ক্যাটাগরি

নরেন্দ্র মোদীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা

বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবসে শুক্রবার সকালে এয়ার ইনডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।

বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে নরেন্দ্র মোদীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাকে স্বাগত জানানো হয় ২১ বার তোপধ্বনি দিয়ে।

এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে শেখ হাসিনা অভ্যর্থনা মঞ্চে পৌঁছালে তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল গার্ড অব অনার দেয়।

২০২০ সালের মার্চে মুজিববর্ষের আয়োজনে মোদীর উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তা পিছিয়ে গিয়েছিল। মহামারী শুরুর পর গত এক বছরের মধ্যে সেই বাংলাদেশেই তিনি প্রথম সফরে এলেন। বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দেবেন সম্মানিত অতিথি হিসেবে।

গার্ড পরিদর্শন শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে লাইন অব প্রেজেন্টেশনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদ,পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম,মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং তিন বাহিনীর প্রধান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীও উপস্থিত ছিলেন বিমানবন্দরে।  

প্রতিবেশী দেশের এই সরকারপ্রধানের আগমন উপলক্ষে বিমানবন্দর এলাকা বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। টার্মিনালের উপরে এবং সামনে ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকার সজ্জা। ভিভিআইপি টার্মিনালের দুই পাশে দুই সরকার প্রধানের ছবিও স্থাপন করা হয়।

স্বাধীনতার সুবর্ণ-জয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্ম-শত বার্ষিকীর পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তিতে মোদীর এ সফর বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে ভারত জড়িয়ে আছে নানাভাবে। সময়ের পরিক্রমায় দুই দেশের সম্পর্ক পৌঁছে অন্য এক উচ্চতায়।    

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার ঠিক আগে আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর শুরু হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এই যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিত্রবাহিনীর কাছে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ওই যুদ্ধে ১ হাজার ১৬১ ভারতীয় সেনা শহীদ হয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কোটির বেশি শরণার্থী সীমান্তবর্তী ভারতের রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিল; মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও হয়েছিল ওইসব এলাকায়।

বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর আগে এক টুইটে মোদী বলেন, “আমাদের ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হল বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব। এই অংশীদারিত্বকে আরও গভীর এবং আরও বিস্তৃত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের অনন্য উন্নয়নযাত্রায় আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।”  

বাঙালির জোড়া উদযাপন ঘিরে মোদীর এই সফর হলেও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানাদিক নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা বলছে উভয় দেশের সরকার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বুধবার বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এবার আমন্ত্রণের মূল বিষয় হল বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন এবং আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সফরের ‘জোরালো’ দিকও এটা।

“প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) যখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করবেন, যেগুলো আলোচনা হয়েছে এবং মোটামুটি একটা ঠিক হয়েছে, ওইগুলো যাতে বলবৎ থাকে, বাস্তবায়নে অসুবিধা না হয়, সেজন্য হয়ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরতে পারেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।”

আর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাও বুধবার দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, “এই সফর হবে খুব বিশেষ তাৎপর্যের এবং এর মাধ্যমে আমাদের অনন্য ও বিশেষ সম্পর্কের উদযাপন হবে। যাতে জোর পাবে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিক।”

সফরসূচি

বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী রওনা দেন সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের দিকে; সেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি।

এরপরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যাবেন নরেন্দ্র মোদী।  

বিকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসাবে যোগ দেবেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

এক প্রতিবেদনে ভারতের সরকারি গণমাধ্যম দূরদর্শন জানিয়েছে, উদযাপন অনুষ্ঠানে ‘মুজিব কোট’ পরবেন নরেন্দ্র মোদী ও তার সফর সঙ্গীরা। ইতোমধ্যে ‘কাস্টম ডিজাইনড’ একশটি মুজিব কোট সরবরাহও করেছে ভারতের খাদি অ্যান্ড ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রিজ কমিশন (কেভিআইসি)।

জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথভাবে ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু জাদুঘর’ উদ্বোধন করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আয়োজিত রাষ্ট্রীয় ভোজেও যোগ দেবেন তিনি।

সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে সাতক্ষীরা শ্যামনগরে যশোরেশ্বরী দেবি মন্দির পরিদর্শনে যাবেন নরেন্দ্র মোদী।

সেখান থেকে গোপালগঞ্জের টুংগীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ পরিদর্শনে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন জাতির পিতার প্রতি। সমাধিসৌধে ভারতীয় কোনো প্রধানমন্ত্রীর প্রথম পরিদর্শনে মোদীকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান ওড়াকান্দি মন্দির পরিদর্শনে যাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।

এসময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পাশাপাশি ভার্চুয়ালি বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন মোদী।

সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স এবং ১২ লাখ করোনাভাইরাসের টিকা উপহার দেবেন। এর আগে বাংলাদেশেকে আরও ২০ লাখ টিকা উপহার দিয়েছিল ভারত সরকার।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দুই উদযাপনে ১০ দিনের আয়োজন ঘিরে বর্ণিলভাবে সাজানো হয়েছে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডসহ অন্যান্য এলাকা।

উদযাপনে শেষ দিনের অনুষ্ঠানে মোদীর আগমন ঘিরে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। বিভিন্ন সড়কে উড়ানো হয়েছে লাল-সবুজ আর ত্রিরঙ্গা পতাকা। নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।