যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বে এই প্রথম বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ নিল পশ্চিমা পক্ষগুলো, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বেইজিং তাৎক্ষণিকভাবে ইইউয়ের বিরুদ্ধে পাল্টা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। তারা ইউরোপীয় আইনপ্রণেতা, কূটনীতিক, ইনস্টিটিউট ও পরিবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চীনের সঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা নিষিদ্ধ করে।
চীনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের মুসলিম উইঘুরদের নির্বিচার আটকের বিষয়ে বেইজিংয়ের জবাবদিহিতা চায় পশ্চিমা সরকারগুলো। চীনের ওই অঞ্চলে ‘গণহত্যা’ সংঘটিত হচ্ছে বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের।
চীন শিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মিত্রদের নিয়ে চীনের মুখোমুখি হওয়ার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি বাইডেনের চীন নীতির মূল অংশ যা ধীরে ধীরে রূপলাভ করছে। পশ্চিমা দেশগুলোর এই সমন্বিত উদ্যোগ ওয়াশিংটনের সেই তৎপরতারই আগাম ফল বলে ধারণা রয়টার্সের।
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীন সম্পর্কিত ইস্যুগুলো নিয়ে তারা প্রতিদিন ইউরোপের সরকারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন, এটিকে তারা ‘ইউরোপ রোডশো’ বলে অভিহিত করছেন।
চলতি সপ্তাহে ইইউ ও নেটো কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্রাসেলসে বৈঠকে বসার আগে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, “ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যেও (চীন) শিনজিয়াংয়ে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।”
কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “জমতে থাকা প্রমাণে চীনের কর্তৃপক্ষগুলোর পদ্ধতিগত, রাষ্ট্রপরিচালিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।”
মানবাধিকার আন্দোলনকারীরা ও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিনজিয়াংয়ে অন্তত ১০ লাখ মুসলিমকে বিভিন্ন শিবিরে আটক করে রাখা হয়েছে।
এসব শিবিরে নির্যাতন, শ্রমে বাধ্য করা ও নির্বীজন করা হচ্ছে বলে চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন পশ্চিমা রাজনীতিক ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে চীন বলছে, এসব শিবিরে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রয়োজনেই এটি করা হচ্ছে।
সোমবার ইইউ প্রথম চীনের চার জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, এদের মধ্যে একজন শীর্ষ নিরাপত্তা পরিচালক আছেন। পরে যুক্তরাজ্য ও কানাডাও একই সিদ্ধান্ত নেয়। যুক্তরাষ্ট্রও তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তাদের মধ্যে শিনজিয়াং জননিরাপত্তা ব্যুরোর পরিচালক চেন মিংগুয়ো ও ওই অঞ্চলের আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওয়াঙ জুনঝেং আছেন।
যুক্তরাষ্ট্র এর আগেই শিনজিয়াংয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা চেন কুয়ানগুয়োর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা মিত্ররা তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। বড় ধরনের কূটনৈতিক বিরোধ এড়াতেই তারা এমনটি করেছে বলে মত বিশেষজ্ঞ ও কূটনীতিকদের।
কানাডা ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্লিনকেনের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানায়, তারা একত্রে শিনজিয়াংয়ে বেইজিংয়ের ‘দমনমূলক অনুশীলন’ অবসানের দাবি জানাচ্ছে।
পৃথকভাবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিবৃতি দিয়ে শিনজিয়াংয়ের পরিস্থিতি নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে। তারা কানাডা, ইইউ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
বেইজিং দ্রুততার সঙ্গে এসব পদক্ষেপে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা ইইউয়ের আইনপ্রণেতা, ইইউয়ের প্রধান বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের কমিটি ‘পলিটিক্যাল এন্ড সিকিউরিটি কমিটি’ এবং দুটি ইনস্টিটিউটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এর জবাব দিয়েছে।