করোনাভাইরাস মহামারীতে মৃত্যুর সংখ্যা বুধবার বিষাদময় এ মাইলফলক পার হয় বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনাভাইরাসে বিশ্বে ব্রাজিলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হওয়া প্রতি চার জনের একজন ব্রাজিলের বাসিন্দা। এভাবে দেশটি কোভিড-১৯ মৃত্যুর বৈশ্বিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
দক্ষিণ আমেরিকার এ দেশটিতে বুধবার ৮৯ হাজার ৯৯২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং দুই হাজার নয় জন মারা গেছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এর আগের দিন দেশটিতে তিন হাজার ২৫১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
সামঞ্জস্যহীন টিকা কর্মসূচী, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়া এবং দেশজুড়ে জনস্বাস্থ্যগত বিধিনিষেধের অভাবে ব্রাজিলে প্রাদুর্ভাব মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
লকডাউনের পদক্ষেপ আটকে দিয়ে, টিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের মতো প্রমাণিত ওষুধের ব্যবহারের জন্য চাপ দিয়ে বিশ্বজুড়ে কুখ্যাতি কুড়িয়েছেন দেশটির উগ্র-ডানপন্থি, সেনাবাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো।
মহামারী শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত চারবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিবর্তন করেছেন তিনি। তবে প্রাদুর্ভাব যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা নিয়ে এখন চাপে আছেন তিনি।
এ পরিস্থিতিতে তার নিয়োগকৃত চতুর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মার্সেলো কেইরোগা বুধবার কাজে যোগ দিয়ে সরকার টিকা কর্মসূচী জোরদার করার লক্ষ্য নিয়েছে বলে তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন। প্রতিদিন ১০ লাখ লোককে টিকা দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
টিকা, মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ববিধি ভাইরাস সংক্রমেণের গতি ধীর করার প্রধান উপায় বলে মন্তব্য করেছেন কেইরোগা। কেউ লকডাউন চায় না এবং বিশেষকরে ব্রাজিলীয়দের পক্ষে এমন কিছু মেনে চলার সম্ভাবনা কম বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে ওঠায় বোলসোনারো মহামারীকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তবে রাজনীতির মাঠে তার বামপন্থি প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভার আর্বিভাবও তাকে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে প্রভাবিত করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
লুলাকে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া রায় সম্প্রতি বাতিল করা হয়েছে আর আগামী বছর তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ারও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বুধবার করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পদক্ষেপ নিয়ে সদ্য চালু হওয়া একটি কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বোলসোনারো। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোর গভর্নরদের সঙ্গে আরও সমন্বয় করে মহামারী মোকাবেলার বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বলে বৈঠকে বলেছেন তিনি।
কিন্তু তার এসব তৎপরতা সত্ত্বেও মহামারীর সামগ্রিক অবস্থা বিবর্ণই রয়ে গেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
শেষ খবর পর্যন্ত ব্রাজিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যা এক কোটি ২২ লাখ ২৭ হাজার ১৭৯ জন এবং এ পর্যন্ত তিন লাখ এক হাজার ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ওয়াল্ডোমিটারের হালনাগাদ তথ্যে জানানো হয়েছে।