাহমুদউল্রাহ পারেননি কাজ শেষ করে আসতে। মেহেদি হাসান
ফেরেন বোল্টকে দারুণ এক ছক্কা মারার পরই। মিঠুনকে ফেরানে পারেননি কেউ। শেষ বলেও তার
ব্যাট থেকে আসে বাউন্ডারি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৭১/৬ (তামিম ৭৮, লিটন ০, সৌম্য
৩২, মুশফিক ৩৪, মিঠুন ৭৩*, মাহমুদউল্লাহ ১৬, মেহেদি ৭, সাইফ ৭*; বোল্ট ১০-০-৪৯-১, হেনরি
১০-৩-৪৮-১, জেমিসন ১০-২-৩৬-১, নিশাম ৯-০-৭৩-০, স্যান্টনার ১০-০-৫১-২, মিচেল ১-০-৮-০)।