পুলিশ বলছে,
গত চার মাসে চট্টগ্রাম নগরী ছাড়াও কক্সবাজার, ফেনী ও আর কয়েকটি
উপজেলা থেকে অন্তত এক ডজন মোটর
সাইকেল চুরি করেছেন মিল্টন সরকার নামের ওই ব্যক্তি।
শেষমেশ
গত বৃহস্পতিবার রাতে বন্দরনগরীর কদমতলী এলাকায় আবার
তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
তার দেওয়া
তথ্যেই চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়িতে
দুই দিন অভিযান চালিয়ে ২০টি চোরাই মোটর সাইকেলসহ আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে নগর
পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) নোবেল চাকমা জানান।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মিল্টন
সরকার (৪৪), মোহদী হাসান (১৯), আনোয়ারুল ইসলাম (১৯), রফিকুল ইসলাম রিপন (৩৮), ওবায়দুল
কাদের (৪২), মাহমুদুল হাসান (২৪), মো. শাখাওয়াত হোসেন ওরফে রুবেল হোসেন (২৫), শাহাদাত
হোসেন সাজ্জাদ (২৭), মো. রিয়াজ (৩২)।
পুলিশ বলছে, তাদের মধ্যে
মিল্টন, রফিক ও রিয়াজ মোটর সাইকেল চুরির সাথে সম্পৃক্ত। আর মেহেদী ও ওবায়দুল কাদের
মোটর সাইকেল মেকানিক। আনোয়ারসহ অন্যরা চোরাই মোটর সাইকেল ক্রেতা বিক্রেতা।

মোটর সাইকেল চোরচক্রের রফিক
সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সম্প্রতি
কোতোয়ালি থানায় মোটর সাইকেল চুরির একটি মামলা হয়। তদন্ত করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে কদমতলী আটমার্সিং মোড়ে নম্বরবিহীন একটি মোটর সাইকেলসহ মিল্টন ও মেহেদীকে আটক করে পুলিশ।
মোটর
সাইকেলের কাগজপত্র নিয়ে কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় পুলিশ সেটি
জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে মেহেদী
পুলিশকে বলেন, এরকম আরেকটি
মোটর সাইকেল কদমতলী এলাকায় আছে। পরে পুলিশ সেটিও জব্দ করে।
নোবেল চাকমা জানান, জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সীতাকুণ্ড
উপজেলা সদরের আনোয়ার, বড় দারোগাহাট এলাকায়
ওবায়দুল কাদের, কুমিল্লার লাঙ্গলকোট এলাকায় মাহমুদুল হাসানের কাছে আরও চোরাই মোটর সাইকেল আছে।
এরপর
বড় দারোগাহাটে ওবায়দুল কাদেরের গ্যারেজে অভিযান চালিয়ে আনোয়ার ও ওবায়দুলকে আটটি
মোটর সাইকেলসহ আটক করা হয়। থানায় মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে তারা এই চক্রের আরও কয়েকজনের তথ্য দেয় পুলিশকে।
পরে
শুক্রবার রাত পর্যন্ত টানা দুই দিন ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর, কুমিল্লার লাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম, খাগড়াছড়ির রামগড়ে অভিযান চালিয়ে মোট ২০টি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়। রফিকুলকে আটক করা হয় ডবলমুরিং থানার
মিস্ত্রি পাড়া থেকে।

কোতোয়ালি
থানার এসআই আইয়ুব উদ্দিন বলেন, রফিক, মিল্টন ও রিয়াজ চট্টগ্রামসহ
বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে মোটর সাইকেল চুরি করতেন। সেগুলো আট থেকে ২০
হাজার টাকায় বিক্রি করতেন সীতাকুণ্ডের আনোয়ারের কাছে।
“আনোয়ার
সেগুলো ওবায়দুলের মাধ্যমে নম্বর প্লেট খুলে কিংবা অন্যান্য সংস্কার কাজ করিয়ে অন্যদের কাছে লাভে বিক্রি করতেন।”
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন,
মিল্টন সরকার কী করে মোটর সাইকেল চোর হয়ে উঠলেন, সেই কাহিনী তিনি জিজ্ঞাসাবাদের
সময় সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেছেন,
জাল টাকাসহ গ্রেপ্তার হয়ে কয়েক বছর আগে কারাগারে যেতে হয়েছিল তাকে। সেখানে পরিচয় হয় মোটর সাইকেল
চুরির দায়ে কারাগারে থাকা রফিকের সাথে। এরপর জামিনে ছাড়া পেয়ে রফিকের সঙ্গে মিলে মোটর সাইকেল চুরিতে নামেন মিল্টন।
পুলিশকে তিনি
বলেছেন, মাস কয়েক
রফিকের সঙ্গে থেকে চুরির কাজটি করলেও পরে
একাই মোটর সাইকেল চুরি শুরু করেন। জাল টাকার কারবারে ‘ঝুঁকি’ বেশি বলে মোটর সাইকেল চুরির কাজেই তিনি থিতু হন।

সহকারী
কমিশনার নোবেল বলেন, রফিক মোটর সাইকেল চুরি করলেও নিজে চালাতে পারেন না বলে দাবি
করেছেন।
“সেজন্য
সে মিল্টন এবং তার অন্য কয়েকজন সহযোগীকে সাথে নিয়ে রেকি করত। তারা সংকেত দিলে রফিক মোটর সাইকেলের লক খুলে ফেলার
পর সাথে থাকা অন্য কেউ চালিয়ে নিয়ে যেত।”
রিয়াজ,
মিল্টন ও রফিক পুলিশকে
বলেছেন, তারা দোকান থেকে কিনে আনা চাবি ঘষে পাতলা করে নিতেন। বিশেষ কায়দায় তাতে আরও কিছু ‘ঘাট’ যোগ করে তৈরি হত ‘মাস্টার কি’।
কোতোয়ালি
থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, এই চক্রের ‘টার্গেট’ছিল মূলত পুরনো মোটর সাইকেল।
“সুবিধাজনক
স্থানে মোটর সাইকেল পাওয়া গেলে তারা সেই বিশেষ চাবি দিয়ে লক খোলার চেষ্টা
করত। যেটা খোলা যেত, সেটা তারা চালিয়ে নিয়ে সরে পড়ত।
জিজ্ঞাসাবাদে
রফিকের দেওয়া তথ্যের বরাতে নোবেল চাকমা
বলেন, ”এদের একজন মোটর সাইকেলের আশপাশে ঘুরে বেড়াত এবং অন্যজন চুরির জন্য অবস্থান নিত। যে রেকি করছে, তার সংকেত পেলে
অন্যজন চুরির জন্য এগিয়ে যেত।
“শিকল
দিয়ে মোটর সাইকেল বাধা দেখলে রেকিকারী ফোনে বলত- ‘লতাপাতা’, হাইড্রলিক ব্রেকে তালা লাগানো থাকলে বলত ‘ক্যাপসুল’ আছে। পুলিশ দেখলে বলত ‘মামা’ আর মালিক থাকলে
বলত ‘বিল্লা আছে’।”
সংকেত পাওয়ার
পর পরিস্থিতি বুঝে তারা ঠিক করত চুরি করা যাবে কি যাবে না। আর সংকেত যদি হত ‘খালিবালি’, তাহলে তারা মোটর সাইকেল চুরির চেষ্টা চালাতো। তাদের কাছে ওই ‘খালিবালি’ সংকেতের অর্থ হল, মোটর সাইকেলে তালা নেই।
চোরাই
মোটর সাইকেল উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা করেছে বলে জানান ওসি নেজাম উদ্দিন।