ক্যাটাগরি

মোদীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ

দুই উদযাপনে যোগ দিতে শুক্রবার সকালে বাংলাদেশে আসবেন প্রতিবেশী দেশের সরকার প্রধান, এরপর বিকালে যোগ দেবেন জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের জাতীয় অনুষ্ঠানে।

সকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মোদীকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; দেওয়া হবে লালগালিচা সংবর্ধনা।

২০২০ সালের মার্চে মুজিববর্ষের আয়োজনে মোদীর উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তা পিছিয়ে যায়।

বিশ্বব্যাপী মারণঘাতি এই ভাইরাসের টিকা প্রয়োগের মধ্যে মহামারীকালে সর্বপ্রথম কোনো দেশ সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

বাঙালির জোড়া উদযাপন ঘিরে মোদীর এই সফর হলেও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানাদিক নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা বলছে উভয় দেশের সরকার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এবার আমন্ত্রণের মূল বিষয় হল বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন এবং আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সফরের ‘জোরালো’ দিকও এটা।

“প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) যখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করবেন, যেগুলো আলোচনা হয়েছে এবং মোটামুটি একটা ঠিক হয়েছে, ওইগুলো যাতে বলবৎ থাকে, বাস্তবায়নে অসুবিধা না হয়, সেজন্য হয়ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরতে পারেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।”

বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার কেন্দ্রে থাকে সীমান্ত হত্যা, তিস্তাসহ অন্যান্য যৌথ নদীর পানি বণ্টন এবং অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক যোগাযোগের বিভিন্ন দিক।

এবার মোদীর সফরেও মূলে উদযাপনই থাকছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাও।

বুধবার দিল্লিতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এই সফর হবে খুব বিশেষ তাৎপর্যের এবং এর মাধ্যমে আমাদের অনন্য ও বিশেষ সম্পর্কের উদযাপন হবে। যাতে জোর পাবে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিক।”

মোদীকে আমন্ত্রণ জানানোর পেছনে একাত্তরে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার বিষয় আন্তরিকভাবে স্মরণ করছে বাংলাদেশ।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার ঠিক আগে আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর শুরু হয় কলকাতায় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী এই যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিত্রবাহিনীর কাছে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ওই যুদ্ধে এক হাজার ১৬১ ভারতীয় সেনা শহীদ হয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কোটির বেশি শরণার্থী সীমান্তবর্তী ভারতের রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিল; মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও হয়েছিল ওইসব এলাকায়।

স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের স্মরণে আশুগঞ্জে যে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, মোদীর সফরে তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।

শুক্রবার সকালে বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন মোদী; পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি।

এরপরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

এদিন বিকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসাবে যোগ দেবেন নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

এক প্রতিবেদনে ভারতের সরকারি গণমাধ্যম দূরদর্শন জানিয়েছে, উদযাপন অনুষ্ঠানে ‘মুজিব কোট’ পরবেন নরেন্দ্র মোদী ও তার সফর সঙ্গীরা। ইতোমধ্যে ‘কাস্টম ডিজাইনড’ একশটি মুজিব কোট সরবরাহও করেছে ভারতের খাদি অ্যান্ড ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রিজ কমিশন (কেভিআইসি)।

জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথভাবে ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু জাদুঘর’ উদ্বোধন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আয়োজিত রাষ্ট্রীয় ভোজেও যোগ দেবেন তিনি।

সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে সাতক্ষীরা শ্যামনগরে যশোরেশ্বরী দেবি মন্দির পরিদর্শনে যাবেন নরেন্দ্র মোদী।

সেখান থেকে গোপালগঞ্জের টুংগীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ পরিদর্শনে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন জাতির পিতার প্রতি। সমাধিসৌধে ভারতীয় কোনো প্রধানমন্ত্রীর প্রথম পরিদর্শনে মোদীকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান ওড়াকান্দি মন্দির পরিদর্শনে যাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

ওইদিন বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

এসময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পাশাপাশি ভার্চুয়ালি বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন মোদী।

সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স এবং ১২ লাখ করোনাভাইরাসের টিকা উপহার দেবেন। এর আগে বাংলাদেশেকে আরও ২০ লাখ টিকা উপহার দিয়েছিল ভারত সরকার।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দুই উদযাপনে ১০ দিনের আয়োজন ঘিরে বর্ণিলভাবে সাজানো হয়েছে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডসহ অন্যান্য এলাকা।

উদযাপনে শেষ দিনের অনুষ্ঠানে মোদীর আগমন ঘিরে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। বিভিন্ন সড়কে উড়ানো হয়েছে লাল-সবুজ আর ত্রিরঙ্গা পতাকা। নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

মোদীর সফর ঘিরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা বলেন, “ভারতের প্রতিবেশী প্রথম ও ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির মিলনস্থলে রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশটি এই অঞ্চলে আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী এবং সবচেয়ে বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার।”

বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া এই কর্মকর্তা বলেন, “দুই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের যে সম্পর্ক, সেটার উপর পুনরায় গুরুত্বারোপ করাই এই সফরের মূল বার্তা। একইসঙ্গে বাংলাদেশের দুই মাহেন্দ্রক্ষণ উদযাপন এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক আরও জোরদার।”

এর আগে ২০১৫ সালের জুনে প্রথম বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ওই সফরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল ও দুই রুটে বাস চলাচলের বিষয়ে চারটি চুক্তিসহ দুই দেশের মধ্যে মোট ১৯টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।