ক্যাটাগরি

বিশ্বকে বলার মত গল্প দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু: ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

বুধবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে তিনি বলেন, “আজকে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী এবং এমন একটি দেশের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করছি, যেটার জন্য তিনি পুরো জীবন ব্যয় করেছেন।

“আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, অন্যকে বলার মত একটি গল্প প্রত্যেক মানুষ ও জাতির অবশ্যই থাকা উচিত। বিশ্বের সব মানুষকে বলার মত একটি চমৎকার গল্প বাংলাদেশকে দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।”

‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার অষ্টম দিনে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং।

বক্তৃতায় বাংলাদেশের ‘অভাবনীয়’ অগ্রগতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করার পাশাপাশি ভুটানের সঙ্গে ‘চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা লোটে শেরিং এ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর একটি উদ্ধৃতি ও তাকে নিয়ে লেখা কবি অন্নদা শঙ্কর রায়ের কবিতাংশ বাংলায় পড়লে বিপুল করতালি দেন দর্শকরা।

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর চেতনা চির জাগরুক থাকুক। যেভাবে কবি অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছেন, ‘যতদিন রবে পদ্মা, যমুনা, গৌরি, মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’ এই কথাগুলো আমার বেশ ভালো লেগেছে।”

জিডিপির বদলে জিএনএইচকে (সম্মিলিত জাতীয় সুখ) গুরুত্ব দেওয়ার যে নীতি ভুটানের রাজা তার দেশবে দিয়েছেন, তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নীতির মিল খুঁজে পাওয়ার কথা বলেন লোটে শেরিং।

“উন্নয়নের যে নীতি আমাদের রাজা দিয়েছেন, আমি এটাকে আপনাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের একই রকম প্রজ্ঞার সঙ্গে খুব ভালোভাবে মেলাতে পারি।

“যিনি বলেছেন, ’সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বিদ্বেষ নয়’। শেখ মুজিবুর রহমান উদ্ভাবন করেছেন, কারও সাথে বিদ্বেষ নয়। আমাদের রাজা উদ্ভাবন করেছেন, শান্তি ও সৌহার্দ্য সাফল্যের চাবিকাঠি।”

একই ধরনের নীতির কারণে দুই দেশের মধ্যে যে ‘মমত্বপূর্ণ ও চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্ক থাকবে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই বলেও মন্তব্য করে লোটে শেরিং।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আরও বেশি গর্বিত, কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন অনুপ্রেরণাদায়ী নেতা এবং আমার কাছে মাতৃসুলভ ব্যক্তিত্ব।”

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “দূর থেকেও আমি বাংলাদেশের মানুষের জন্য তার উদ্বেগ লক্ষ্য করেছি। তার মত একজন নেতা পেয়ে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে ধন্য হয়েছে।

“আমি নিশ্চিত, শেখ মুজিবুর রহমানও পরপার থেকে বাংলাদেশ এবং তার মেয়ে শেখ হাসিনার জন্য গর্বিত।”

মানুষের সুখ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করাকে ভুটানের রাজা সবসময় তার ‘পবিত্র দায়িত্ব’ বিবেচনা করেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বলেন, “রাজা ও বঙ্গবন্ধুর মত নেতাদের মানবতা ও সহমর্মিতার নীতি পুরো পৃথিবীতে প্রত্যাশিত শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে পারে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিপুল জনসংখ্যা নিয়েও শেখ হাসিনা ও তার সরকার যেভাবে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলা করেছে, তা প্রশংসার যোগ্য।”

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শান্তিপূর্ণ, প্রগতি ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশের জন্য তার যে চেতনা, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। আমি সম্মান জানাতে এসেছি শেখ হাসিনার প্রতি, যিনি তার বাবার সোনার বাংলা স্বপ্ন ধারণ করে কাজ করে চলেছেন।

“শেখ হাসিনা এমন একজন নেতা, যিনি তার জনগণের স্বাধীনতা ও সুখকে সবকিছুর ‍উপরে স্থান দেন।”

বাংলাদেশ ‘সবক্ষেত্রে’ অগ্রগতি অর্জন করেছে মন্তব্য করে লোটে শেরিং বলেন, “প্রতিবার সফরের সময় এই পরিবর্তন আমার চোখের সামনে ভাসে। বিশেষ করে গত এক দশকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে উন্নতি অর্জন করেছে, তা প্রশংসনীয়।

“মহামারীর মধ্যেও আপনারা এই মহাদেশের অন্যতম দেশ, যারা সর্বাধিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছেন, সেজন্য অভিনন্দন।”

বাংলাদেশের ভবিষ্যত উন্নয়নের পূর্বাভাসকে ‘অভাবনীয়’ হিসাবে বর্ণনা করে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা এজন্যও গর্বিত, কারণ বাংলাদেশের এই অগ্রগতি ভুটানসহ এ অঞ্চলের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার হতে পারে।”

লোটে শেরিং বলেন, “এই ধরনের তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠান কেবল বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের মানুষের উদ্দীপনা জাগ্রত করতে পারে। বিশেষ করে এমন সময়ে, যখন করোনাভাইরাস মহামারী অনেক মূলবান প্রাণ নিয়ে গেছে এবং লাখ লাখ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করেছে।”

বক্তৃতা শুরুর আগে বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নিজের দেশের একটি স্মারক ডাকটিকেট শেখ হাসিনার তুলে দেন লোটে শেরিং।