গত চার মাসে চট্টগ্রাম নগরী ছাড়াও কক্সবাজার, ফেনী ও আর কয়েকটি উপজেলা থেকে অন্তত
এক ডজন মোটর সাইকেল চুরি করেছে মিল্টন সরকার।
শেষমেশ পুলিশের
হাতে ফের আটক হয়েছে এই মোটর সাইকেল চোর।
যেভাবে
আটক মোটর সাইকেল চোরচক্র
সম্প্রতি কোতোয়ালী থানায় মোটর সাইকেল চুরির একটি মামলা হয়।
এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে কদমতলী আটমার্সিং মোড়ে নম্বরবিহীন একটি মোটর সাইকেলসহ দুই আরোহী মিল্টন ও মেহেদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
তারা মোটর সাইকেলের কাগজপত্র নিয়ে কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় সেটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
এসময় মেহেদী একই ধরনের আরেকটি মোটর সাইকেল কদমতলী এলাকায় আছে বলে পুলিশকে তথ্য দেয়। পরে সেটিও জব্দ করে পুলিশ।

মোটর সাইকেল চোরচক্রের রফিক
থানায় জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সীতাকুণ্ড
উপজেলা সদরের আনোয়ার, বড় দারোগাহাট এলাকায় ওবায়দুল কাদের, কুমিল্লার লাঙ্গলকোট এলাকায় মাহমুদুল হাসানের কাছে আরও মোটর সাইকেল আছে বলে তথ্য দেয় মিল্টনও।
এরপর বড় দারোগাহাটে ওবায়দুল কাদেরের গ্যারেজে অভিযান চালিয়ে আনোয়ার ও ওবায়দুলকে বিভিন্ন ধরনের আরও ৮টি মোটর সাইকেলসহ আটক করা হয় বলে জানালেন সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা।
নোবেল বলেন, থানায় মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা মোটর সাইকেল চোর চক্রের আরও কয়েক জনের তথ্য জানায় পুলিশকে।
পরে শুক্রবার রাত
পর্যন্ত টানা দুই দিন ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর,
কুমিল্লার লাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম, খাগড়াছড়ির রামগড়ে অভিযান চালিয়ে ২০টি
মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়।
রফিকুলকে আটক করা
হয় ডবলমুরিং থানার মিস্ত্রী পাড়া থেকে।
মোটর সাইকেল চুরি
ঘটনায় গ্রেপ্তার নয় জন হলেন-
মিল্টন সরকার (৪৪), মোহদী হাসান (১৯), আনোয়ারুল ইসলাম (১৯), রফিকুল ইসলাম রিপন (৩৮), ওবায়দুল কাদের (৪২), মাহমুদুল হাসান (২৪), মো. শাখাওয়াত হোসেন ওরফে রুবেল হোসেন (২৫) , শাহাদাত হোসেন সাজ্জাদ (২৭) ও মো. রিয়াজ (৩২)।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী) বলেন, গ্রেপ্তার হওয়ারা সবাই সংঘবদ্ধ একটি চক্র।
কোতোয়ালী থানার এসআই আইয়ুব উদ্দিন জানান, রফিক, মিল্টন ও রিয়াজ চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে মোটর সাইকেল চুরি করে। আর সেগুলো আট থেকে ২০ হাজার টাকায় সীতাকুণ্ডের আনোয়ারের কাছে বিক্রি করে।
আনোয়ার সেগুলো ওবায়দুলের মাধ্যমে নম্বর প্লেট খুলে কিংবা অন্যান্য সংস্কার কাজ করিয়ে অন্যদের কাছে লাভে বিক্রি করে থাকে।
মেহেদী ও ওবায়দুল কাদের মোটর সাইকেল মেকানিক। আনোয়ারসহ বাকিরা
চোরাই মোটর সাইকেলের
ক্রেতা-বিক্রেতা।
গ্রেপ্তার নয় জনের একজন মিল্টন সরকার পুলিশকে জানিয়েছে তার মোটর সাইকেল চোর হয়ে ওঠার পেছনের কাহিনী।
মিল্টন পুলিশকে জানায়, জাল টাকাসহ গ্রেপ্তার হয়ে কয়েক বছর আগে কারাগারে যায় সে।
সেখানে গিয়ে পরিচয় হয় মোটর সাইকেল চুরির দায়ে কারাগারে থাকা রফিকের সাথে। এরপর জামিনে ছাড়া পেয়ে রফিকের সঙ্গে মিলে মোটর সাইকেল চুরিতে নামে মিল্টন।

মাস কয়েক সে রফিকের সাথে মোটর সাইকেল চুরি করতে গেলেও পরে
একাই মোটর সাইকেল চুরি শুরু করে বলে পুলিশকে জানায়।
মিল্টন জানায়, জাল টাকার কারবারে ‘ঝুঁকি’ বেশি দেখে সে মোটর সাইকেল চুরির পেশা বেছে নিয়েছে।
সহকারী কমিশনার নোবেল বলেন, রফিক মোটর সাইকেল চুরি করলেও সে চালাতে পারে না বলে দাবি করেছে।
“সেজন্য সে মিল্টন এবং তার অন্য কয়েক জন সহযোগীকে সাথে নিয়ে রেকি করে। তারা সংকেত দিলে রফিক মোটর সাইকেলের লক খুলে ফেলার পর সাথে থাকা অপর ব্যক্তি তা চালিয়ে নিয়ে যায়।
রিয়াজ, মিল্টন ও রফিক পুলিশকে জানিয়েছে, তারা দোকান থেকে কিনে আনা চাবি ঘষে নিয়ে পাতলা করতে পারে।
বিশেষ কায়দায় তাতে আরও কিছু ঘাট তৈরি করে এই চাবি ‘মাস্টার কি’ হিসেবে চুরিতে ব্যবহার করে তারা।
এই চক্রের ‘টার্গেট’
মূলত পুরানো মোটর সাইকেলই বলে জানালেন কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দিন।
”সুবিধাজনক স্থানে পাওয়া মোটর সাইকেল তাদের সাথে থাকা চাবি দিয়ে লক খোলার চেষ্টা করে। যেটি খুলতে পারে সেটি তারা সেখান থেকে চালিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।”
গ্রেপ্তার রফিককে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্ধৃতি নিয়ে সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, ”এদের
একজন মোটর সাইকেলের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায় এবং অন্যজন চুরির জন্য অবস্থান করে।

”রেকি করা ব্যক্তি সাংকেতিক চিহ্ন বললে অন্য জন চুরির জন্য এগিয়ে যায়।”
রফিক পুলিশকে জানিয়েছে, রেকি করা তাদের সহকারী শিকল দিয়ে মোটর সাইকেল বাধা দেখলে ফোনে বলেন
‘লতাপাতা’, হাইড্রোলিক ব্রেকে তালা লাগানো থাকলে বলেন ‘ক্যাপসুল’ আছে।
পুলিশ দেখলে বলেন ‘মামা’ আর মালিক থাকলে বলেন ‘বিল্লা’ আছে।
এসব সাংকেতিক শব্দ শুনে তারা ঠিক করে কোনটি চুরি করা যাবে,
কোনটি যাবে না। ‘খালিবালি’ সংকেত মিললে চলে মোটর সাইকেল চুরির চেষ্টা।
তালাবিহীন মোটর সাইকেল থাকলে
‘খালিবালি’ সংকেত বলে থাকে তারা, জানালেন সহকারী কমিশনার নোবেল জানান।
চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়েও একটি মামলা করেছে বলে জানান ওসি নেজাম উদ্দিন।